৫০ হাজার বছর পর ফিরল ধূমকেতু, দেখা যাবে খালি চোখে

প্রায় ৫০ হাজার বছর পর পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যাবে একটি ধূমকেতু। ধূমকেতুটির নাম সি/২০২২ ই৩ (C/2022 E3)। ১ ফেব্রুয়ারি, বুধবার খালি চোখে এটা দেখা যাবে রাতের আকাশে। তবে খালি চোখে দেখার জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকা বাধ্যতামূলক।

ফ্রান্সের প্যারিস অবজারভেটরির জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিকোলাস বিভার বলেন, ‘পূর্ণিমা থাকলে ধূমকেতুটি দেখা কঠিন। তবে বুধবার যেহেতু পূর্ণিমা হচ্ছে না তাই ধূমকেতুটি খালি চোখে দেখার সুযোগ আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জুইকি ট্রানসিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি ২০২২ সালের মার্চে ধূমকেতুটির সন্ধান পায়। এ সময় সূর্যের থেকে ৬৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করছিল এটি। তখনই গবেষকেরা এ ধূমকেতুর নাম দেন সি/২০২২ ই৩।

১২ জানুয়ারি ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল। এ সময় সূর্য থেকে এর দূরত্ব ছিল ৪৮২ মিলিয়ন কিলোমিটার। এরপর থেকে গবেষকেরা এই ধূমকেতুর খোঁজখবর রাখা শুরু করেন। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এখন রাতের আকাশে এবং ভোর রাতের দিকে বাইনোকুলারের সাহায্যে ধূমকেতুটি দেখা যায়। তবে ১ ফেব্রুয়ারি ধূমকেতুটি যেহেতু পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে, তাই আরও স্পষ্ট দেখা যাবে এটি।

৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতার মান ছিল প্লাস ৪.৬। অর্থাৎ, খালি চোখে দেখা যায় এমন সবচেয়ে দূর্বল বস্তুর চেয়ে এটা কিছুটা উজ্জ্বল। পৃথিবীর কাছাকাছি এলে ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতা আরও বাড়তে পারে।

বুধবার উত্তর আকাশে ধ্রুবতারার খুব কাছেই দেখা যাবে এ ধূমকেতুটি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ওমর ফারুক জানান, ঢাকায় বসে খালি চোখে ধূমকেতুটি দেখার সম্ভাবনা কম। তবে অন্ধকার রাতে খোলা মাঠে বা ছাদে গেলে দেখা যেতেও পারে। এজন্য প্রথমে ২০ থেকে ৩০ মিনিট চোখকে অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। মোটামুটি মানের বাইনোকুলার থাকলে ধূমকেতুটি দেখা যাবে আরও ভালোভাবে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ধূমকেতুটি ওর্ট ক্লাউড নামের একটি এলাকা থেকে এসেছে। ওর্ট ক্লাউড মূলত সৌরজগতের চারপাশে বিশাল গোলক, যেখানে রহস্যময় বরফের বস্তুদের অবস্থান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে, সর্বশেষ এ ধূমকেতু যখন পৃথিবীকে অতিক্রম করেছিল, তখন পৃথিবীতে নিয়ানডারথলদের বিচরণ ছিল।

সি/২০২২ ই৩ ধূমকেতু
দুটি কার্বন পরমাণু একসঙ্গে আবদ্ধ হয়ে একটি সাধারণ অণু গঠন করাকে বলে ডায়াটোমিক কার্বন। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এই অণুকে ভেঙ্গে দিলে এটি সবুজ আভা নির্গত করে।

জ্যোতিঃপদার্থবিদ বিভার বলেন, ধূমকেতুটি বরফ ও ধূলিকণায় গঠিত। এটি পেছনে সবুজ আভা ছেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, ধূমকেতুটির ব্যাস প্রায় এক কিলোমিটার হতে পারে। এর আগে, ২০২০ সালে খালি চোখে দেখা যাওয়া নিউওয়াইজ নামের ধূমকেতুটির চেয়ে এটি অনেক ছোট। এ ছাড়া ১৯৯৭ সালে হেল-বপ নামের যে ধূমকেতুটি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়েছিল, সেটির ব্যাস ছিল ৬০ কিলোমিটার। তবে এবারের সি/২০২২ ই৩ ধূমকেতুটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি পৃথিবীর অনেক কাছ দিয়ে যাবে। তাই প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিতে পারে এটি।

কিন্তু ধূমকেতুটি সবুজ আভা ছেড়ে যায় কেন? আসলে ধূমকেতুটি মোটেও সবুজ নয়। কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এর মাথার অংশটি সবুজাভ দেখায়। এটি সম্ভবত ডায়াটোমিক কার্বনের (C2) কারণে হয়। দুটি কার্বন পরমাণু একসঙ্গে আবদ্ধ হয়ে একটি সাধারণ অণু গঠন করাকে বলে ডায়াটোমিক কার্বন। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এই অণুকে ভেঙ্গে দিলে এটি সবুজ আভা নির্গত করে। বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয় সেই আভা। এ কারণে ধূমকেতুটি সবুজ দেখায়। 

নিকোলাস বিভার বলেন, ‘এই ধূমকেতু এবার পৃথিবীকে অতিক্রমের পর পুরোপুরি সৌরজগতের বাইরে চলে যাবে। এর গঠন নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।’  

৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির দিকে ধূমকেতুটি ক্যাপেলা নক্ষত্রের দিকে যাবে। সেখান থেকে প্রবেশ করবে অরিগা নক্ষত্রমণ্ডলে। পৃথিবী থেকে আবার ৭৪০ হাজার বছর পর দেখা যাবে এই ধূমকেতুটি।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক থমাস প্রিন্স বলেন, ‘ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছে আসায় দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এটির গঠন জানা সহজ হবে। এ ছাড়া এটি আমাদের সৌরজগৎ ও এর বাইরের গ্রহ সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারে।’

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ডট কম