প্রকাশিত হল বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যা

বসন্ত এসে এসে গেছে। করোনার চোখরাঙানি পাল্টা জবাব দিতে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে দেশে। এক বছরের নাভিশ্বাস কাটিয়ে নতুন দিনে নতুন আশার গল্প শোনাবে বিজ্ঞানচিন্তা। তাই বিজ্ঞানচিন্তার চলতি সংখ্যায় এবার ভিন্নমাত্রা যোগ করতে মলাট কাহিনি করা হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরকে ঘিরে।

বাংলাদেশে যে একটা বিজ্ঞান জাদুঘর আছে, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে মজা নিয়ে বিজ্ঞান শেখার মজার সব উপকরণ আছে, এ খবর এখনো অনেকে জানেন না। ঢাকার আগারগাঁওয়ে ছয় একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে এমন কিছু জিনিস আছে, যা বিজ্ঞান আগ্রহী শিক্ষার্থীদের চমকে দিতে পারে। মজার বিজ্ঞান গ্যালারিতে যেমন বিজ্ঞানের মজার মজার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পসরা সাজানো আছে, রয়েছে বিজ্ঞানের সুত্রগুলো হাতে-কলমে প্রমাণ করার সুযোগও। মোট সাতটা গ্যালারি। নিউটনের সূত্রগুলোর প্রমাণ নিজে প্রমাণ করার ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্ল্যাজমা টিউব, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বলের অদ্ভুত কারসাজি দেখার ব্যবস্থাও।

চলচ্চিত্রের মূলনীতি, অল্পচাপে আগুন ছাড়াই পানি ফুটতে পারে- এসব দৃশ্য চাক্ষুস করার পর যে কোনো শিক্ষার্থীর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া জীববিজ্ঞান গ্যালারি যেন জন্তু-জানোয়ারের স্টাফ করা মৃতদেহের অরণ্য। সামুদ্রিক প্রবাল, লাখো বছরের প্রাচীন ফসিল ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক ইতিহাস অনুভব করাবে শিক্ষার্থীদের। আছে বিশালাকায় নীল তিমির কঙ্কাল, আছে ডায়নোসরের কঙ্কালও। ছোটখাটো একটা প্ল্যানেটরিয়াম আছে, যেখনে আটটি গ্রহকে সঙ্গে নিয়ে আকাশে ঝুলে আছে আছে সূর্য। টেলিস্কোপ আছে আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য, বিভিন্ন সময় মহাকাশ পর্যবেক্ষণে এই টেলিস্কোপগুলো ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর জগতে হারিয়ে যেতে চাইল ঢুঁ মারতে পারেন ত্রিমাত্রিক সিনেমার প্রেক্ষাগৃহ, একটা সুদৃশ্য বাসের ভেতর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান উৎসাহী করতে সদাপ্রস্তুত ছয়টি ভ্রাম্যমান বাস। ছোটখাটো ল্যাবরেটরির মতো করে সাজানো এই বাসগুলো সারাদেশ ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের আনন্দ লাভের সুযোগ করে দেয়।

বিজ্ঞান উৎসাহী তরুণদের কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞানচিন্তার চলতি সংখ্যার মলাট কাহিনি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তি জাদুঘরের ভেতর-বাহির নিয়ে। দর্শকের চোখে বিজ্ঞান জাদুঘর কেমন, সেটা নিয়ে একটি মনকাড়া লেখা যেমন থাকছে, তেমনি বিজ্ঞান জাদুঘরের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সেগুলোর ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবচ্ছেদ নিয়ে রয়েছে একটি বিস্তারিত লেখা।

আপনাদের যদি একটা বিজ্ঞান ক্লাব থাকে, সেই বিজ্ঞান ক্লাবটি আরও সক্রিয় আর আধুনকি করতে সহায়তা নিতে পারেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের। এজন্য আপনাদের ক্লাবটিকে নিবন্ধন করতে হবে। সেই নিবন্ধন কীভাবে করবেন, তা নিয়েও একটা লেখা ছাপা হয়েছে চলতি সংখ্যায়।

এছাড়া বেশ কিছু বক্স আইটেম আছে বিজ্ঞান জাদুঘরের সাজানো কিছু যন্ত্র ও প্রদর্শনী বস্তু নিয়ে।

বিজ্ঞান জাদুঘর ছাড়াও নিয়মিত সব আয়োজন থাকছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিজ্ঞান কবিতা লিখেছেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক আনিসুল হক। বিজ্ঞান রম্য লিখেছেন জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীব।

করোনার ভ্যাকসিন এসে গেছে দেশে। অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন ভ্যাকসিন নেবেন কিনা। ভ্যাকসিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নগুলো উঠছে, সেগুলোর জবাব দিয়েছেন ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী। এছাড়া করোনা টিকা কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে আরও একটি লেখা থাকছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সায়েন্স নিউজ পত্রিকা সেরা দশজন তরুণ বিজ্ঞানীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় আছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী তনিমা তাসনিম অনন্যা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টামাউথ কলেজে গবেষণা করছেন ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে। তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হলো বিজ্ঞানচিন্তার চলতি সংখ্যায়। এই সাক্ষাৎকারে তনিমা তাসনিম যেমন নিজের কথা বলেছেন, তেমনি নিজের বেড়ে ওঠা, সফলতার পেছনের গল্প আর কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও গুরুত্বপুর্ণ কিছু কথা বলেছেন।

প্রথিতযশা দুই বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং অমল রায়চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছেন কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকসের সাবেক অধ্যাপক পুরুষোত্তম চক্রবর্তী ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আরএমআইটির বায়োমেডিকেল ফিজিকসের শিক্ষক ও গবেষক প্রদীপ দেব।

ফেব্রুয়ারি মাসেই জন্মেছিলেন বিখ্যাত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। তাকে নিয়ে লিখেছেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। এছাড়া ‌‌‍'জাস্ট সিক্স নাম্বার', ‌‌‌'তারাদের নাম-পরিচয়', 'অমর হেনরিয়েটা ল্যাকস', 'কোথা থেকে এল বাংলা লিপি’ ইত্যাদি শিরোনামে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা রয়েছে বিজ্ঞানচিন্তার চলতি সংখ্যায়।

বিজ্ঞান জগতের নতুন খবর বা আপডেট, রকমারি ফিচার, কার্যকারণ, দুই চালে মাত, কুইজ, বুদ্ধির ব্যায়ামসহ নিয়মিত সব আয়োজন তো থাকছেই।