খুদে সায়েন্স ফিকশন

বিজ্ঞানের সঙ্গে কল্পনার মিশেলে তৈরি হয় প্রতিটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। বিজ্ঞানের কমতি থাকলেও আনন্দের ঘাটতি কোনোভাবেই কাম্য নয় এই ঘরানার গল্পগুলোতে।

এই সংখ্যায় বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য রইল সাতটি ছোট্ট সায়েন্স ফিকশন। গল্পগুলো ফিফটি ওয়ার্ড স্টোরিজ, ডেইলি সায়েন্স ফিকশন, রাইটপপ আর নিজের মগজ অবলম্বনে লিখেছেন তাহমিদ উল ইসলাম।

এক

ছায়াপথের ঠিক মাঝখানে একটি নক্ষত্রের কাছে ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি প্রাণীগুলো ডিম ফুটে বেরোল। ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রায় ডানা মেলল ওরা। চারদিকে তাকাল খাবারের জন্য:

প্রথম গ্রহটি খুব ছোট। আর দ্বিতীয়টি একদম শুকনো।

কিন্তু তৃতীয়টা...

একদম পারফেক্ট!

দুই

পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় দেখলাম বড় বড় করে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে:

সুখবর! সুখবর!! সুখবর!!!

আমরা প্রোটিন থেকে এমন বস্তু তৈরি করছি, যার স্বাদ একদম মাংসের মতো সুস্বাদু আর চটকদার! খেয়ে জিবে স্বাদ লেগে থাকবে বহুদিন। আর এর দামও অতি অল্প, মাত্র দুই মার্ক।

আর আপনাকেও হত্যা করতে হবে না নিরীহ প্রাণীগুলোকে।

কিনুন আমাদের তৈরি আর্টিফিশিয়াল মাংস। বন্ধ করুন মানুষ হত্যা।

তিন

জীবনে প্রথমবারের মতো গাছ দেখলাম। কী সুন্দর! ছবিতে দেখা গাছের চেয়েও!

জাদুঘরের গাইড বলল, একসময় পুরো পৃথিবী পুরো গাছে ঢাকা ছিল।

আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না! পুরো পৃথিবী গাছে ঢাকা ছিল, কী অদ্ভুত কথা!

আমি টিকিট কাটলাম সামনের বছরের জন্য। একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখব। আশা করি, সেটা একটা খরগোশ হবে।

চার

নিজের তৈরি টাইম মেশিনে করে ভবিষ্যতে এল শাফি।

নতুন একটি শহর। উন্নত। তার দেখা শহরের ধারণার চেয়েও ভিন্ন নানান দিক থেকেই। শহরে কেউ কোনো কথা বলছে না, কাজ করছে বা নিজ মনে হাঁটাহাঁটি করছে। হঠাৎ কী মনে করে যেন একটা গানের আসরে ঢুকল সে।

কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখে, এ তো বিমূর্ত চিত্রকলার প্রদর্শনী।

ভেতরে দাঁড়ানো একজন মানুষকে সে জিজ্ঞেস করল, এ কেমন গানের আসর? কোনো শব্দ নেই কিছু না!

লোকটা কোনো কথা বলল না, হঠাৎই কেমন যেন একটা গমগমে আওয়াজ বেরিয়ে এল রুমের ভেতর থেকে, আরে ভাই, আপনি কোন দুনিয়ায় পড়ে আছেন? যে ছবিগুলো দেখছেন, সেগুলোই তো মিউজিকের তরঙ্গ। যেটা ভালো লাগে স্পর্শ করেন। দেখবেন সংগীতের মূর্ছনায় ভেসে যাচ্ছেন! আহা!

পাঁচ

‘হাইপারস্পেসে যেকোনো নভোযান আলোর চাইতে দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে এবং এখানে পদার্থবিজ্ঞানের স্বাভাবিক সূত্রগুলো কাজ করে না।’, বিজ্ঞান একাডেমির গবেষণা প্রধান মি বলেন। ‘এই নভোযানটি হাইপারস্পেসে যেতে সক্ষম।’

‘তাহলে তো দারুণ হয়।’, বিজ্ঞান একাডেমির পরিচালক কিরি জানান। ‘আমরা হাইপারস্পেসে একটা ডাইভ দিয়ে আসতেই পারি!’

‘দেওয়া যায়।’, মি বলেন। ‘তবে সেখানে যেহেতু পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করে না, তাই ঠিক কী হবে, নিশ্চিত বলতে পারছি না। অনেক অদ্ভুত ঘটনাও ঘটতে পারে।’

‘এত ভয়ের কী আছে?’, কিরি হেসে বলেন। ‘নতুন কিছু আবিষ্কার করতে গেলে রিস্ক তো নিতেই হবে। এই যুগান্তকারী অভিযানে আমি আর আপনিও হব অভিযাত্রী।’

পরদিন নভোযানটি হাইপারস্পেসের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল। ২৩ ঘণ্টা পর যখন সেটি হাইপারস্পেসে প্রবেশ করল, ঠিক তখনই একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। সবার বুদ্ধিমত্তা একদম নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের মতো হয়ে গেল। নভোযানের যাত্রীরা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শুরু করল এবং একটা সময় সবাই মরে গেল। বিশেষ করে মি তো একদম কিরির গলায় কামড় বসিয়েই তাঁকে মেরে ফেললেন। কিরিও মিয়ের মাথায় ধাতব যন্ত্রটি দিয়ে আঘাত করতে পিছপা হননি যদিও।

ছয়

আলফা শতকের একটি লাইফস্টাইল–বিষয়ক ম্যাগাজিনের ফিচার:

যেভাবে আপনার সন্তানের সঙ্গে ছবি তুলবেন

১. সন্তান এবং আপনার মধ্যে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করুন।

২. সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন। 

৩. সন্তানের জন্য চকলেট, টফি বা একটি খেলনা আনতে পারেন বাইরে থেকে।

৪. আপনি যা এনেছেন, তা ক্যামেরার সামনে ঝুলিয়ে রাখবেন।

৫. সন্তানের জানা ভাষার শব্দকে ভুলভাল উচ্চারণ করুন বা অন্যান্য শব্দ করুন। এর ফলে আপনি তার বিভিন্ন ধরনের মুখভঙ্গি পাবেন।

৬. যদি আপনার সন্তানের বহিঃকঙ্কাল খুব অন্ধকার দেখায়, তাহলে ভালোভাবে এক্সপোজ করুন।

৭. ধৈর্য ধরুন। প্রত্যেকটি শিশুই আলাদা। কেউ কেউ হিংস্রতাও প্রদর্শন করে।

৮. নখের আঁচড় লাগতে পারে, এমন কোনো পোশাক পরবেন না।

৯. সাবধানে আপনার সন্তানকে তার জন্য আনা উপহারটি দিন।

১০. অনুশীলন করুন। অনুশীলনই পারফেকশন আনতে পারে।

১১. আপনার ক্যামেরা সম্বন্ধে ঠিকঠাক জেনে নিন।

সাত

‘ভাবছেন আপনাদের আক্রমণ করতে এসেছি?’, এলিয়েনটা বলল। ‘না। এটা ভুল ভাবনা।’

‘তাহলে?’, পৃথিবীর বিজ্ঞান অভিযানের প্রধান রিরি বলেন। ‘তাহলে কী করতে এই গ্রহে এত উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আপনাদের আগমন?’

‘আপনি খামোখা ভয় পাচ্ছেন। আমরা আপনাদের আক্রমণ করতে আসিনি।’, এলিয়েনটা জানায়। ‘আমরা বিজ্ঞান–প্রযুক্তি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইতিমধ্যেই অনেক উন্নত। কিন্তু শিল্পকলা জিনিসটা না আমাদের গ্রহে তেমন একটা বিকাশ লাভ করেনি। কাজেই আমরা এসেছি আপনাদের কাছে কবিতা লেখা শিখতে; আপনারা নাকি ভালো ছবিও আঁকেন? শেখাবেন নাকি আমাদেরও?’