প্লুটোনিয়াম শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলির সাইক্লোটনে তৈরি করা প্রথম মৌলটি ছিল নেপচুনিয়াম। এরপর অনেক মৌল আবিষ্কৃত হয়েছিল (কিংবা তৈরি করেছিল), যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। নেপচুনিয়াম আবিষ্কারের পর বার্কলির সাইক্লোটনে বিজ্ঞানী গ্লেন সিবোর্গের নেতৃত্বে একদল পদার্থবিদ ও রসায়নবিদ নতুন মৌল আবিষ্কারে কাজ শুরু করেন। সে জন্য তাঁরা ইউরেনিয়াম-২৩৮-এর নিউক্লিয়াসে ডিউটেরন (ভারী হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস) সজোরে ছুড়তে থাকেন। এতে প্রথমে নেপচুনিয়াম মৌলটি পাওয়া গেল। এরপর এ মৌলের বিটা রেডিয়েশন নিঃসরণের পর পারমাণবিক সংখ্যা বেড়ে ৯৪-এ দাঁড়াল।

সে সময় গ্রহের নামে মৌলের নামকরণ করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই জোয়ারে ভেসে সিবোর্গও তাঁদের আবিষ্কৃত নতুন মৌলটির নাম দিলেন সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহ প্লুটোর নামে, প্লুটোনিয়াম। ১৯৩০ সালে অ্যারিজোনার লোয়েল অবজারভেটরিতে ক্লাইড টমবো প্লুটো আবিষ্কার করেছিলেন। প্লুটোই প্রথম কোনো গ্রহ, যা কোনো মার্কিন নাগরিক আবিষ্কার করেছিলেন। পরে নানা কারণে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় প্লুটোর নাম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের নাগাসাকি শহরে ফেলা পারমাণবিক বোমার সক্রিয় উপাদানটি ছিল প্লুটোনিয়াম। হিরোশিমা শহরের প্রথম বোমাটি ফেলার ঠিক তিন দিন পর এই বোমাটি ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় কমলা আকারের এই বোমাটির নাম ছিল ফ্যাট ম্যান। এ হামলায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত এবং ১ লাখ মানুষ আহত হয়েছিল। এর ফলে দ্রুততম সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছিল।

রেডিও আইসোটোপ থার্মোনিউক্লিয়ার জেনারেটর থেকে শক্তি তৈরি করতে অল্প পরিমাণ তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়ামের ব্যবহার করা যায়। সোলার প্যানেলে ব্যবহারের জন্য সূর্যের আলোর তীব্রতা যেখানে ব্যবহারযোগ্যতার লেভেলের নিচে নেমে যায়, সেখানে সৌরজগতের বাইরে ভ্রমণকারী নভোযানের জন্য এই শক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এক পাউন্ড প্লুটোনিয়াম থেকে ১০ মিলিয়ন (১০০ কোটি) কিলোওয়াট-ঘণ্টা তাপীয় শক্তি তৈরি করা যায়, যা দিয়ে একটি ইনক্যানডেসেন্ট লাইট বাল্বকে ১২ হাজার বছর জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব। অথবা মানবজাতি যদি খাবারের বদলে নিউক্লিয়ার জ্বালানিতে চলতে সক্ষম হতো, তাহলে এক পাউন্ড প্লুটোনিয়াম দিয়েই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।