ভ্রম

সেদিন সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফেরে অন্তু। মফস্বল শহরে থাকে। আত্মীয় বলতে কেউ নেই, সঙ্গী হিসেবে আছে শুধু তার পোষা কুকুর ডোরা। তবে দিনটা আর দশটা দিনের মতো নয়। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জ্বলে না ওটা। মুঠোফোনের টর্চ জ্বালায় বাধ্য হয়ে। ডোরা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘ব্যাপার কী ডোরা?’ বলে অন্তু।

ডোরা কুঁই শব্দ করে এগিয়ে চলে অন্তুর স্টাডিরুমের দিকে। অন্তুও চলে পিছু পিছু। স্টাডিরুমের অবস্থা দেখে অবাক হয় অন্তু। সবকিছু এলোমেলো। বিছানা ওলটানো, বইপত্র সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ল্যাপটপের চার্জারটা খোলা। কেন? ভেবে পায় না অন্তু।

তখন কাঁধে একটা শীতল স্পর্শ অনুভব করে অন্তু। ঘুরে তাকায় পেছনে। চোখ ছানাবড়া। আজব একটা প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ংকর এক দানবের মতো চেহারা। বিদ্যুৎ খেলে যায় অন্তুর মাথায়। একলাফে ড্রয়ার খুলে বের লাইসেন্স করা পিস্তল। তাক করেছে সোজা সেই প্রাণীর কপাল বরাবর।

তখনই ঘটে এক অবাক কাণ্ড। জন্তুটা এতক্ষণের জড়তা ভেঙে পরিষ্কার বাংলায় বলে, ‘আমি রিগাল-2279 সিয়ানো-23।’ গড়গড় করে বলে চলে জন্তুটা, ‘‘রিগাল-2279 আমার প্রজাতিগত নাম আর সিয়ানো-23 দিয়ে বোঝানো হয় আমার বুদ্ধির মাত্রা।’

মানুষের মতো ভাষা শুনে সাহস ফিরে পায় অন্তু। বলে, ‘তুমি কি তবে ভিনগ্রহী?’

‘হ্যাঁ’, জবাব দেয় জন্তুটি। ‘আমি নেসন-৫৯ গ্রহ থেকে ভুলবশত এখানে চলে এসেছি। আমার একটু সাহায্য দরকার।’

অন্তু নিজের চোখ আর কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারে না। কিংবদন্তির এক জলজ্যান্ত এলিয়েন এখন ওর সামনে দাঁড়িয়ে! কিন্তু মানুষের কল্পনার সঙ্গে কোনো মিল নেই প্রাণীটার চেহারায়।

‘তুমি আমার ভাষা জানলে কীভাবে?’ অন্তু জিজ্ঞেস করে।

‘আমাদের মস্তিষ্কে এক বিশেষ ডিকোডার আছে, সেটা ব্যবহার করেই আমি তোমার ভাষায় কথা বলছি।’

‘ও’। স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে অন্তু। ‘বলো, তাহলে কী সাহায্য দরকার তোমার?’

‘আমি একটি মিশনে এক্স-১১ গ্রহে যাচ্ছিলাম। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমি এখানে এসে পড়েছি। আমার এখান থেকে যাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা লাগবে, কারণ আমি যেদিকে যাব, সে বরাবর ধবধবে এক বস্তু অবস্থান করছে। আর ২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ২৮ সেকেন্ড পর সরে যাবে ওটা আমার পথ থেকে। তাই চারদিক ঘুরে দেখছিলাম। এমন সময় আমি এই প্রাণীটিকে দেখে এখানে চলে আসি। পরে এর উদ্ভট আচরণে ভয় পেয়ে যাই, ছোটাছুটিতে সব অগোছালো করে ফেলেছি। দয়া করে তুমি আমার কথা কাউকে বোলো না।’

‘অন্তু বলল, সাদা বস্তুটি হলো আমাদের উপগ্রহ চাঁদ। আর এই প্রাণীটি আমার পোষা কুকুর, ডোরা।’

অনেকক্ষণ ধরে ভিনগ্রহীর সঙ্গে আলাপ করল অন্তু। একসময় সময় হলো তার চলে যাওয়ার।

দুই

সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্তু নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। ঘরের সব জিনিসপত্র ঠিক আগের মতোই আছে। কাল কখন যে সে ঘুমিয়ে গেছে, মনে নেই। ভাবল, অতিরিক্ত কাজের চাপে সে হয়তো এসব উদ্ভট স্বপ্ন দেখেছে। কোনো ভিনগ্রহী আসলে আসেইনি।

কদিন পর আচমকা তার ল্যাপটপটা নষ্ট হয়ে যায়। আর অবাক করা ঘটনা হচ্ছে মেরামতকারী জানায়, অতিরিক্ত শক্তির লোড নিতে না পেরে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। অবশেষে, সে ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ রিকভার করে কিছু পায় না। তবে একটা মেসেজ পেল ‘থ্যাংকস ফর দ্য ডে।’ কে পাঠিয়েছে এই বার্তা? তবে কি সেদিনের ঘটনাটা ভ্রম ছিল না!

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও, ঢাকা