আলোর রহস্যময় ভুবন

দেখা আলো না দেখা রূপ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশক: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬, পৃষ্ঠা: ১০৪, দাম: ১৩০ টাকা

আলো কি? প্রশ্নটা যতটা সরল বলে মনে হয়, উত্তরটা কিন্তু মোটেও অত সরল নয়। আলো কণা, আবার তরঙ্গ। তার চেয়ে বড় কথা সমাজ-সংসারে আমরা যা কিছু দেখছি, তা কিন্তু আলোরই তৈরি। কথাটা অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু অন্ধের হস্তীদর্শনের কথাই ভাবুন। চোখে দেখতে পারছে না বলেই, হাতি কারও কাছে দড়ির মতো, কারও কাছে কুলার মতো, কারও কাছে থামের মতো। কিন্তু অন্ধরা যদি দেখতে পেত, তাহলে হাতিকে তারা হাতির মতোই দেখত। স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধ, শ্রবণ আর দর্শন—এ ছয় ইন্দ্রিয়ের মধ্যে দর্শনেন্দ্রিয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখতে হয়। আর আলো না থাকলে কিন্তু এই ইন্দ্রিয়েরও জারিজুরি শেষ। তখন অন্ধ আর দেখনদারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে আমরা যে সমাজ-সংসার দেখছি, আলো ছাড়া তার গুরুত্ব নেই। আবার ধরুন, একটা ছোট্ট জিনিস যখন অনুবীক্ষণ যন্ত্র কিংবা আতশকাচের ভেতর দিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, আমরা যে বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আকার ইত্যাদি দেখছি, তা–ও পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে আলোর প্রতিফলন-প্রতিসরণজনিত ব্যাপার–স্যাপারগুলো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তেমনি আমরা পৃথিবীতে যে রঙের খেলা দেখি, যার কারণে বিভিন্ন বস্তু, ফুল, পাখি, প্রকৃতিতে এত বৈচিত্র্যের দেখা পাই, তা–ও একলহমায় পাল্টে যেতে পারে শুধু আলোর রং বদলে দিলে।

দিন শেষে তাই আলোই লর্ড, আলোর গতিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ গতি। মহাবিশ্বের রহস্য অনুসন্ধানে, বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে যোগাযোগে আলোর ভূমিকাই সর্বোচ্চ। আলো ছাড়া পৃথিবী অচল, বিজ্ঞান অন্ধ। তাই প্রকৃতিবিজ্ঞানকে জানতে হলে, মহাবিশ্ব, প্রকৃতি, পরিবেশ, পদার্থবিদ্যা জানতে হলে, অবধারিতভাবে আগে আলোর দিকেই চোখ ফেরাতে হবে।

আলো নিয়ে বই আছে, বেশির ভাগই পাঠ্যবই। স্কুলশিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষকে আলোর রহস্যময় ধর্ম, গুণ, আচরণ ইত্যাদি জানাতে জনপ্রিয় ধাঁচের বইয়ের বড্ড অভাব বাংলাদেশে। সেই অভাব মেটাতেই জনপ্রিয় সাহিত্যিক, বিজ্ঞান লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল একসময় কলম ধরেছিলেন। লিখেছিলেন আলো নিয়ে কালজয়ী এক বিজ্ঞান বই দেখা আলো না দেখা রূপ। খটোমটো তত্ত্ব আর জটিল সমীকরণ ব্যবহার না করেও যে প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তনের মতো বিষয়গুলো কত সুন্দরভাবে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বোঝানো যায়, তা এ বই পড়লে বুঝতে পারবেন।

আলো নিয়ে সাধারণ তত্ত্বকথা, আলোক যন্ত্রপাতিগুলোর ব্যবহার, সেগুলোর কাজের ধরন নিয়ে সহজ ভাষায়, গল্পের ঢঙে আলোচনা করেছেন লেখক। শুধু তা-ই নয়, অপটিক্যাল ইল্যুশন বা আলোকবিভ্রম নিয়ে অনেকগুলো সহজ পরীক্ষা আছে, যেগুলো বইটা পড়তে পড়তেই করতে পারবেন আর অবাক হবেন সেসব আশ্চর্য কাণ্ডকারখানা দেখে। যাঁরা পদার্থবিজ্ঞান ভালোবাসেন, যাঁরা আলোর রহস্যময় জগতে বিচরণ করতে চান, এমনকি যাঁরা বিজ্ঞানকে জানতে চান, তাঁদের জন্য এ বই অবশ্যপাঠ্য। ১০৪ পৃষ্ঠার এ বইয়ের দাম ১৩০ টাকা। প্রকাশ করেছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী। সারা দেশের বইয়ের দোকানগুলোতে মিলবে বইটি।