মহাজাগতিক ধূলিকণা কী?

মনে হয় মহাশূন্য একেবারে ফাঁকা। সেখানে অনেক দূরে দূরে গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। বাকি অংশ হয়তো একেবারে শূন্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাড়ির ধোঁয়া, ইট-পাথরে গড়া শহরের ধূলিকণায় বায়ুদূষণ ঘটে, সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মহাশূন্যে তো সেসব উপদ্রব নেই। তাই আমাদের সাধারণ ধারণা, মহাশূন্য একেবারে পরিষ্কার। কিন্তু মাঝখানে যে মহাজাগতিক ধূলিকণা (কসমিক ডাস্ট) রয়েছে, সে সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করি না। এগুলো কী, কোথা থেকে আসে, এদের গঠনবৈশিষ্ট্য কী-এসব প্রশ্ন নাসার মহাশূন্য গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

তাদের গবেষণায় জানা গেছে, এই মহাবিশ্বে প্রচুর মহাজাগতিক ধূলিকণা আছে। এদের অনেক সময় স্টারডাস্ট বা নাক্ষত্রিক ধূলিকণা বলা হয়। কিন্তু শুধু নক্ষত্র নয়, ওগুলো ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন এলাকায়। এই তো আমাদের সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের মাঝখানের শূন্যস্থানে, অথবা ছায়াপথ বা মহাজগতের অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জির মাঝখানে। সর্বত্রই রয়েছে মহাজাগতিক ধূলিকণা। নাসার গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ধূলিকণায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান। যেমন: কার্বন, অক্সিজেন, আয়রন প্রভৃতি। হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলিক পদার্থগুলোই এই মহাজাগতিক ধূলিকণার বড় অংশ। কিন্তু এরা মহাশূন্যে আসে কোথা থেকে? আমাদের পৃথিবীতে নাহয় পাহাড়ধস বা বড় কোনো স্থাপনা ধসে পড়লে ধূলিকণা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মহাশূন্যের ব্যাপারটা কী?

নাসার বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যখন সুপারনোভা, বড় বড় নক্ষত্রের সংঘর্ষ ঘটে, তখন এসব ধূলিকণার উদ্ভব হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মহাজাগতিক ধূলিকণার অস্তিত্ব আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও রয়েছে। আমরা তো জানি উত্তর বা দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের বরফের স্তূপ একেবারে পরিষ্কার। কিন্তু সেখানেও মহাজাগতিক ধূলিকণার কিছু উপাদান পাওয়া গেছে। এমনকি পরীক্ষা করলে হয়তো আমাদের ঘরবাড়ির ছাদে জমে থাকা ধূলিকণার মধ্যেও এসব উপাদানের ছিটেফোঁটা পাওয়া যাবে। এ কথা বলার যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। নরওয়ের অসলোর বাড়িঘরের ছাদে পার্থিব ধূলিকণার সঙ্গে মহাজাগতিক ধূলিকণার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এই তো মাত্র বছর সাতেক আগে, ২০১৪ সালে নাসা ঘোষণা করে যে তাদের যে ‘স্টারডাস্ট’ মহাশূন্য যান ২০০৬ সালে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল, তাতে সৌরজগত্বহির্ভূত নক্ষত্রমণ্ডলীয় সাতটি ক্ষুদ্র ধূলিকণা প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন নিউইয়র্ক টাইমস-এর সায়েন্স টাইমস, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭।

*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত