লেজের তেলেসমাতি

পশুপাখিরা তাদের লেজ নানা আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে ব্যবহার করে। মাছি তাড়ানোর মতো তুচ্ছ কাজ থেকে শুরু করে আকাশে ওড়ার মতো কঠিন কাজের জন্য পেছনের এই অঙ্গের ওপর প্রাণীদের নির্ভর করতে দেখা যায়

গিরগিটির লেজ

গিরগিটিরা কোনো কিছুতে চড়ার সময় তাদের লেজকে হুকের মতো ব্যবহার করে। অতি ভয়ংকর কমোডো ড্রাগন অথবা দ্রুতগামী টিকটিকির মতো প্রায় ৬ হাজারের বেশি সরীসৃপ নিয়ে টিকটিকির প্রজাতি গঠিত। কিন্তু গিরগিটির মতো স্বতন্ত্র টিকটিকি হয়তো আর একটাও নেই। স্বাধীনভাবে নড়নক্ষম চোখ, চাবুকের মতো বেরিয়ে আসা জিব কিংবা রং বদলের মতো ভেলকিবাজির পাশাপাশি লেজের তেলেসমাতি দেখাতেও এদের জুড়ি মেলা ভার। অনেক প্রজাতির গিরগিটি তাদের লেজকে পঞ্চম পা হিসেবে ব্যবহার করে। এই অতিরিক্ত পা ফেলার মধ্য দিয়ে গোপনে নিঃশব্দে পোকামাকড় শিকার করতে সাহায্য করে। গিরগিটিরা লম্বালম্বিভাবে গাছে চড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সে লেজকে গাছের শাখা-প্রশাখায় কুণ্ডলীর মতো জড়িয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে থাকে।

লেজ নেড়ে অনুভূতির প্রকাশ করে কুকুর

অনেকের ধারণা, কুকুর লেজ নেড়ে তাদের সুখানুভূতির প্রকাশ ঘটায়। এ ছাড়া যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও লেজকে তারা ব্যবহার করে। কিন্তু কুকুরের লেজের তেলেসমাতি এখানেই শেষ নয়। রাগ, শঙ্কা বা ভয়ের মতো অনুভূতিগুলো তারা লেজ দিয়েই বুঝিয়ে দেয়।

প্রভুভক্ত বা ভীত কুকুর তাদের লেজকে দুই পায়ের মধ্যে গুটিয়ে রাখে। কৌতূহলী কুকুরছানা তাদের চারপাশের বিপদ-আপদ সম্পর্কে জানার সময় লেজকে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল করে রাখে। কুকুর জোরে ও খুব দ্রুত লেজ নাড়িয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে। তবে সব সময় এমনটা নাও হতে পারে। একটু নিচু করে লেজ নাড়িয়ে কুকুর কিন্তু সতর্কতা বা উত্তেজনা প্রকাশ করে থাকে। এই সময় কুকুরকে আদর করতে গেলে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসতে পারে! তাই শুধু লেজ নাড়ানো নয়, কুকুরের অন্যান্য শারীরিক ভাষার দিকেও নজর দিতে হবে। লেজের পাশাপাশি পরখ করে দেখতে হবে, কুকুরটি শান্ত আছে কি না বা খেলার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে কি না। প্রসারিত মাংসপেশি, বিস্তৃত চোখের মণি এবং কোঁচকানো ঠোঁট দিয়ে কুকুর সাধারণত বুঝিয়ে দেয় সে একা থাকতে চায়, এ ক্ষেত্রে তার লেজের অবস্থান বিবেচনা না করাই ভালো।

ভোঁদড় লেজের সাহায্যে সতর্কবার্তা পাঠায়

ভোঁদড় লেজের সাহায্যে সতর্কবার্তা পাঠায়

জলে-স্থলে দুই জায়গাতেই ভোঁদড়ের সাবলীল বিচরণ। তবে পানিতেই ভোঁদড়ের দাপট বেশি। তাদের ডিম্বাকৃতি লেজ রাডারের মতো কাজ করে পানিতে। এটা তাদের রণকৌশলে সাহায্য করে। বিপদের মুখোমুখি হলে ভোঁদড় পানিতে ডুব দেয়। পানির উপরিতলে তার লেজ জোরে জোরে চাপড়াতে থাকে। এতে যে প্রবল শব্দের সৃষ্টি হয়, সেই শব্দ অন্য সঙ্গীদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে। স্থলে ভোঁদড়ের লেজ শরীরে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। বাসা তৈরিতেও লেজ বড় ভূমিকা রাখে।

মাছের লেজ চলাচলে সাহায্য করে

মাছের লেজকে পুচ্ছ পাখনাও বলা হয়। পেছনের এই শক্তিশালী পাখনা মাছের পানিতে চলাচলে সাহায্য করে। পুচ্ছ পাখনা বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। বেশির ভাগ মাছ এপাশ-ওপাশ লেজ নাড়িয়ে পানি সরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মার্লিন, সেইলফিশ বা টুনার মতো দ্রুতগামী মাছের লেজ অর্ধচন্দ্রাকৃতির থাকে। এদের দেহাকৃতির জন্য এরা জলস্রোতের বাধা এড়িয়ে বিপুল পরিমাণ পানি সরিয়ে ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার বা ৮০ মাইল বেগে পানিতে চলাচল করতে পারে।

শিয়ালমুখো হাঙরের লেজ

শিয়ালমুখো হাঙরের লেজ

শিয়ালমুখো হাঙর লেজকে মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ছোট মাছের মাথায় লেজ দিয়ে আঘাত করে অবশ করে ফেলে। এতে শিকার আর সাঁতরে পালিয়ে যেতে পারে না। শিয়ালমুখো হাঙর এভাবে নিশ্চিন্তে পেটপূজা করে।

ঘোড়ার লেজ

ঘোড়া লেজ দিয়ে মাছি তাড়ায় এবং শীতের সময় পেটকে উষ্ণ রাখে। তবে মাছি তাড়ানোই লেজের একমাত্র কাজ নয়। ঘোড়ার তুলনায় এদের জাতভাই জেব্রা বা গাধার লেজ খাটো হয় এবং শুধু লেজের শেষ প্রান্তে একগুচ্ছ চুল থাকে। কিন্তু ঘোড়ার লম্বা লেজ ঘন লোম দিয়ে আবৃত থাকে। উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার শীতপ্রধান অঞ্চলে প্রথম ঘোড়ার উদ্ভব হয়। শীতে অভিযোজিত হওয়ার জন্য ঘোড়ার লেজের এমন বিবর্তন হয়ছে। ঘোড়া তার লোমশ লেজ দুই পায়ের ফাঁকে গুটিয়ে রাখে। এভাবে তার নিম্নাংশ উষ্ণ রেখে শীতের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে।

সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ