আমেরিসিয়াম শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস।

পর্যায়সারণিতে ৯৫ নম্বর মৌলটির নাম আমেরিসিয়াম। অ্যাকটিনাইড সিরিজের এ তেজস্ক্রিয় মৌলের অবস্থান পর্যায়সারণির মূল অংশের বাইরে আলাদা একটি সারিতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লেন সিবর্গের নেতৃত্বে একটি দল আবিষ্কার করেছিল মৌলটি। ল্যানথাসনাইড ও অ্যাকটিনাইড সিরিজ যুক্ত করে এই সিবর্গই পর্যায়সারণির বর্তমান রূপ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫২ সেমি সাইক্লোটন ব্যবহার করে প্লুটোনিয়াম পরমাণুতে তীব্র বেগে নিউট্রন কণা ছোড়েন তাঁরা। এতে কিছু প্লুটোনিয়ামের নিউক্লিয়াসে অতিরিক্ত নিউট্রন যুক্ত হয়। সেগুলো ক্ষয় হয়ে প্রোটনে রূপান্তরিত হয়ে পরমাণুটির পারমাণবিক সংখ্যা ৯৪ থেকে বেড়ে ৯৫-এ পরিণত হয়। একই সঙ্গে কিছু পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯৬-এ।

এ দুটি মৌলকে আলাদা করতে গিয়ে সেবার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল বিজ্ঞানীদের। সে কারণে তাঁরা মৌলটির নাম শুরুতে দিয়েছিলেন প্যানডেমোনিয়াম। গ্রিক এ শব্দটির অর্থ শয়তান বা নরক। অন্যদিকে ৯৬ পারমাণবিক সংখ্যার মৌলটির নাম দেওয়া হয়েছিল ডেলিরিয়াম। লাতিন এ শব্দের অর্থ পাগলামি।

পরে প্রথম মৌলটির নাম দেওয়া হয় আমেরিসিয়াম। অ্যাকটিনাইড সিরিজের ঠিক ওপরে ল্যানথানাইড সিরিজের মৌলটির নাম ইউরোপিয়াম। কারণ, সেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ইউরোপে। তার সঙ্গে মিল রেখে নতুন মৌলটির জন্য এ নাম বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, মৌলটি আবিষ্কৃত হয়েছিল আমেরিকায়। এর প্রতীক Am। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে মৌলটির আবিষ্কার গোপন রাখা হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে ১৯৪৫ সালের ১১ নভেম্বর আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এক সভায় মৌলটির আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

আমেরিসিয়ামের ১৯টি আইসোটোপ রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতটি হলো Am-241 এবং Am-243। Am-241-এর অর্ধজীবন ৪৩২ দশমিক ২ বছর। আর Am-243-এর অর্ধজীবন ৭ হাজার ৩৭০ বছর। আমেরিসিয়ামের প্রধান ব্যবহার বাসাবাড়ি বা অফিসের স্মোক ডিটেক্টরে। এতে অতিক্ষুদ্র Am-241-এর সিলভার ফয়েল থাকে। তেজস্ক্রিয় ফয়েলটি ডিটেক্টরেরর ভেতরে ছোট্ট এক চেম্বারে আলফা কণা নিঃসরণ করে। দুটি ইলেকট্রোডের মাঝখানের বাতাস আয়নিত করে এসব কণা। ফলে বাতাসের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রোডদ্বয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কোথাও আগুন থেকে এই আয়নিত চেম্বারে ধোঁয়া ঢুকে পড়ে। এই ধোঁয়া চেম্বারের আলফা কণাদের শুষে নেয়। এতে চেম্বারের আয়নিত অবস্থা কমে গিয়ে ইলেকট্রোড দুটির মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। আর এর ফলেই ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে।