আগন্তুক

অলংকরণমাসুক হেলাল

পাঠকেরাও দুর্দান্ত সব গল্প লিখেছেন। শত শত গল্প পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তার দপ্তরের ‘বিজ্ঞান কল্পগল্প প্রতিযোগিতা’য়। এর মধ্য থেকে পাঁচটি সেরা গল্প বাছাইয়ের কাজটিকে কঠিন করে তোলার কৃতিত্ব পুরোটাই তরুণ লেখকদের। ঘোষণা অনুযায়ী, অন্য রকম বিজ্ঞান বাক্সের সৌজন্যে প্রথম সেরা লেখক চার হাজার, দ্বিতীয় সেরা তিন হাজার এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সেরা লেখক প্রত্যেকে পাবেন এক হাজার টাকার বই। সেরা তিন লেখকের গল্প এ সংখ্যায় ছাপানো হলো। বাকি গল্পগুলোও পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ছাপানো হবে।

রাসেল বিকেলের দিকে একটু হাঁটতে বেরিয়েছে। কখন সে যে জঙ্গলের কাছে চলে এসেছে, খেয়ালই করেনি। হঠাৎ সে খেয়াল করে, কোনো পাখি ডাকছে না জঙ্গলের এ দিকটাতে। গাছের পাতাগুলোও কেমন হলুদ হয়ে গিয়েছে। চোখ নামাতেই সে এক প্রকাণ্ড গর্ত দেখতে পায় মাটিতে। রাসেলের জানামতে, জঙ্গলের এই দিকটাতে কোনো গর্ত ছিল না। আজ হঠাৎ এখানে গর্ত কেন?

একটু এগোতেই রাসেল ঝিঁঝি পোকার ডাকের মতো কিন্তু তীব্র এক শব্দ শুনতে পায়। কৌতূহল চরমে ওঠে ওর। ঝিঁঝি পোকার ডাক অনুসরণ করে এগোতে থাকল। শব্দটা ক্রমেই বাড়ছে।

হঠাৎ কিছু একটা দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। একজন মানুষ। বসে আছে। মানুষটা অদ্ভুত। মুখটা একদম শিশুর মতো। মুখভর্তি ধবধবে সাদা দাড়ি। কিন্তু কোনো মুখচ্ছিদ্র নেই। তার তার হাত তিনটা। রাসেলকে দেখে লোকটার নাক সামান্য নড়ে ওঠে। নাখের ফুটো থেকে ভাঙা ভাঙা বাংলা উচ্চারণে শব্দ আসে, ‘আমাকে একটু কপার দিতে পারো?’

রাসেল কিছু বোঝে না। হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। আবার নড়ে ওঠে লোকটার নাক। বলে ওঠে, ‘তোমার রিস্ট ওয়াচটা দেবে? আমি একটু কপার নেব।’

রাসেল এবার সত্যিই খুব ভয় পেয়ে যায়। সে রোবটের মতো তার রিস্ট ওয়াচটা খুলে দেয় লোকটার হাতে। লোকটা তার পকেট থেকে হাতুড়ির মতো ছোট একটা জিনিস বের কের সেটা দিয়ে ভেঙে ফেলে ঘড়িটা। পকেট থেকে নীল রঙের তরলভর্তি একটা বোতল বের করে। ভাঙা ঘড়িটা ওই তরলে মেশায়। নাকের ফুটো দিয়ে সেই তরল ঢুকিয়ে দেয় পেটের ভেতর।

লোকটা যেন শক্তি ফিরে পেয়েছে। ধীরে উঠে দাঁড়ায়। ওমা, পা-ও তিনটি! হঠাৎ রাসেলের মনে হয়, তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। মাটিতে একটা ফাটল তৈরি হয়েছে। দ্রুত চওড়া হচ্ছে ফাটলটা। সেই ফাটল থেকে চাকতির মতো কিছু একটা মাটি ঠেলে ওপরে উঠে আসে।

হঠাৎ কানো এক অজানা শক্তি লোকটিকে চাকতির মধ্যে টেনে নেয় চোখের পলকে। রাসেল আবার সেই ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পায়। ক্রমশ বাড়তে থাকে শব্দটা। সঙ্গে তীব্র আলোর ঝলকানি। রাসেল আর সহ্য করতে পারে। চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে বসে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর চোখ খোলে রাসেল। অদ্ভুত সেই লোকটা উধাও! চাকতিটাও গায়েব। মাটিতে পড়ে আছে শুধু তার ঘড়িটা।