দূর্যোগে নিরাপদ পানি

ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিরাপদ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। দূর্যোগ চলাকালীন সময় তো বটেই, দূর্যোগ পরবর্তী সময়েও দূষিত পানি পানের ফলে ডাইরিয়া বা কলেরার মতো পানিবাহীত রোগে বিপন্ন হয় জনজীবন। দূর্যোগে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা তাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

বর্তমানে দেশে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত প্রায় পনেরোটিরও বেশি জেলা। ত্রাণ তৎপরতায় বন্যাদূর্গত অনেকের কাছেই পৌঁছে যাচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। তবে, সংকট পুরোপুরি মোকাবেলা করতে সরাসরি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ একমাত্র সমাধান নয়। জরুরি পরিস্থিতিতো পানি বিশুদ্ধকরণের উপায়গুলো এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বৃষ্টির পানি

দূর্যোগ কবোলিত এলাকায় সবচেয়ে সহজভাবে বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার উপায় হচ্ছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা। প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টি পানি বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। খোলা স্থানে পরিষ্কার পলিথিনের চারকোনায় খুটি বেধে মাঝখানে ফুটো করে বৃষ্টির সময় সেই পানি পাত্রে সংগ্রহ করা যায় সহজেই। এ সময় বাতাসে ময়লা আবর্জনা উড়ে যেন পলিথিনে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ফিটকিরি

ফিটকিরি বা পটাসিয়াম অ্যালাম ব্যবহার করে সহজেই পানি বিশুদ্ধ করা যায়। ঘোলা বা অপরিষ্কার পানিও এর মাধ্যমে পরিষ্কার করা যায়। ঘোলাটে পানিতে ফিটকিরি মেশালে ফ্লোকুলেশন ঘটে। অর্থাৎ পানিতে অন্যান্য যৌগ এবং জীবাণু একসঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় বড় কণায় পরিণত হয়। তারপর সেই কণাগুলো মহাকর্ষের টানে জমা হয় পাত্রের নিচে।

পানি বিশুদ্ধ করার জন্য সামান্য পরিমাণ ফিটকিরিই যথেষ্ঠ। ফিটকিরি গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মেশালে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। ফিটকিরি মেশানোর পর কমপক্ষে তিনঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পাত্রের ওপরের পানি ছেঁকে পান করা যাবে।

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট

বাজারে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। এসব ট্যাবলেটের মূল উপাদান হ্যালোজেন মৌল। সাধারণ ক্লোরিন বা আয়োডিনের মতো পরিষ্কারক উপাদান ব্যবহার করা হয় এসব ট্যাবলেটে। দূষিত বা ময়লা পানিতে পরিমাণ মতো ট্যাবলেট ব্যবহার করে আধঘণ্টা রেখে দিলে, তা পানের উপযোগী হয়ে ওঠে। এভাবে বিশুদ্ধ করা পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকে। তবে খোলা পাত্রে বেশ কিছুক্ষণ এই পানি রাখলে গন্ধ কমে যায়।

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট তৈরি করে।

ফোটানো পানি

পানিতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করার কার্যকর উপায় হচ্ছে ফোটানো। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে। অনেকে মনে করেন ২০ মিনিট ধরে পানি ফোটানো উচিত। এটা তথ্য পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, মাত্র ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মিনিটের মধ্যে পানির বেশিরভাগ জীবাণু মারা যায়। তাই পানি ফুটতে শুরু করলেই তাপ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া যায়। ঠান্ডা হলে ফোটানো পানি ছেঁকে পান করতে হবে।

সূর্যের আলো

প্রখর সূর্যের আলোতে দুই থেকে তিনঘণ্টা পানি রেখে আংশিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা যায়। এক্ষেত্রেও পানি থিতিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এ পদ্ধতির জন্য বড় মুখের পাত্র সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

লেখক : শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: প্রিমাল সার্ভেয়র, সিডিসি, ইউএনবি ও ওয়াশিংটন