ম্যাঙ্গানিজ নামটি কিভাবে পেলাম?

অন্তত ১৭ হাজার বছর ধরে মানবজাতি ম্যাঙ্গানিজের সঙ্গে পরিচিত। প্রাগৈতিহাসিক কালে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করত গুহাচিত্রের মাধ্যমে। আর এসব চিত্র আঁকতে ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের রঞ্জক (সঙ্গে থাকত লাল আয়রন অক্সাইডের মিশ্রণ) ব্যবহার করত তারা। আবার কাচ তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রাচীনকালে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হতো। এ ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায় রোমান দার্শনিক ও প্রকৃতিবিদ প্লিনির লেখায়। ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পম্পেই নগরী ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় মারা গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বর্ণনামতে, কাচ থেকে অন্যান্য বস্তু সরিয়ে ফেলতে এবং কাচ স্বচ্ছ করতে একধরনের পাউডার ব্যবহার করা হতো। এই পাউডারটি ম্যাঙ্গানিজ বলে শনাক্ত করা গেছে।

প্রকৃতিতে লোহার সঙ্গে সংমিশ্রিত খনিজ হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ ম্যাঙ্গানিজ ১৭৭৪ সালে প্রথম আলাদা করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী জোহান গোট্টেলিব গ্যান। ম্যাঙ্গানিজ নামকরণের সম্ভাব্য দুটি উত্স থাকতে পারে। একটি ধারণামতে, ল্যাটিন শব্দ ম্যাগনেজ (magnes) থেকে নামটি এসেছে, যার অর্থ চুম্বক (magnet)। কারণ ম্যাঙ্গানিজের পরিচিত খনিজ ইডেস্টোন বা ম্যাগনেটাইটের অল্প চুম্বকীয় আকর্ষণ আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ ম্যাঙ্গানিজকে বলা হয় পুরুষ ম্যাঙ্গানিজ। অন্য দিকে আরেকটি পরিচিত খনিজ পাইরোলুসাইটকে বলা হতো স্ত্রী ম্যাঙ্গানিজ। কারণ এটি লোহাকে আকর্ষণ করতে পারে না। পরে এটি ম্যাগনেসিয়া নামে পরিচিতি পায়। গ্রিসের ম্যাগনিসিয়া থেকে এটি সংগ্রহ করা হতো। সে কারণেই অনেকের ধারণা ম্যাগনেসিয়া থেকে ম্যাঙ্গানিজ নামটি এসেছে।

ম্যাঙ্গানিজের ব্যবহার বহুবিদ। মানবদেহের কিছু এনজাইম সক্রিয় হতে ও গ্লুকোজ পরিপাকে ম্যাঙ্গানিজ জড়িত। কারাগারের প্রিজন বারে বিশেষ ধরনের স্টিল ব্যবহূত হয়। এতে ১৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ থাকে। রেলপথের ট্র্যাক, হেলমেট ও সিন্দুক বানাতে এ বিশেষ ইস্পাত ব্যবহার করা হয়। কারণ এ সংকর ধাতুটি খুবই শক্ত হয়। ১৮৮৩ সালে ২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক রবার্ট হ্যাডফিল্ড এটি নিজের নামে পেটেন্ট করেছিলেন। সে কারণে একে হ্যাডফিল্ড স্টিলও বলা হয়।

*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত