ওসমিয়াম এবং ইরিডিয়াম শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

পর্যায় সারণিতে প্লাটিনামের মতোই ওসমিয়াম এবং ইরিডিয়াম সবচেয়ে ভারী (ঘন) মৌলের মধ্যে অন্যতম। এর দুই ঘনফুটের ওজন প্রায় একটি বুইক গাড়ির মতো। এত ভারী হওয়ার কারণেই পৃথিবীপৃষ্ঠে ইরিডিয়াম বিরল। তবে গ্রহাণুগুলোর মধ্যে এটি সহজলভ্য। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব বার্কলির একদল বিজ্ঞানী ভূত্বকে উচ্চমাত্রার ইরিডিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন, যা তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল। সে কারণেই ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে বিশ্বের এক ধ্বংসজ্ঞের সঙ্গে ইরিডিয়ামের যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। ওই ধ্বংসযজ্ঞেই পৃথিবী থেকে ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। মেক্সিকো উপসাগরে ৩০০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি খাদ সৃষ্টির পেছনে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা কোনো গ্রহাণু এখানে আছড়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এতেই যে বিপুল বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে পৃথিবীর আকাশ দীর্ঘদিনের জন্য ধুলোর মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল। ফলে পৃথিবীর বেশির ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুর এই সংঘাতেই ইরিডিয়াম বাষ্পীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন জায়গায় তার পরমাণুগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল।

ইরিডিয়াম ও ওসমিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮০৩ সালে। ব্রিটিশ রসায়নবিদ স্মিথসন টেনন্যান্ট অবিশুদ্ধ প্লাটিনামকে অ্যাকুয়া রেজিয়ায় (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডের মিশ্রণ) দ্রবীভূত করে কালো একটি অধঃক্ষেপ পেলেন। অনেকে ধারণা করেছিলেন, সেটি হয়তো গ্রাফাইট। তবে সে কথায় বিশ্বাস না করে অবশিষ্ট পদার্থটি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন। এতে তিনি অজানা নতুন দুটি মৌল পেলেন। এর একটির নাম ওসমিয়াম এবং আরেকটির নাম ইরিডিয়াম দিলেন তিনি। প্রথমটির অদ্ভুত গন্ধের কারণেই নাম দেওয়া হয়েছিল ওসমিয়াম। কারণ, গ্রিক শব্দ ওসমি (osme) অর্থ গন্ধ। আর দ্বিতীয় মৌলটি রঙিন হওয়ার কারণে গ্রিক রংধনুর দেবী আইরিসের নামে রাখা হলো ইরিডিয়াম।