পদার্থের নতুন অবস্থা

প্রায় দুই দশক আগে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন চারটি ইলেকট্রনও একসঙ্গে জোট বাঁধতে পারে। ব্যাপারটি এত দিন ধারণাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি এর প্রমাণ মিলেছে গবেষণাগারে। জার্মানি, সুইডেন ও জাপানের একদল পদার্থবিজ্ঞানী জানান, ইলেকট্রনের এই কোয়াড্রাপলেট পদার্থের সম্পূর্ণ নতুন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করে, যা পদার্থবিজ্ঞানে সম্ভাবনার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।

পরামাণুতে যুগলবন্দী ইলেকট্রন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। যেখানে সর্বোচ্চ দুটি ইলেকট্রন একসঙ্গে থাকে এবং বিপরীত স্পিনবিশিষ্ট হয়। অন্যদিকে ইলেকট্রনের কোয়াড্রাপলেটের বেলায় দুটি নয়; বরং চারটি ইলেকট্রন একসঙ্গে থাকতে পারে। এটা মূলত একটি ফার্মিওনিক চতুষ্টয় (কোয়াড্রাপলেট)। যেখান থেকে গঠন, প্রকৃতি ও ইলেকট্রনগুলো একটি অপরটির সঙ্গে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করছে, সে সম্পর্কে জানা জানা যায়। বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রন চতুষ্টয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও এটা কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে এখনো জানেন না। তাই এটা নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

অতিপরিবাহীর ক্ষেত্রে এর গঠনের জন্য প্রয়োজন জোড়া ইলেকট্রন, যাকে কুপার পেয়ার ডাকা হয়। ইলেকট্রনের কোয়াড্রাপলেটের আচরণ অনেকটাই এই কুপার পেয়ারের মতো।

সুইডেনের কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং এই নতুন গবেষণার প্রবীণ গবেষক এগোর বাবায়েভ বলেন, ‘এই অবস্থা পুরোপুরি বুঝতে সম্ভবত অনেক বছর গবেষণা করতে হবে।’ উল্লেখ্য, বাবায়েভ ২০০৪ সালে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ইলেকট্রনের এই অবস্থা সম্পর্কে।

ইলেকট্রনের কোয়াড্রাপলিং ঘটার জন্য সাধারণ অতিপরিবাহী অবস্থায় কোনো রকম বাধা ছাড়াই কণাগুলোর জোড় বাঁধা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হওয়া দরকার। যেটা আদৌ সম্ভব কি না, সেটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না বিজ্ঞানীরা।

বাবায়েভ ও তাঁর সহকর্মীরা এই গবেষণার জন্য লোহাভিত্তিক একটি অতিপরিবাহী বেছে নেন, যার রাসায়নিক সংকেত, Ba1xKxFe2As2। অস্বাভাবিক আচরণের জন্য এই অতিপরিবাহী বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ পরিচিত ছিল। বৈদ্যুতিক রোধ ও বিভিন্ন তাপমাত্রায় পদার্থটির বিভিন্ন ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করেছিলেন তাঁরা।

এতে সময়-বৈপরীত্য প্রতিসাম্যে ভেঙে যাওয়ার প্রমাণ মেলে। এটা পদার্থবিজ্ঞানের এমন একটি ধারণা, যেখানে সময়ের ঋণাত্মক মান পাওয়া সম্ভব, যা একই ঘটনাকে পেছন দিকে ব্যাখ্যা করতে পারে এবং কোনো গতিকে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।

বাবায়েভ বলেন, ‘‌আমরা যে চার-ফার্মিয়ন ঘনীভবন নিয়ে কাজ করছি, সেটিকে সময়ের রদবদল অন্য একটি অবস্থায় নিয়ে যায়।’

একসঙ্গে নেওয়া পরীক্ষা থেকে রেকর্ড করা পরিমাপগুলো অতিপরিবাহিতা হিসেবে দূরপাল্লার ক্রমের দিকে ইঙ্গিত করে ইলেকট্রনের একটি জোড়ার মধ্যে নয়, বরং দুটি জোড়ার মধ্যে। আর এটাই ফার্মিওনিক চতুর্ভুজ ও পদার্থের একটি নতুন অবস্থা।

বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার থেকে শুরু করে এমআরআই স্ক্যানার—সব জায়গায় অতিপরিবাহিতা ব্যবহৃত হয়। এখন নতুন এই ফার্মিয়নিক চতুষ্টয় অবস্থা এসব ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখতে পারে, সেটি দেখতে হবে গবেষণার মাধ্যমে। বর্তমানে এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে, বিটিআরএস বা ব্রোকেন টাইম-রিভার্সাল সিমেট্রি) কোয়ার্টিক ধাতু পর্যায়।

এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক অনেক গবেষণাই অতিপরিবাহীর দিকে অনেক বেশি ইঙ্গিত করে, যেগুলোর কোনো প্রতিসাম্য বা স্থিতিশীলতা নেই, যেটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে থাকবে বলে গবেষকেরা ধরে নিয়েছিলেন। তবে অনেক গবেষক মনে করেন, এ রকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত অবস্থা খুঁজে পাওয়া অসম্ভবও নয়।

বাবায়েভ বলেন, ‘‌পরীক্ষাগুলো আরও অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যা তাপীয় গ্রেডিয়েন্ট, চৌম্বকক্ষেত্র এবং আলট্রাসাউন্ডের সঙ্গে এর প্রতিক্রিয়া–সম্পর্কিত আরও বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এগুলো এখন আমাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে।’

‌এ–সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ১৮ অক্টোবর নেচার ফিজিকস জার্নালে প্রকাশিত হয়।‌

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, লাইফ সায়েন্স