‘আয়ান।’
‘মি. আয়ান!’
ধড়মড় করে উঠে বসল একটি নিরীহ, গোবেচারা-টাইপের সুদর্শন ছেলে। নাম তাশরিক আয়ান। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রথম সারির ছাত্র তিনি। লাস্ট ইয়ারে এসে গবেষণা করছেন ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম নিয়ে। সারা রাত কাজ করেছেন, ব্লু হোয়েল গেমকে ধ্বংস করার কাজে তিনি ব্যস্ত। তাই ক্লান্ত। ক্লাস করতে এসে ঘুমিয়ে গেছেন।
আয়ানও একসময় ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে এ রকম বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া তাঁর জন্য কয়েকটা মাত্র ক্লিকের কাজ। কারণ, তিনি পৃথিবীর প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ত্ত করতে পেরেছেন। সি, সি++, রিকিভ, ফোরস্ট্রোন, কোবল, পাসকাল, জাভাসহ প্রবেশনাল হ্যাকিং ল্যাঙ্গুয়েজ পাইথনেও তিনি মাস্টার।
সারা রাত জেগে তিনি প্রোগ্রামিং নিয়ে ঘেঁটেছেন। সবশেষে তৈরি করেছেন এমন এক প্রোগ্রাম, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে ভাইরাস, যা দিয়ে ব্লু হোয়েলের সিক্রেট প্রোগ্রাম ধ্বংস করে ফেলা যাবে। দেড় শ বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ও ডার্ক ওয়েবের এই গেমটি।
মাত্র একটাই খবর নির্দিষ্ট করে জানা গেছে ব্লু হোয়েল সম্পর্কে, এই গেমটার প্রোগ্রাম রিকিভ ভাষায় লেখা। আয়ানও এই ‘রিকিভ’ ভাষাতেই লিখেছেন প্রোগ্রামটি। টিচার আয়ানকে বললেন, নিজের আইডিয়াটা সবার সামনে পেশ করতে। ১০ টেরাবিটের পেনড্রাইভ হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠে গেলেন আয়ান। বলতে লাগলেন নিজের আইডিয়ার কথা।
কিন্তু আইডিয়া শুনে সবাই হাসে। রিহান স্যারও কৌতুকবোধ করলেন। অবশ্য আশাবাদীও হলেন। তিনি রিহানকে বললেন তাঁর পেনড্রাইভটা দিতে। তিনি নিজের পামটপে সেই প্রোগ্রাম কপি করে নিলেন। সাড়ে আট টেরাবিটের ভাইরাস। সিদ্ধান্ত নিলেন যে উচ্চতর কাউন্সিলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবেন। ভাইরাসটির নাম দিলেন গ্রেট হোয়াইট।
রাত আটটা। কাউন্সিল ব্লু হোয়েল মিটিংয়ে সবাই উপস্থিত। যাঁরা ব্লু হোয়েল ধ্বংসকরণ টিমের উঁচু পদের সদস্য। রিহান স্যারের আইডিয়াটা শুনে সবাই বিস্ময়ে থ খেয়ে গেলেন। একজন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট তৈরি করেছেন ব্লু হোয়েল ধ্বংসকারী ভাইরাস। আলোচনা হলো, এ ভাইরাসটি আজই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে আপলোড করতে হবে। চেষ্টা করতে তো আর ক্ষতি নেই। মিটিং শেষ।
গোলটেবিলের এক মাথায় বসে আছেন শুধু রিহান স্যার। অন্যদিকে কর্নেল গ্রাবস। এইমাত্র আপলোড দেওয়া হয়েছে গ্রেট হোয়াইট। কর্নেল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি এই আপলোডিংকে বলবেন, ‘Operation Great White’। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে আপলোডের পরে গোপনে গোপনে ডার্কওয়েবেও আপলোড দেওয়া হলো। রিহান স্যার এবং গ্রাবস আপলোড দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছেন কখন যে।
***
আজ ২১৬৭ সালের ১৩ মার্চ। পৃথিবীবাসী এই দিনটাকে স্মরণ করবে ‘গ্রেট হোয়াইট’ দিবস হিসেবে। কেননা সম্পূর্ণ পৃথিবীর নেটওয়ার্ক থেকেই ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম সরিয়ে ফেলা গেছে। সবকিছু সম্ভব হয়েছে শুধু গ্রেট ওয়াইট ভাইরাসের কারণে। লাখ লাখ মানুষ উঁচু দালান থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবনকে শেষ করার পর শেষ পর্যন্ত এই সাইবার দুর্যোগকে শেষ করা সম্ভব হলো। এই সাফল্যের মূলে রয়েছে একজন মানুষ। তাঁর নাম ‘তাশবিক আয়ান’—পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ প্রোগ্রামার।
লেখক: শিক্ষার্থী, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল