বৈজ্ঞানিক রহস্যের সহজ ব্যাখ্যা

একনজরে— রহস্যের শেষ নেই, লেখক: আবদুল্লাহ আল-মুতী, প্রকাশক: আহমদ পাবলিশিং হাউস, পৃষ্ঠা: ৮৮, দাম: ১০০ টাকা

শার্লক হোমস কিংবা ফেলুদা, রহস্যের সমাধান করাই ছিল যাদের জীবনের প্রধান ব্রত। রহস্য তারা সমাধান করেছেনও, জনমানসে এ জন্য চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু আসল জায়গাতেই তো ফাঁকা! ফেলুদা আর হোমসের অস্তিত্ব শুধু লেখকের কল্পনা আর বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাস্তবে তারা অস্তিত্বহীন কল্পচরিত্র। সত্যিকার অর্থে দুর্ধর্ষ রহস্যানুসন্ধানী কাউকে বলতেই যদি হয়, তাঁরা হলেন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানের পরতে পরতে রহস্য। খুনখারাবির ঘেরাটোপে আবদ্ধ নয় এই রহস্যের জাল। বরং আরও বিস্তৃত, আরও বিশাল বিজ্ঞানের রহস্যের জগৎ। অজানাকে জানতে চাওয়াই বিজ্ঞানের রহস্যের উৎসমূল। এর পেছনে ধাওয়া করার কাজটিই বিজ্ঞানীরা করেন কখনো মগজ খাটিয়ে স্রেফ গণিতের সমীকরণ মিলিয়ে, কখনো কখনো ল্যাবরেটরিতে, কখনোবা বৈজ্ঞানিক অভিযানে। এসব রহস্যের সমাধানের যে রোমাঞ্চ, তার পেছনে সত্যিকারের যেসব গল্প, তার স্বাদ টান টান উত্তেজনার থ্রিলারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

বিজ্ঞান এমনিতেই জটিল, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আরও জটিল, আর সেই জটিল বিজ্ঞানকে জলবৎ তরলং এবং একই সঙ্গে মজাদার স্বাদে পরিবেশন করায় আবদুল্লাহ আল-মুতীর জুড়ি মেলা ভার। ১৯৬৯ সালে তিনি লেখেন রহস্যের শেষ নেই নামে বিখ্যাত বইটি।

আবদুল্লাহ আল-মুতী বিষয়ভিত্তিক বই যেমন লিখেছেন, তেমনি হরেক স্বাদের লেখায় ভরা তাঁর বেশ কিছু বই পাঠকমনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। রহস্যের শেষ নেই সেগুলোরই একটি। ৮৮ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা বই, তাতে ১১টা অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়টা বইয়ের শিরোনামের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা। লেখাটা শুরু হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষের নিত্যদিনের রহস্যানুসন্ধান দিয়ে। খুব সাধারণ জিজ্ঞাসা থেকে সেকালের মানুষ একটু একটু করে এগিয়েছে সত্যিকারের বিজ্ঞানের দিকে। সেই সাধারণ রহস্যের অনুসন্ধানও যে সেকালের মানুষের জন্য সহজ ছিল না, সে গল্প উঠে এসেছে লেখকের বয়ানে। সেসব রহস্যের সমাধান করতে করতে কীভাবে মানুষ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শিখরে পৌঁছাল, সেই কাহিনি তিনি শুনিয়েছেন গল্পের ঢঙে। দ্বিতীয় অধ্যায়টা পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে। পরিযায়ী পাখি কেন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়? কীভাবে সেগুলো পথ চেনে? এসব রহস্য বহুদিনের। সেই রহস্যের ভেতর-বাইরে অনুসন্ধান করেছেন লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে। মাছ কেন স্রোতের বিপরীতে উজানে যায়? ইতিহাস কি থেমে আছে? এসব রহস্যের পেছনে যেমন লেখক ছুটেছেন, বলেছেন ভয়ংকর এক দেশের কথা, তেমনি বুড়ো পৃথিবীর গল্প শুনিয়েছেন, শুনিয়েছেন মানুষের ইতিহাস। পরমাণুর ভেতর–বাইরের গল্প করেছেন, তারপর পাঠককে নিয়ে গেছেন মহাকাশে, মহাশূন্যে। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না বা মহাকাশের অদৃশ্য অতিথি কিংবা আকাশজুড়ে আলোর কারিকুরির নেপথ্যের খবর জানিয়েছেন কিশোর-তরুণ বিজ্ঞানপাঠকদের জন্য।

বইটা প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছরের বেশি সময়। তারপরও এতটুকু কমেনি এর আবেদন, ফিকে হয়নি প্রাসঙ্গিকতা। তাই আজকের যে কিশোর-তরুণ বিজ্ঞানের রাজ্যে ডুব দিতে চায়, বদ্ধ ঘরের আগল ভেঙে জগৎটাকে যারা জানতে চায়, তাদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য। বইটি সারা দেশের বিভিন্ন বুকশপে যেমন মিলবে, তেমনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে কিনতে পারবেন ঘরে বসেই।