মানুষের গন্ধ পাও!

চলছে তীব্র গরমকাল। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের বিরক্তি, তিরিক্ষি মেজাজ। অসহ্য গরমে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে ঘাম হওয়াটা ভালো দিকই বটে। কিন্তু ব্যাপারটা বিশ্রী হয়ে যায় যখন দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম পাশের মানুষটির বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, মুখ ও পায়ের উটকো স্যাঁতসেঁতে গন্ধ এই সবকিছুর জন্যই দায়ী কিছু রাসায়নিক যৌগ। এ যৌগগুলো তৈরি করে কিছু বাজে ব্যাকটেরিয়া!

মুখের গন্ধ

ব্যাকটেরিয়া মুখের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থেকে কিছু রাসায়নিক বর্জ্য যৌগ গঠন করে। এদের মধ্যে উদ্বায়ী সালফার যৌগই প্রধান। যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড পচা ডিমের মতো গন্ধ ছড়ায়, মিথেনিথায়োল এবং ডাই-মিথাইল সালফাইড পচা বাঁধাকপি, পচা ডিম আর রসুনের গন্ধ ছড়ায়।

মানুষের নাক পর্যন্ত এসব দুর্গন্ধ পৌঁছাতে এদের উপস্থিতি মাত্র ০.০০০৪৭ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) থাকলেই যথেষ্ট। এ ছাড়া রসুনের ভাঙনে অ্যালাইল মিথাইল সালফাইড তৈরি হয়, যা বিশ্রী রসুন-রসুন দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। মাছ-মাংস-জাতীয় খাবারের পর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে ক্যাডাভেরিন ও পুট্রেসিন রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়। এগুলোই মুখের ভেতর পরবর্তী সময়ে পচা মাংস ও পচা মাছের দুর্গন্ধ ছড়ায়।

ঘাম

কমবেশি মানুষের সারা শরীরেই ঘাম হয়। তবে দুর্গন্ধ বেশি ছড়ায় বগলের নিচের ঘাম। বলা হয়, বগলের নিচে প্রায় প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে ১০ লাখ ব্যাকটেরিয়ার বসবাস! এসব ব্যাকটেরিয়াই আমাদের গন্ধহীন ঘামকে দুর্গন্ধযুক্ত করে তোলে। বগলের নিচে দুই ধরনের জৈব যৌগ তৈরি হয়, কিন্তু এগুলোর কোনোটিতেই সালফার নেই।

নাম কিসের মতো গন্ধ

১. ট্রান্স-৩-মিথাইল-২-হেক্সিনোয়িক অ্যাসিড ছাগল

২. ৩-মিথাইল-৩-সালফানাইলহেক্সান-১-অল পেঁয়াজ

৩. ৩-হাইড্রোক্সি-৩-মিথাইলহেক্সানোয়িক অ্যাসিড জিরা

নাম কিসের মতো গন্ধ

১. মিথেনিথায়োল সালফার, রসুন

২. হাইড্রোজেন সালফাইড সালফার, পচা ডিম

৩. ডাইমিথাইল সালফাইড পচা বাঁধাকপি, সালফার, মিষ্টি

পেট ফাঁপা

পরিপাক প্রক্রিয়া সংঘটনের সময় এখানেও বিভিন্ন ধরনের সালফার যৌগ উত্পন্ন হয়, যেগুলো দুর্গন্ধ তৈরির জন্য দায়ী।

পায়ের গন্ধ

মিথেনিথায়োল, প্রপানোয়িক অ্যাসিড, আইসোভ্যালারিক অ্যাসিড ইত্যাদি যৌগ পায়ের পাতায় ঘামের সঙ্গে বিশ্রী গন্ধ ছড়ায়। প্রপানোয়িক অ্যাসিড বিস্বাদ, কটু টকটক গন্ধের জন্য দায়ী। আইসোভ্যালারিক অ্যাসিডের কারণে পনিরের মতো গন্ধ হয়। আইসোভ্যালারিক অ্যাসিড এমন এক ব্যাকটেরিয়ার কারণে তৈরি হয়, যা পনিরের মধ্যেও থাকে।

নাম কিসের মতো গন্ধ

১. হাইড্রোজেন সালফাইড সালফার, পচা ডিম

২. মিথেনিথায়োল সালফার, রসুন

৩. ডাইমিথাইল সালফাইড পচা বাঁধাকপি, সালফার, মিষ্টি

নাম কিসের মতো গন্ধ

১. মিথেনইথায়োল সালফার, রসুন

২. প্রপানোয়িক অ্যাসিড বিস্বাদ, কটু, টকটক গন্ধ

৩. আইসোভ্যালারিক অ্যাসিড পনিরের মতো টক দুর্গন্ধ

লেখক: শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট

লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জুন সংখ্যায় প্রকাশিত