থিয়ার যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়েছি। কয়েকদিন কাজের চাপে ওকে আর বড় গুণের ছোট কৌশল শেখানো হয়নি। তা প্রতিদিন এসে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে, চাচ্চু বড় গুণের কৌশলটা শেখাও না! থিয়ার মতো তোমাদেরও নিশ্চই বড় গুণের কৌশল শিখতে ইচ্ছে করছে। তাহলে, চলো শুরু করা যাক।

আজকে শিখবো ১০০-এর নিচে যেকোনো সংখ্যার গুণ। হ্যাঁ, এই গুণও তোমরা করে ফেলতে পারবে নিমেষেই। আগের নিয়ম মেনেই গুণটা করতে হবে। প্রথমে ৯৬ ও ৯৭ গুণ করে দেখা যাক। থিয়াকে এই কৌশল শেখানোর সময় ও চোখ বড় বড় করে বলেছিল, চাচ্চু এই গুণটাও মনে মনে করা যাবে? আমিও ওর মতো মাথা ওপরে নিচে করে সম্মতি দিয়েছিলাম।

৯৭ ও ৯৬-এর গুণে পার্থক্য শুধু একটাই। আগে ১০ থেকে সংখ্যাটিকে বিয়োগ করতাম। আর এখন বিয়োগ করতে হবে ১০০ থেকে। যখন ১০ থেকে বিয়োগ করেছিলাম তখনকার অঙ্কগুলোও কিন্তু ১০-এর কম ছিল। এখনকার গুণগুলোও ১০০-এর কম সংখ্যা নিয়ে করতে হবে। 

আরও পড়ুন

গুণের সহজ কৌশল

আরও পড়ুন

গুণের আরও সহজ কৌশল

প্রথমে ১০০ থেকে ৯৬ বিয়োগ করলে হবে ৪। আর ১০০ থেক ৯৭ বিয়োগ করলে হবে ৩। ওপরের চিত্রের মতো বৃত্তের মধ্যে যথাক্রমে ৪ ও ৩ বসিয়ে দেই।

এবার আড়াআড়ি বা কোণাকুণিভাবে বিয়োগ করতে হবে। ৯৬ থেকে বিয়োগ করি বা ৯৭ থেকে ৪ বিয়োগ করি, উত্তর হবে ৯৩। সমান চিহ্নের ডানপাশে লিখবো ৯৩। আর বৃত্তের মধ্যে থাকা ৪ ও ৩ কে গুণ করলে হবে ১২। এই ১২ কে বসিয়ে দেব ৯৩-এর ডানপাশে। তাহলে আগের ৯৩-এর পাশে ১২ বসালে পাবো ৯৩১২। অর্থাৎ, ৯ হাজার ৩১২। ক্যালকুলেটর দিয়ে গুণটা করে দেখ, উত্তর এটাই।

এ গুণটা করার পর থিয়াকে বেশ আনন্দিত মনে হয়েছিল। এবার হয়ত ও প্রকৃত মজাটা পেয়েছে। কারণ, নামতা মুখস্ত করে তো আর ৯৭-এর সঙ্গে ৯৬ গুণ করতে পারতো না। যাহোক, এরপর আমাকে পরীক্ষা করার জন্য বললো, আচ্ছা চাচ্চু তুমি এভাবে ৯৮-এর সঙ্গে ৯৫ গুণ করে দেখাও তো। চলো, তোমাদের সঙ্গে নিয়েই এই গুণটা করে ফেলি।

১০০ থেকে ৯৮ বিয়োগ করলে ২ ও ১০০ থেকে ৯৫ বিয়োগ করলে হয় ৫। অঙ্কদুটিকে যথাক্রমে দুটি বৃত্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। এবার একটু বিয়োগ করতে হবে। ৯৮ – ৫ = ৯৩ বা ৯৫ – ২ = ৯৩। সমান চিহ্নের ডানপাশে এই ৯৩ বসিয়ে দিই।

এবার বৃত্তের ভেতরে থাকা ৫-এর সঙ্গে ২ গুণ করলে হবে ১০। এই ১০ বসিয়ে দিব ৯৩ এর ডানপাশে। বেশ তাহলে উত্তর পেয়ে গেলাম ৯৩১০। অর্থাৎ, ৯ হাজার ৩১০।

আমার ধারণা, থিয়ার মতো তোমরা এ অঙ্কের সহজ কৌশল শিখে নিয়েছ। তবে সেটা করতে এখনো তোমাদের খাতা কলম লাগছে। কিন্তু খাতা কলম-ই যদি লাগলো, তাহলে আর ম্যাজিক হলো কোথায়? তোমাকে তো হুট করে মনে মনে গুণটা করে সবাইকে চমকে দিতে হবে। তাই এই নিয়মটাই মনে মনে করে দেখি চলো। ৯৬-এর সঙ্গে ৯৬ গুণ করবো।

এবার মাথার মধ্যে চিন্তা করো, ১০০ থেকে  ৯৬ বিয়োগ করলে ৪ হবে। মাথার মধ্যে দুটি বৃত্ত কল্পনা করো। বৃত্তের মধ্যে আছে দুটি ৪। ৯৬ থেকে ৪ বিয়োগ করলে হবে ৯২। তুমি অর্ধেক উত্তর পেয়ে গেছো। অর্থাৎ, উত্তরের প্রথম অংশ ৯২। তোমার কল্পনায় আছে, দুটি বৃত্তের মধ্যে দুটি ৪। ৪-এর সঙ্গে ৪ গুণ করলে হবে ১৬। এই ১৬-কে বসিয়ে দেবে ৯২-এর ডানপাশে। তাহলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৯২১৬। এটাই উত্তর। ৯ হাজার ২১৬।

কৌশলটা খুবই সহজ। তোমাকে শুধু বারবার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, তোমার মাথার মধ্যেই ছোট ছোট বিয়োগ ও গুণ করতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে বৃত্তের ভেতরের অঙ্ক। বারবার চেষ্টা করলে তোমার ধৈর্য অনেক বাড়বে। ফলে সহজেই মনে রাখতে পারবে। ক্যালকুলেটর চেপে সংখ্যাগুলো ওঠানোর আগেই তুমি বলে দিতে পারবে উত্তর। 

থিয়া বেশ আনন্দ নিয়ে একের পর এক গুণ করতে করতে হঠাৎ থেমে গেল। কিছুক্ষণ মাথা চুলকে আবার গুণ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু না। একটা গুণ কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। ৯২-এর সঙ্গে ৯৪ গুণ করতে গিয়ে হয়েছিল এ ঝামেলাটা। তোমরা কি করতে পারবে এই গুণটা? না পারলেও সমস্যা নেই। আমি আছি না! তবে আজ আর নয়। পরের পর্বে অবশ্যই শিখিয়ে দেব তোমাদের। যাওয়ার আগে তোমাদের কিছু বাসার কাজ দিয়ে যাই। এগুলো সমাধান করতে পারলে পরের পর্ব বুঝতে তোমার আরও সুবিধা হবে।

নিজে সমাধান করো:

ক. ৯৮ × ৯৪ =

খ. ৯৭ × ৯৫ =

গ. ৯৮ × ৯৫ =

ঘ. ৯৭ × ৯৩ =

ঙ. ৯৮ × ৯২ =  

উত্তর মিলিয়ে দেখ:

ক. ৯২১২

খ. ৯২১৫

গ. ৯৩১০

ঘ. ৯০২১

ঙ. ৯০১৬

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পিড ম্যাথ অবলম্বনে

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল