কপালজোড়া যেন সদ্য মাখা সিঁদুর—টকটকে লাল। একই রং পেটে ও বুকের উপরিভাগে। চোখের বলয় মোটা ও উজ্জ্বল হলুদ। চোখের মণি খোসা ফেলানো বেতফলের মতো টলটলে কালো। হলুদ গলা। শক্ত-পোক্ত, মোটা ছোট ঠোঁটটির রং কালো, পা লাল। একনজরে পাখিটির পিঠ-ঘাড় ঘন সবুজ। সাদাটে বুক সবুজ ছিটা ও রেখায় ভরা।
পাখিটির নাম ছোট আমতোতা। ছোট বসন্তবৌরি ও ছোট বসন্ত বাউড়ি নামেও পরিচিত। বাগেরহাট এলাকায় সব প্রজাতির বসন্তবৌরিই আমতোতা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম Coppersmith Barbet। আর এর বৈজ্ঞানিক নাম Psilopogon haemacephalus। দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি। ওজন ৪০ গ্রাম।
মূল খাদ্য এদের বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, ডুমুর ফল, জাম, খুদিজাম, লোহাজাম, পাকা সফেদা, পাকা খেজুর, পেঁপে, পাকা আমসহ নানান রকম ফল। তাল, খেজুরের রসও পান করে। এরা অনেক বড় পাকা পেঁপে খেতে খেতে এরা পেঁপের ভেতরেই ঢুকে পড়ে। ভেতরে তো ঠোকরাচ্ছে। অজানা কেউ দেখলে গাছের পেঁপে নড়তে-দুলতে দেখে ভূতও ভেবে বসতে পারেন, পেতে পারেন ভয়। এরা খায় হা-ভাতের (পড়ুন হা-ফল) মতো। মুখ-ঠোঁটে ভরা খাবার নিয়েই এরা বাসায় ফিরে ছানাদের গেলায়। বাসার মুখে ঝুলে বসে খাওয়ায় ছানাদের।
এরা দারুণ অ্যাক্রোবেটিক শো দেখাতে পারে। এরা বাসা করে গাছের শুকনো মরা ডাল ও কাণ্ডে। দক্ষ আর্কিটেক্ট পাখি। ঠোঁট দিয়ে দুজনে মিলে আগে মাপমতো বৃত্ত এঁকে নেয় ডাল বা কাণ্ডে। তারপর দুজনে মিলেই কামারের লোহা পেটানোর মতো তালে তালে ঠোঁট চালিয়ে গর্ত খোঁড়ে। বাসা তৈরি শেষ হলে মেয়ে পাখি ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১২-১৬ দিনে। ১৯-২২ দিনে ছানারা উড়তে শেখে। ছানাদের শরীরে দুর্গন্ধ থাকে। এই গন্ধ শত্রুকে বিমুখ করে, অর্থাৎ আত্মরক্ষার একটা প্রাকৃতিক কৌশল। সবচেয়ে মজার কৌশলটা হলো শত্রুর বা বিপদের আভাস পেলে ৩টি ছানা ফাঁপা খোঁড়লের ভেতর সম্মিলিতভাবে এমন শব্দ করে যে, মনে হয় ভেতরে বিষধর সাপ আছে। এদের বাসা বাঁধার ভরা মৌসুম হলো বসন্ত থেকে বর্ষা ঋতু।
এদের দেখা যায় সারা বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা শহরের পার্ক-উদ্যান-ক্যাম্পাসসহ রাজপথের আশপাশের গাছে এরা নিয়মিত বাসা করে ডিম–ছানা তোলে। বসন্ত শহর বন্দর তো বটেই—গ্রামবাংলা মুখরিত থাকে এদের ছন্দময় ডাকে।
লেখক: পাখি বিশারদ