দ্য লাস্ট আর্টিফিশিয়াল লাইট সোর্স

মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স-এর সুপার ভিলেন থানোসের কথা মনে আছে? সে অন্যান্য ভিলেনের চেয়ে অনেকখানি আলাদা। মহাবিশ্ব শাসন করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না তার। বরং সে মহাবিশ্বকে বাঁচাতে চেয়েছিল অদ্ভুত উপায়ে। সে মহাবিশ্বের জীবন্ত বস্তুর সংখ্যা নামিয়ে আনতে চেয়েছিল ঠিক অর্ধেকে। যেন মহাবিশ্ব ভারসাম্যপূর্ণ হয়। যেন অভাব এবং দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি পায় মহাবিশ্ব। এখন কল্পনা করুন, প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আগমন ঘটল অন্য এক থানোসের, যে কিনা মোটেও আসল থানোসের মতো নয়। মহাবিশ্ব বা পৃথিবীর ভারসাম্য নিয়ে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, তার একমাত্র উদ্দেশ্য পৃথিবী থেকে সব মানুষ সরিয়ে দেয়া। আর সেটা সে করতে পারে ইনফিনিটি স্টোন ব্যবহার করে এক তুড়িতেই। ইনফিনিটি স্টোন এক ধরনের ম্যাজিক্যাল পাথর, আশ্চর্য এক ক্ষমতা এই আছে পাথরের। এর সবগুলো টুকরোকে কেউ একত্রিত করতে পারলে সে যা খুশি করার ক্ষমতা অর্জন করে।

তর্কের খাতিরে ধরে নিন, এই অনাদর্শিক থানোস সফল হলো। সে পৃথিবী থেকে গায়েব করে দিলো সব মানুষ। হঠাৎ করে সব মানুষ ‘নাই’ হয়ে গেলে কি অবস্থা হবে পৃথিবীর? রাস্তায় চলতে থাকা গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একে অন্যের সাথে ধাক্কা খাবে। আকাশ থেকে প্লেনগুলো টপাটপ করে পড়ে যাবে মাটিতে। কলকারখানাগুলো থেমে যাবে। ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। কৃত্রিম আলোর উৎসগুলোর কী হবে?

মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর কৃত্রিম আলোগুলো কি জ্বলবে অনন্তকাল? নাকি সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার হয়ে যাবে সব কিছু? তখনই যদি বন্ধ না হয়, তাহলে মানুষের অনুপুস্থিতিতে কত দিন পর্যন্ত জ্বলবে সেগুলো? সব শেষে বন্ধ হবে কোন উৎসটি?

১.

বেশিরভাগ কৃত্রিম আলোর উৎস খুব দ্রুতই বন্ধ হবে মূল পাওয়ার গ্রিড থেকে আসা বিদ্যুতের অভাবে। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় জীবাশ্ম জ্বালানি। আর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ক্রমাগত জ্বালানি সরবরাহ করতে হয়। মানুষের অভাবে সেগুলো দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাবে। কয়লা এবং তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হবে সবার আগে। অন্যগুলো ক্রমান্বয়ে বন্ধ হবে।

মূল পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যেমন ডিজেল জেনারেটর। অনেক দুর্গম জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয় এগুলো ব্যবহার করে। একবার জ্বালানি লোড করলে কয়েক মাস পর্যন্ত ক্রমাগত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে এগুলো। তাই মানুষ বিলোপ হলেই বেশ কিছুটা সময় এদের মাধ্যমে কৃত্রিম আলো বেঁচে থাকবে পৃথিবীর বুকে।

আরও আছে জিও-থার্মাল প্ল্যান্ট। এগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরের থাকা তাপের উৎসকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করে বিদ্যুৎ। তাপশক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া ছাড়া এগুলোর কার্যপ্রণালী অন্যান্য সাধারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতই। প্রতি ছয় মাস অন্তর এদের গিয়ার বক্স, মোটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংস্কার করতে হয়। তবে মানুষের অনুপস্থিতিতে এগুলো কোন ধরনের সংস্কার ছাড়া কয়েক বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যেতে পারে।

২.

আর আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাতাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর টার্বাইন এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন এদের প্রতিনিয়ত দেখ-ভাল করতে না হয়। কারণ এগুলো মাটি থেকে অনেক উচ্চতায় থাকে। তাই ঘন ঘন মেরামত বা সংস্কার করা বেশ কঠিন। কিছু কিছু উইন্ডমিল মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া দীর্ঘ সময় চলতে পারে। যেমন, ডেনমার্কের গেডসার উইন্ডমিলের চালু হয় ১৯৫০ এর দশকে। কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়া প্রায় ১১ বছর চালু ছিল সেটা। আধুনিক উইন্ডমিলগুলো কমপক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত বাইরের কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই চলতে পারে। নিঃসন্দেহে এদের কয়েকটি কয়েক দশক পর্যন্ত সংস্কার ছাড়াই চলতে পারবে।

পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবশ্য এতো বেশি দিন টিকতে পারবে না। সংস্কারের অভাবে কয়েক বছরের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যাবে।

৩.

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস। এদের যদি লো পাওয়ার মোডে চালানো হয়, তাহলে একবার লোড করা জ্বালানি দিয়ে প্রায় অনন্তকাল ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাওয়া সম্ভব। তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এরাই হয়তো হবে দ্য লাস্ট সোর্স অফ আর্টিফিশিয়াল লাইট। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। কারণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি লোড করা থাকলেও এগুলো মনুষ ছাড়া খুব বেশি দিন চলবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নানান সেফটি সিস্টেম থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্দিষ্ট প্যারামিটারগুলো যদি আগে থেকে নির্ধারণ করা সীমার বাইরে চলে যায়, তাহলেই চালু হয়ে যায় সিস্টেমগুলো। কন্ট্রোল রড কোরের মধ্যে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় রিঅ্যাক্টর। এই ঘটনার নাম স্ক্র্যাম (SCRAM-সেফটি কন্ট্রোল রড অ্যাক্স ম্যান)।

এনরিকো ফার্মির তৈরি করা বিশ্বের প্রথম নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে (শিকাগো পাইল) কোনো স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে রিঅ্যাক্টর কোরের উপরে দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছিল কন্ট্রোল রড। পাশেই একটি কুঠার হাতে অপেক্ষা করতেন একজন পদার্থবিদ। অবস্থা বেগতিক দেখলেই তিনি দড়ি কেটে দিয়ে কন্ট্রোল রড কোরের মধ্যে ফেলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতেন ফিশন চেইন বিক্রিয়া। মূল কথা হলো, সেফটি সিস্টেমগুলোর উপস্থিতির কারণে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পক্ষে লাস্ট সোর্স অফ আর্টিফিশিয়াল লাইট হওয়া সম্ভব নয়।

৫.

এবার আসা যাক স্পেস প্রোবগুলোর দিকে। মানুষের তৈরি যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে এগুলোই সম্ভবত সবচেয়ে টেকসই। ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার। এদের মধ্যে সচল রয়েছে সাড়ে চার হাজারের মতন। মানুষ যদি হঠাৎ করে নাই হয়ে যায়, তাহলে এদের অধিকাংশের কক্ষপথ সংকুচিত হয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পরবে। জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো বৃহৎ ব্যাসার্ধের কক্ষপথে পরিভ্রমণরত থাকার কারণে টিকে থাকবে বেশ কিছুটা সময়। কিন্তু পরিশেষে চাঁদ এবং সূর্যের প্রভাব এবং মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ কক্ষপথে চলমান থাকা কৃত্রিম উপগ্রহও একই পরিণতি বরণ করবে।

মঙ্গলের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কিছু রোভার। এসব রোভার সৌরশক্তি বা তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহার করে সচল থাকে। কিউরিওসিটি রোভারের কথাই ভাবুন। এটি পাঠানো হয়েছিল ২০১১ সালে। পাওয়ার সোর্স হিসেবে এতে প্লুটোনিয়ামের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় থেকে উৎপন্ন তাপশক্তিকে ব্যবহার করা হয়। এই উৎস ব্যবহার করে এটি প্রায় এক শতাব্দী পর্যন্ত সচল থাকতে পারে। যদি না অন্যান্য অংশ আগেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়ে যায়।

স্পেসক্রাফটগুলো মানুষবিহীন মহাবিশ্বের শেষ আলোক বর্তিকা হবার দৌড়ে বেশ শক্ত প্রার্থী। কিন্তু সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। এরাও লাস্ট সোর্স অফ আর্টিফিশিয়াল হতে পারে না। কারণ এদের মধ্যে লাইট থাকলেও সেগুলো জ্বালানোর কোন কারণ নেই। রোভারগুলো আলো ব্যবহার করে নমুনা সংগ্রহের সময়ে এবং সেগুলোর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। আর মানুষের কাছে থেকে সুনির্দিষ্ট বার্তা পাওয়ার পরই নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। তাই এক শতাব্দী পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকার সামর্থ্য থাকার পরও মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেলে নিজে থেকে আলো জ্বালানোর কোনো কারণ নেই এগুলোর। অর্থাৎ, নিভৃতেই এরা অপেক্ষা করবে চূড়ান্ত পরিণতির জন্য।

৬.

কৃত্রিম আলোর বিস্ময়কর উৎস হলো চেরেনকভ রেডিয়েশন। যখন কোন স্বচ্ছ মাধ্যমে আলোর চেয়ে বেশি বেগে কোনো চার্জিত কণা (যেমন, ইলেকট্রন) চলমান থাকে, তখন এক ধরনের বিকিরণ (ফোটন) উৎপন্ন হয়। সেটাই চেরেনকভ রেডিয়েশন। কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি গতিবেগ নিয়ে চলতে পারে না। তাহলে ইলেকট্রন কীভাবে আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলবে?

আসলে কোনো কিছুর বেগ আলোর চেয়ে বেশি হবে না, এ সিদ্ধান্তটি একটি শর্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর সেটি হলো, চলাচলের মাধ্যমটি হতে হবে শূন্য মাধ্যম। অর্থাৎ, শূন্য মাধ্যমে কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারবে না। কিন্তু অন্য কোনো মাধ্যমে (যেমন, পানি) আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলা কণার অস্তিত্ব থাকতে পারে। ফোটন (আলো) যখন শূন্য মাধ্যম থেকে কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন প্রতিসরণের কারণে এর গতিবেগ কমে যায়। পানিতে ফোটন প্রতি সেকেন্ডে দুই লক্ষ পঁচিশ হাজার কিলোমিটার বেগে চলে। অন্যদিকে, শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। বেটা পার্টিকেল বা ইলেকট্রন শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগের খুব কাছাকাছি বেগ নিয়ে চলে। অর্থাৎ, শূন্য মাধ্যমে একই স্থান থেকে যাত্রা শুরু করলে ফোটন সামান্য এগিয়ে থাকবে ইলেকট্রনের তুলনায়। কিন্তু যদি বেটা ইলেকট্রন আর ফোটন একই সঙ্গে পানির ভেতর দিয়ে চলে, তাহলে ফোটনের গতিবেগ কমে যাবে। কিন্তু ইলেকট্রনের গতিবেগ একই থাকে। অর্থাৎ, ইলেকট্রনটি পানিতে আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলা শুরু করবে। আর তখনই উৎপন্ন হবে চেরেনকভ রেডিয়েশন। তবে কখনোই তা আলোর সর্বোচ্চ বেগ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটারের সমান হবে না।

৭.

১৯৩৪ সালে রাশিয়ান পদার্থবিদ পাভেল চেরেনকভ এই বিকিরণ আবিষ্কার করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার পান করেন এই আবিষ্কারের জন্য।

এখন আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে। পানিতে ভেতরে কেনইবা চেরেনকভ রেডিয়েশন উৎপন্ন হবে? পানি এক ধরনের ডাই ইলেকট্রিক মাধ্যম। অর্থাৎ, এতে পোলারাইজেশন হয়। যখন চার্জিত কণা (ইলেকট্রন) পানির মধ্যে দিয়ে আলোর চেয়ে বেশি বেগে যায়, তখন সেটির বিদ্যুৎক্ষেত্র পানির পরমাণুতে থাকা ইলেকট্রনগুলোকে প্রভাবিত করে। সেই প্রভাবিত ইলেকট্রনগুলো আবার একইভাবে প্রভাব বিস্তার করে পানির অন্য পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোকে। এভাবে প্রভাবিত হওয়া অণু পরমাণুগুলো আবার ভারসাম্য অবস্থায় ফিরে আসে ফোটন নিঃসরণের মাধ্যমে। এটাই চেরেনকভ রেডিয়েশন। সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে সুপারসনিক প্লেনের সনিক বুমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সুপারসনিক প্লেনগুলো শব্দের চেয়ে বেশি বেগে পরিভ্রমণ করতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত এরা শব্দের চেয়ে কম বেগে গতিশীল থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এরা অন্যান্য স্বাভাবিক প্লেনের মতই শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন করে। কিন্তু যখন এরা সুপারসনিক গতিতে চলতে শুরু করে তখন আমাদের মাথার ওপর দিয়ে প্লেন উড়ে যাবার পর আমরা বেশ জোরে একটি শব্দ শুনতে পাই। যার নাম সনিক বুম। চেরেনকভ রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন হল সুপারসনিক প্লেনের মতো এবং উৎপন্ন বিকিরণকে তুলনা করা যায় সনিক বুমের সঙ্গে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরের কোর এবং স্পেন্ট ফুয়েল পুলের পানিতে নীল রঙের আলো দেখা যায় চেরেনকভ রেডিয়েশনের কারণে। রি অ্যাক্টরের ফুয়েল রডগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন বেটা ইলেকট্রনগুলো বের হতে না পারে। কিন্তু রড থেকে উৎপন্ন হওয়া গামা রশ্মিগুলোকে আটকানোর সামর্থ্য নেই ফুয়েল রডের দেয়ালের। এই গামা রশ্মিগুলো কম্পটন ইফেক্টের মাধ্যমে কোর এবং স্পেন্ট ফুয়েল পুলে উৎপন্ন করে ইলেকট্রন। এগুলোই পরে চেরেনকভ রেডিয়েশন তৈরি করে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপন্ন তেজিস্ক্রিয় বর্জ্যেও থাকে এদের অস্তিত্ব। যেমন, সিজিয়াম-১৩৭ গলিয়ে কাঁচের সাথে মিশ্রিত করে ঠাণ্ডা করে সলিড ব্লকে রূপান্তর করা হয়। তারপর বিশেষভাবে তৈরি কন্টেইনারের মধ্যে স্থাপন করা হয় যেন সহজে এবং নিরাপদে পরিবহন করা যায়। অন্ধকারে এই ব্লকগুলোও নীল বর্ণের চেরেনকভ রেডিয়েশন বিকিরণ করে। সিজিয়াম-১৩৭ এর অর্ধায়ু ত্রিশ বছর। এর মানে হল যে, মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেলও প্রায় দুই শতাব্দী পরেও এই বিকিরণ অব্যাহত থাকবে। অবশ্য তীব্রতা অনেকাংশেই কমে যাবে।

মানুষ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সম্ভবত কয়েক শতাব্দী পরেও কংক্রিট ভল্টের ভেতরে অত্যন্ত বিপদজনক পারমাণবিক বর্জ্য থেকে আসা চেরেনকভ রেডিয়েশনই হবে লাস্ট সোর্স অফ আর্টিফিশিয়াল লাইট।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাবনা

সূত্র: হোট ইফ/র‍্যান্ডেল মুনরো