ছোট দেশের বড় বিজ্ঞানীরা

উপমহাদেশের ১১ জন পদার্থবিজ্ঞানী, প্রদীপ দেব। প্রকাশক: মীরা প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৪, পৃষ্ঠা: ১৯৮, দাম: ৩৫০ টাকা।

একসময় বিজ্ঞানী মানেই ছিল ইউরোপীয়দের জয়জয়কার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বদলে যায় হিসাব-নিকাশ। হিটলারের নাৎসিদের ভয়ে অনেক বিজ্ঞানীই পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন সরকারও তাঁদের জন্য বিছিয়ে রেখেছিল লালগালিচা, সঙ্গে তৈরি করেছিল গবেষণার ব্যাপক সুযোগ। তারই সুফল এখন ভোগ করছেন মার্কিনরা। গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই বৈজ্ঞানিক জগতের লাটাই তাদের হাতে। সংখ্যায় কম হলেও আমাদের উপমহাদেশেও কিন্তু জন্মেছেন বেশ কয়েকজন জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাঁদের মধ্যে সবার আগে আসে যাঁর নাম, তিনি এই বাংলারই বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু।

জগদীশচন্দ্র বসুই প্রথম বিজ্ঞানী, যিনি বিশ্ববিজ্ঞানে উপমহাদেশের বিজ্ঞানকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন। প্রথমে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী। তারপর পদার্থবিজ্ঞান ছেড়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানে মন দিয়েছিলেন। অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা আদায় করেছিলেন সেখান থেকেও। তাঁর জীবনের অজানা অনেক কাহিনিই উঠে এসেছে এই বইয়ে।

আইনস্টাইন বিখ্যাত হয়েছিলেন তাঁর স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি দিয়ে। কিন্তু এ বিষয়ে যে গবেষণাপত্রটি লিখেছিলেন, সেটা ছিল জার্মান ভাষায়। বিশ্বখ্যাত এই তত্ত্বটির প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। প্রথমজনকে বলা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের জনক আর দ্বিতীয়জন কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জগৎজুড়ে তাঁদের এত সম্মান কেন, সে রহস্যও লেখক ভেদ করার চেষ্টা করেছেন এ বইয়ে।

আপনি কি জানতেন রমণ-কৃষ্ণান এফেক্টের যিনি জনক, অন্যদিকে চন্দ্রশেখর লিমিটের যিনি প্রবক্তা, সেই চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমণ ও শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর, তাঁরা দুজন একই পরিবারের সন্তান? উপমহাদেশের এই বিজ্ঞানীদ্বয় বিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানে কী ভূমিকা রাখলেন, কীভাবেই তাঁরা পেলেন নোবেল, তার বিস্তারিত খতিয়ান আছে এই বইয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বিজ্ঞানী এই দুটো শব্দ একসঙ্গে উচ্চারিত হলেই আমাদের মনে আসে শুধু একজনেরই নাম—সত্যেন্দ্রনাথ বসু। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক অমর হয়ে আছেন। তিনি কে এস কৃষ্ণান। রমণ-কৃষ্ণান এফেক্ট তত্ত্বে তাঁরও সমান অবদান। কিন্তু তিনিও নোবেল-বঞ্চিতদের কাতারেই রয়ে যান। শুধু রমণ-কৃষ্ণান এফেক্টই নয়, ম্যাটার কনডেন্সড ফিজিকসের জনক তিনিই। তাঁর জীবন, তাঁর গবেষণার নানা দিক নিয়ে প্রদীপ দেব আলোচনা করেছেন এই বইয়ে।

উপমহাদেশের বিজ্ঞানের আরেক মশালবাহী আবদুস সালামের প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল, কীভাবেই–বা তিনি ছোট দেশের বড় বিজ্ঞানীতে পরিণত হলেন, আধুনিক কণা-পদার্থবিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন কীভাবে—সেসবের বিস্তারিত বয়ান লেখক তুলে ধরেছেন সহজ সাবলীল গদ্যে।

শুধু তাঁরাই নন, উপমহাদেশের ১১ জন পদার্থবিজ্ঞানী বইয়ে দেবেন্দ্রমোহন বসু, শিশিরকুমার মিত্রদের মতে বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানের মহৎ কর্মের কথা যেমন উঠে এসেছে, তেমনি হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা, বিক্রম সারাভাইদের মতো তুলনামূলক কম পরিচিত পদার্থবিজ্ঞানীদের কথাও আলোচনা করেছেন লেখক।

প্রদীপ দেব অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক। তিনি বায়োমেডিকেল ফিজিকস নিয়ে যেমন গবেষণা করছেন, সহজ ভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ ও জীবনীও লিখে যাচ্ছেন দুই হাতে। সহজবোধ্যতা ও গল্পের ঢঙে লেখাই তাঁর গদ্যের মূল শক্তি। সেই শক্তি এই বইয়েও দৃশ্যমান। অসাধারণ এ বইটি দেশের সব অভিজাত বুক স্টলে পাওয়া যাবে।