উড়ন্ত স্কুইড

হয়তো উদ্ভট শোনাতে পারে, কিন্তু স্কুইডের এমন কিছু প্রজাতি আছে, যারা উড্ডয়নে সক্ষম। যদিও কেবল ডজনখানেক গবেষণায় সেফালোপডদের উড্ডয়ন রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, তাদের সবার উড্ডয়ন কৌশল একই ।

সমুদ্রের তলদেশে চলাচলের জন্য স্কুইড মূলত জেট প্রপালশন কৌশল ব্যবহার করে। দেহের একাংশ দিয়ে পানি শুষে নিয়ে, সেই পানি সাইফন নামের আরেকটি অঙ্গ দিয়ে দ্রুতগতিতে নির্গত করে। আর গতির দিক পরিবর্তন করে সাইফন ঘুরিয়ে। এই কৌশল প্রচণ্ড শক্তিশালী ত্বরণ সৃষ্টি করে। কিছু প্রজাতি এ কৌশলে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি বেগ তুলতে পারে। এই গতিবেগ ব্যবহার করে তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর বাতাসে নিজেদের ছুড়ে দিতে পারে।

কিন্তু স্কুইডগুলোর এমন আচরণের কারণ কী? এটা হলো বিপজ্জনক অবস্থা থেকে পালানোর একটি কার্যকর উপায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে ভাসমান কোন স্কুইড শিকারি প্রাণী দেখে ভয় পেলে তারা নিজের দেহকে টর্পেডোর আকৃতিতে বদলে ফেলে। তারপর তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে নিজেকে নিক্ষেপ করে। ঠিক একই সময়ে এদের দেহের আটটি শুঁড় মাথার সামনে সমতলভাবে ছড়িয়ে দেয়। কিছু প্রজাতি মিউকাস-জাতীয় তরল ক্ষরণ করে শুঁড়গুলোর মাঝখানের জায়গাও পূর্ণ করে। ফলে একটি একীভূত, ঘুড়ির মত তল সৃষ্টি হয়। এ সময় তার দেহের পেছনের পাখনা দুটো বাতাসে মেলে ধরে। ব্যস, স্কুইডটি পরিণত হয় ঠিক জীবন্ত জেট বিমানে!

প্রয়োজনে দেহে সঞ্চিত পানি আবার সাইফন দিয়ে বের করে শূন্যে গতিবেগ বাড়িয়ে নিতে পারে এরা। একটি স্কুইড এভাবে নিজের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬.৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ২৬ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠিয়েছিল। ঘটনাটি ভিডিও চিত্রে ধারণ করেছিল সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের একটি দল। গবেষকেরা বলেন, যদি স্কুইডগুলো এদের সাইফন ও পাখনা সঠিক কোণে রাখত তবে স্কুইডগুলো আরও বেশি উঁচুতে উড়তে পারত। এমন যদি কখনো হয়, তবে স্কুইডই হবে জীবজগতের একমাত্র প্রজাতি, যারা কিনা জেটতাড়িত উড্ডয়নে সক্ষম।

সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ