চাঁদে কি মানুষ বসতি গড়তে পারবে?

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখেন মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং। দ্বিতীয় নভোচারী হিসেবে চাঁদে নামেন বাজ অলড্রিন। অ্যাপোলো ১১ মিশনের তিন দুঃসাহসী নভোচারীর তৃতীয়জন মাইকেল কলিন্স চাঁদে নামেননি। তিনি অ্যাপোলো ১১ নভোযান নিয়ে রয়ে যান চাঁদের কক্ষপথে। বাকি দুজন ল্যান্ডার ‘ইগল’-এ চড়ে চাঁদে নামেন। তাঁর ছোট্ট এ পদক্ষেপ মানবজাতির জন্য ছিল বিশাল এক অর্জন। আজ চন্দ্রজয়ের ৫৪ বছর পূর্তি। মানুষ আবারও চাঁদে ফিরছে। এবারে তাদের আশা, চাঁদে বসতি করবে। আজকের এ দিনে আসুন জেনে নিই, চাঁদে কি বসতি করা সম্ভব?

চন্দ্রবসতি মুন ভিলেজ; শিল্পীর কল্পনায়নাসা

মানুষ চাঁদে গিয়েছিল ৫৪ বছর আগে। এরপর মহাশূন্য অভিযানে অনেক আগ্রগতি হয়েছে। এখন মানুষ মঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে চাঁদে মানুষের বসতি গড়ার কথা উঠেছে। আমেরিকা আগে বলেছিল ২০২৮ সালের মধ্যে ওরা চাঁদে মানুষ পাঠাবে। তারপর আর্টেমিস প্রকল্প শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সফল হয়েছে আর্টেমিস ১ অভিযান। এখন ওরা বলছে, আর্টেমিস ২ অভিযানে ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যেই চাঁদে মানুষ পাঠাবে। ওদিকে চীন বলছে ২০৩৫ সালের মধ্যে ওরা চাঁদে মানুষ পাঠাবে। ইউরোপ, ভারত, জাপান, কানাডা এবং রাশিয়াও চন্দ্রজয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির প্রধান তাই আশা করছেন, এসব উদ্যোগের ফলে একটি চন্দ্রগ্রাম (মুন ভিলেজ) গড়ে উঠবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, চাঁদে তো বাতাস নেই। সেখানে মানুষ থাকবে কীভাবে? পানিও নেই। তাহলে মুন ভিলেজ কি সম্ভব? এর উত্তর পাওয়া যায় অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী জুবলিনের কথায়। তিনি মনে করেন, কিছু সম্ভাবনা আছে। তিনি দ্য কেস ফর স্পেস নামে একটি বইও লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, মুন বেস দ্রুত তৈরি করা সম্ভব। সেটা তৈরি করা হবে চাঁদের একটি মেরুতে। সেখানে পাহাড়চূড়ায় প্রায় সব সময় সূর্যের আলো পাওয়া যাবে। আর সেই আলো থেকে সৌরশক্তি তৈরির একটি কারখানা বানানো হবে। কাছাকাছি রয়েছে অন্ধকার অঞ্চলে বিশাল খাদ। শতকোটি বছর আগে থেকে সেখানে বরফ জমে আছে। সেই বরফ থেকে খাওয়ার পানি পাওয়া যাবে। শুধু তা–ই নয়, পাহাড়চূড়া থেকে সৌরবিদ্যুৎ এনে বরফের অণু ভেঙে শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়া যাবে। আবার রকেটের জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনও পাওয়া যাবে। এসব বিষয় দ্য ইকোনমিস্ট–এর ২০ জুলাই ২০১৯ সংখ্যার ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ অংশে বিস্তারিত এসেছে।

চাঁদে এরকম একটি বসতি গড়তে চায় চীন; শিল্পীর কল্পনায়
শিল্পীর কল্পনায় চাঁদের কক্ষপথে গবেষণাগার লুনার গেটওয়ে
নাসা

তাহলে মূল কথা দাঁড়াল, মানুষ চাঁদে যাচ্ছে। চাঁদে বসতি গড়ার পাশাপাশি চাঁদের কক্ষপথে একটি গবেষণাগারও তৈরি করার ইচ্ছে আছে আর্টেমিস প্রকল্পের অধীনে। এর নাম দেওয়া হয়েছে লুনার গেটওয়ে। সেখান থেকে মঙ্গলে যাওয়া সম্ভব। অবশ্য সেখানেও অক্সিজেনের সমস্যা আছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রথমে সেখানে কিছু গাছ লাগানো হবে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চেয়ে অনেক হালকা। প্রায় ১০০ ভাগের ১ ভাগ। কিন্তু এর ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। সেটা গ্রহণ করে গাছ কার্বন নেবে আর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন দেবে। শ খানেক বছরে সেখানে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

তাই আগামী শ খানেক বছরের চিত্রটি হতে পারে এ রকম—পৃথিবী থেকে চাঁদ, তারপর মঙ্গলে বসতি গড়বে মানুষ।