অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান

আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশি-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী এম. জাহিদ হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি (DOE) তাদের জাতীয়, অর্থনীতি ও শক্তি বিষয়ে অসাধারণ অবদানের জন্য বিজ্ঞানীদের এই পুরস্কার দেয়। গত ১২ জানুয়ারি, ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি বিষয়ক সচিব ড্যান ব্রাউলেতি (Dan Brouillette) পুরষ্কারপ্রাপ্ত ৮ বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেন। এই বিজ্ঞানীদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

পুরষ্কার পাওয়ার পর এম. জাহিদ হাসান নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন, 'আর্নেস্ট লরেন্স আমার নায়কদের একজন। তাই এই স্বীকৃতি পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। তাঁর আবিষ্কৃত সাইক্লোট্রনই বর্তমান উচ্চশক্তির ত্বরক প্রযুক্তির পথ দেখিয়েছে। কোয়ান্টাম পদার্থের টপোলজিক্যাল অবস্থা নিয়ে গবেষণায় আমি নিজেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করি। এছাড়া লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ও এসএলএসসি ন্যাশনাল অ্যাক্সিলেটর ল্যাবরেটরির প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমার গবেষণায় অনেক সাহায্য করেছে।'

জাহিদ হাসান মূলত কনডেন্সড ম্যাটার অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সেস, অর্থাৎ ঘনপদার্থ ও বস্তু সংক্রান্ত বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরষ্কার পেয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখাটি বিভিন্ন ঘন পদার্থের ধর্ম, যেমন অতিপরিবাহিতা, অর্ধপরিবাহিতা এবং পদার্থের ভৌতধর্ম, পদার্থের দশান্তর ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে।

পুরস্কার ঘোষণার সময় বলা হয়, 'জাহিদ হাসান স্পিন-অ্যাঙ্গেল-রিজলভড ফটোএমিশন স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করে যেসব এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, সেটাই পদার্থের নতুন দশা এবং নতুন ধরনের ফার্মিয়নিক কোয়াসিকণা আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করেছে।'

ফটোএমিশন স্পেকট্রোস্কোপির আরেক নাম ফটোইলেকট্রন স্পেকট্রোস্কোপি। বাংলা করলে দাঁড়ায়, আলোক-তড়িৎ বর্ণালী। এক্ষেত্রে আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া ব্যবহার করে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ থেকে বিকিরিত ইলেকট্রনের শক্তি পরিমাপ করা হয়। তারপর, এই শক্তি থেকে পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রনের বন্ধন শক্তি নির্ণয় করেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতির নাম অ্যাঙ্গেল-রিজলভড ফটোএমিশন স্পেকট্রোস্কোপি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পদার্থে, বিশেষ করে কেলাস পদার্থে ইলেকট্রনের গঠন, এর শক্তি ইত্যাদি জানা যায়।

জাহিদ হাসানের গবেষণা ঘনপদার্থ বিজ্ঞানে সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। তাঁর গবেষণার ফলে অবসান হয়েছে বিজ্ঞানীদের ৮৫ বছরের অপেক্ষা। ধরা দিয়েছে ভাইল ফার্মিয়ন। এক ধরনের যৌগিক কেলাসে এই কণার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আসলে, এটি শুধু কেলাসেই পাওয়া যায়। এই আবিষ্কার মুঠোফোন, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গতি বাড়াবে, হবে শক্তিসাশ্রয়ী।

উল্লেখ্য, আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তিত হয় ১৯৫৯ সালে। বিজ্ঞানী আর্নেস্ট লরেন্সের প্রতি সম্মান জানিয়ে দেওয়া হয় এই পুরষ্কার। তিনি সাইক্লোট্রন আবিষ্কার করেন। এটি এক ধরনের কণা ত্বরক যন্ত্র। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।

অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের সেক্রেটারি অব এনার্জির (শক্তি বিষয়ক সচিব) স্বাক্ষরকৃত একটি সার্টিফিকেট, একটি স্বর্ণের মেডেল এবং ২০ হাজার ডলার সম্মানী দেওয়া হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র: প্রিন্সটন ডট এডু, নেচার, উইকিপিডিয়া