ভ্যাকুয়াম ক্লিনার

আজমল সাহেব ঈদে কাপড়চোপড় কেনার ঘোর বিরোধী। তবে তিনি প্রতি ঈদেই একটা করে সাংসারে কাজে লাগে এমন যন্ত্র কিনে থাকেন। যেমন গত ঈদে কিনেছিলেন ওয়াশিং মেশিন এবারের ঈদে কিনলেন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। কিনেই শেষ না, তিনি তাঁর ছেলেপেলেদের ওপর দায়িত্ব দিলেন ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ওপর যত রকম ইনফরমেশন আছে তা সংগ্রহ করতে হবে। এবং শুধু ইনফরমেশন সংগ্রহ করলেই হবে না। কারণ, ইনফরমেশন কিন্তু নলেজ না। ইনফরমেশনকে নলেজে রূপান্তরিত করতে হবে। আর নলেজে রূপান্তরিত করলেই হবে না, তাকে উইজডমে (মানে বাংলায় যাকে বলে প্রজ্ঞা) পর্যবসিত করতে হবে। কারণ আজমল সাহেব মনে করেন, ইনফরমেশন বা নলেজ সমাজের কোনো কাজে লাগে না। কাজে লাগে উইজডম! (এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের উইজডম হচ্ছে ঠিকা বুয়ার চাকরি খতম!)

সে যা-ই হোক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কেনার পর আজমল সাহেবের সন্তানেরা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে ইনফরমেশন—নলেজ আর উইজডম ঘাঁটাঘাঁটি করে কী পেল তার বিস্তর বর্ণনায় না গিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের প্রথম মার্কেটিংয়ের একটা গল্পটা বরং শেয়ার করা যাক।

সে অনেক কাল আগের কথা। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার আবিষ্কারের পরপর...তার প্রথম ডোর টু ডোর মার্কেটিং করতে গেল এক তরুণ। এক বাসায় ঢুকে সে একগাদা ময়লা (ছেঁড়া স্যান্ডেল, পচা টমেটো, কলার ছোলা, ভাঙা কাচ, প্লাস্টিকের বোতল...ইত্যাদি ইত্যাদি) ওই বাসার কার্পেটের ওপর ছুড়ে ফেলে দিল। বাসার ভদ্রমহিলা আর্তনাদ করে উঠলেন—

—এটা কী করলেন আপনি?

—ম্যাডাম আপনি একটুও ভয় পাবেন না। এই মেশিন দিয়ে আমি পরিষ্কার করে দেব। এর নাম ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। কারেন্টে চলে। সব ময়লা মুহূর্তে শুষে নেবে...চোখের পলকে সব পরিষ্কার!

—আর যদি পরিষ্কার করতে না পারেন? সন্দেহ প্রকাশ করল বাড়ির বয়স্ক মহিলা।

—সে ক্ষেত্রে আমি কথা দিচ্ছি, আপনার কার্পেটের ওপর ফেলা প্রতিটা জিনিস আমি নিজে চিবিয়ে খেয়ে পরিষ্কার করব।

শুনে মহিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেলেন। একটু পর ফিরলেন একটা সসের বোতল নিয়ে। বোতলটা লোকটার হাতে দিয়ে বললেন—

—এটা হাতে রাখুন।

—সসের বোতল দিয়ে কী হবে?

—আজ থেকে আগামী এক সপ্তাহ এই এলাকায় কারেন্ট থাকবে না। এগুলো শুকনো শুকনো চিবিয়ে খাবেন কীভাবে, বরং সস দিয়ে খেলে একটু আরাম হতে পারে!

প্রিয় পাঠক এই গল্পের উইজডমটা (প্রজ্ঞা) কী হতে পারে বরং আপনারাই ভেবে বের করুন।

লেখক: কার্টুনিস্ট