শেষ হলো ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ এর ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা

চার ক্যাটাগরিতে মোট ২৪৪ জনকে পুরস্কৃত করা হল ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৪৭ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৮৪ জন ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৫৬ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় মেডাল, সার্টিফিকেট ও টিশার্ট।

শনিবার বিকেল ৪টায় শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এ পর্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য তানভীর হাসান, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও ফিজিক্যাল সাইন্সেস বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ঢাকা আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাসুদ এবং ফিজিক্যাল সাইন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আলম।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ এর ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা

এর আগে, সকাল ৯.৩০টায় শুরু হয় ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী পর্ব। এ পর্বের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বিশেষ অতিথি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন মাহাদী হাসান, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ জাহাঙ্গীর মাসুদ, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ঢাকা আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল। সঞ্চালনা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল স্যায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ আলম।

উদ্বোধনী পর্বে আহমাদ মোস্তফা কামাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করতে পারে ফিজিক্স। তোমাদের এই আনন্দটুকু বুঝতে হবে। বড় হয়ে তোমরা যা-ই হও, তোমরা এর আনন্দটুকু অনুভব করতে পারবে, আমি সেই প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাসুদ বলেন, অলিম্পিয়াডের সমস্যা সমাধান করলে মস্তিষ্ক সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্নের মতো জীবনের সমস্যাগুলোও সহজ নয়। এই যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, এই সমস্যাগুলোও কিন্তু সমাধানের ভার তোমাদের কাঁধে। তোমরা দেশকে ভালোবাসবে। দেশের মানুষের কাজে লাগবে, উপকার হবে, এরকম সমস্যাগুলোর সমাধান করবে, এটাই আমাদের আশা।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন মাহাদী হাসান বলেন, ইদানিং এআই নিয়ে বেশ আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু এআই আমাদের সব কিছু করে দেবে না। এআইয়ের পেছনের কাজটা কিন্তু মানুষই করছে। এগুলোও পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। তাই আমাদের সবার পদার্থবিজ্ঞান শিখতে হবে। জানতে হবে কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, পদার্থবিজ্ঞানের বলয় থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা জীবনের একটা অংশ। মহাবিশ্বের সব কিছুই তো পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই আমাদের পদার্থবিজ্ঞান নিয়েই চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব এটাকে বোঝার চেষ্টা করা আমাদের উচিত।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী পর্বে শিক্ষার্থী ও অতিথিরা

সকাল ১০.৩০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। মোট ৭০০ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে দুপুর ১.৩০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর মঞ্চ মাতান জাদুশিল্পী স্বপন দিনার।

জাদু পর্বের শেষে মঞ্চে আসেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খান মোহাম্মদ বিন আসাদ। তিনি দেখান, কীভাবে গবেষণা করতে হয়। পাশাপাশি জোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। ‘প্যারালাল ইউনিভার্স কি বাস্তবে আছে?’ ‘স্ট্রিং থিওরি ও কোয়ান্টাম থিওরির মধ্যে কি কোনো মিল আছে?’ ‘শাপলা পানিতে ভাসলেও পানি না থাকলে কেন শাপলা দাঁড়িয়ে থাকে না? এখানে কি মাধ্যাকর্ষণ কাজ করছে না?’ খুব সুন্দরভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দেন আরশাদ মোমেন। প্রশ্নোত্তর পর্বের পর পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয় ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব।

এর আগে, ২০ ও ২১ জানুয়ারি ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে। প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বাছাইপর্বের মাধ্যমে সারাদেশের ৪ হাজার ৬৩৮ শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয় আঞ্চলিক পর্বের জন্য। ঢাকায় নির্বাচিতরা আজ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণ করে। ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও আঞ্চলিক পর্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে bdpho.org ওয়েবসাইটে।

পরীক্ষার্থীদের একাংশ

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে ডি ক্যাটাগরিতে।

২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হবে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ পর্ব আয়োজিত হবে অফলাইনে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলটিই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসাবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসাবে আছে বিডিকম।

দেশের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকেই আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এবারেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা