ডাকটিকিটে কল্পবিজ্ঞান

আজ আন্তর্জাতিক কল্পবিজ্ঞান দিবস। পাঠক চাহিদার অন্যতম শীর্ষে এখন সাহিত্যের এই জনরা। কল্পবিজ্ঞান লেখকেরাও আজ সমান সম্মানিত সারা বিশ্বে। কল্পবিজ্ঞান লেখক আর তাঁদের সৃষ্টিকর্ম বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময় ডাকটিকিটে ঠাই পেয়েছে। সে সব নিয়েই এই আয়োজন।

কবি ও সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পো ১৮৩৫ সালে ‘দ্য আনপ্যারালাল অ্যাডভেঞ্চার অব ওয়ান হ্যান্স ফাল’ নামে একটা ছোটগল্প লেখেন। সেই গল্পে চন্দ্রভ্রমণের কাহিনি উঠে এসেছে। বিশ্বখ্যাত এই সাহিত্যিক বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছেন। ১৯৪৯ সালে পোর ছবি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। আবার ২০০৯ সালে পোর দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে আরেকটি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি, মোনাকো, সান মেরিনো ইত্যাদি দেশের ডাকটিকিটেও পোর ছবি স্থান পেয়েছে।

তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে জুল ভার্ন তাঁর সাহিত্যকর্মে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যের সুচারু ব্যবহার করেছেন। জীবদ্দশায় তাঁর অনেক কাহিনি নিছক সায়েন্স ফ্যান্টাসি বলে মনে হলেও পরে তা সায়েন্স ফিকশনের মর্যাদা পেয়েছে। অনেকেই ভার্নকে আধুনিক সায়েন্স ফিকশনের জনক বলে মনে করেন। ফাইভ উইকস ইন আ ব্যালুন, জার্নি টু দ্য সেন্টার অব আর্থ, জার্নি টু দ্য মুন, টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি ইত্যাদি তাঁর অনন্য সৃষ্টি। তাঁর জন্মস্থান ফ্রান্স ১৯৫৫ সালে জুল ভার্নকে নিয়ে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এ ছাড়া মোনাকো, পানামা, গ্যাবন, মালি, কঙ্গো, ক্যামেরুন, নিকারাগুয়া, আপার ভোল্টা, গিনি বিসাউ, গ্রেনাডা, কুক আইল্যান্ড, জিবুতি, টোগো, ভেনেজুয়েলাসহ অজস্র দেশ জুল ভার্নকে নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।

সায়েন্স ফিকশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক হচ্ছেন এইচ জি ওয়েলস। তাঁকে সায়েন্স ফিকশনের শেক্‌সপিয়ারও বলা হয়। তাঁর লেখা দ্য টাইম মেশিন, দ্য আইল্যান্ড অব ডক্টর মরো, দ্য ইনভিজিবল ম্যান ইত্যাদি কল্পবিজ্ঞানগুলো অমর। তিনি ভিনগ্রহের আগন্তুক, বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অদৃশ্য তত্ত্ব, সময় ভ্রমণ ইত্যাদিকে মূল বিষয়বস্তু করে লিখেছেন। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্য তাঁর চারটি উপন্যাস নিয়ে চারটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এ ছাড়া ইসরায়েল, সান মেরিনো, জিবুতি, বেনিন থেকেও এইচ জি ওয়েলসের ওপর ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে।

এডগার রাইস বারো সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাঁর ‘টারজান’ গল্পের জন্য। তবে তিনি ১৯১২ সালে লিখেছিলেন আ প্রিন্সেস অব মার্স। এ ছাড়া তিনি আরও অনেক সায়েন্স ফিকশন আর ফ্যান্টাসি লিখেছেন। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ছবি দিয়ে একটি ফরএভার ডাকটিকিট প্রকাশ করে, যদিও ডাকটিকিটটিতে ‘টারজান’-এর ছবিটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশই এডগার রাইস বারো, বিশেষ করে ‘টারজান’-এর ওপর বিভিন্ন ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।

১৯৪২ সালে ‘ফাউন্ডেশন সিরিজ’ শুরু করে মার্কিন লেখক আইজ্যাক আসিমভ সায়েন্স ফিকশনের জগতে এক নতুন ধারার জন্ম দেন। শুধু এই সিরিজ নয়, তাঁর রোবটের ওপর লেখা ছোটগল্পগুলোও অনবদ্য। সবচেয়ে মজার কথা হলো, সাহিত্যের এমন কোনো ধারা নেই, যেটিতে আসিমভের কোনো লেখা নেই। গিনি, ইসরায়েল, স্যান ম্যারিনো, জিবুতি থেকে আসিমভকে নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে।

আর্থার সি ক্লার্কের বিভিন্ন পরিচয় থাকলেও তিনি সর্বাধিক পরিচিত তাঁর সায়েন্স ফিকশনের জন্য। ১৯৪৬ সালে ‘লুপহোল’ নামে একটা গল্প দিয়ে তাঁর সায়েন্স ফিকশনের যাত্রা শুরু হয়। তবে তিনি অমর হয়ে আছেন ২০০১: আ স্পেস অডিসির জন্য। এই কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রকে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী চলচ্চিত্র হিসেবে মনে করা হয়। ২০০০ সালে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর শেষ জীবন শ্রীলঙ্কায় কেটেছে। আর ১৯৯৯ সালের টেলিকমিউনিকেশনের ডাকটিকিটে শ্রীলঙ্কা আর্থার সি ক্লার্ককেই বেছে নিয়েছিল। এ ছাড়া গিনি বিসাউ, পালাউ, জিবুতি, মালি থেকেও তাঁকে নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে।

এর বাইরে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র উরসুলা কে লি গুইনের ওপরে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে, যেখানে উরসুলার ছবির সঙ্গে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস দ্য লেফট হ্যান্ড অব ডার্কনেস-এর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

লেখক: ডাকটিকেট সংগ্রাহক