গোল্ডিলকস গ্রহ

গোল্ডিলকসের নামে একটি জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত আছে। এক উচ্ছল স্বর্ণকেশী কিশোরী পথ হারিয়ে বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে একটি বাড়ি দেখতে পায়। কাউকে না পেয়ে সে ওই বাড়িটিতে ঢুকে পড়ে। সে দেখে সেখানে সব জিনিসই তিনটি তিনটি করে সাজানো। সেখানে তিনটি চেয়ার আছে (যার একটি খুব শক্ত, একটি খুব নরম, আরেকটি একদম ঠিক ঠিক), তিনটি বিছানা আছে (যার একটি খুব শক্ত, একটি খুব নরম, একটি একদম ঠিক আরামের বিছানা) এবং তিন রকম খাবার আছে (একটি খুব গরম, একটি খুব ঠান্ডা, একটি একদম ঠিক)। গোল্ডিলকস ঠিক সেই চেয়ারটিতে বসে, যেটি একদম ঠিক আরামদায়ক; সেই খাবারটি খায়, যা ঠিক নাতিশীতোষ্ণ; সেই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে, যা একদম ঠিক মনের মতো। ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে গেলে সে উঠে দেখে তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে একটি দশাসই বাবা-ভালুক, মিষ্টি চোখে তাকিয়ে আছে একজন মাঝারি মা ভালুক এবং বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে একটি বাচ্চা-ভালুক। এই দেখে গোল্ডিলকস পড়িমরি করে ছুটে পালায়।

‘সবকিছু ঠিকঠাক’ পাওয়ার ব্যাপারটা সেই থেকে ‘গোল্ডিলকস শর্ত’ বলে চালু হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য এই গোল্ডিলকসের ব্যাপারটা আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার কারণ পৃথিবীতে আমাদের বসবাসের ব্যাপারটা অনেকগুলো ঠিকঠিক ঘটনার সময়োপযোগী সমাপতন না ঘটলে সম্ভব ছিল না। অবশ্য আমরা সেটা বলতেই পারি। কারণ, তেমনটি না হলে পৃথিবীতে এ কথা বলার মতো কেউ থাকতই না। আমরা পৃথিবীতে থাকতে পারছি কেননা এখানকার পরিবেশ ও অন্যান্য ভৌত শর্তাদি আমাদের থাকার জন্য খুব উপযোগী। সত্যি বলতে কি, পৃথিবীর জল-ডাঙা-আকাশ আমাদের জন্য এমন এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে যে, তা খুব সূক্ষ্ম কিছু ব্যালান্সের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া এর ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া এবং গ্রহগত পরিবেশ মোটের ওপর প্রাণসহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এমনটি না হলে প্রাণের উদ্ভব হলেও সভ্যতার পত্তন হতে পারত কি না সন্দেহ। এমন সিদ্ধান্তের কারণ অন্যান্য বাহ্যগ্রহে এমন প্রাণসহায়ক উপাদানের সমাবেশ রয়েছে বলে মনে হলেও আমাদের নাক্ষত্রিক মহল্লায় উন্নত সত্তার খোঁজে কোনো সুনির্দিষ্ট খবর নেই। কাজেই অনুকূল শর্ত থাকাটাই শেষ কথা নয়। আরও কিছু বাধা আছে।

এমন কথাই বলা হয়েছে ‘রেয়ার আর্থ’ অনুকল্পে। নানাবিধ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক, মহাজাগতিক, ভূগাঠনিক, গ্রহগত পরিবেশ, প্রাণ ও ভূরাসায়নিক প্রপঞ্চ পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে এসেছেন, পৃথিবী এবং তাতে মানুষের সভ্যতা সৃষ্টি একটি অতি বিরল ঘটনা। তা যেন শ্রেষ্ঠ কবিতার মতো, যা বিতরিত হওয়ার জিনিস নয়। পৃথিবীর চিহ্নিত করে রাখার মতো অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

পৃথিবীর একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্বন ডাই-অক্সাইড-সিলিকেট চক্র চালু আছে; গ্রহটির ভর যথেষ্ট যাতে করে এটি একটি বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পেরেছে এবং এর অভ্যন্তরে টেকটোনিক সক্রিয়তা অক্ষুণ্ন আছে; এর জলবায়ু বরফাচ্ছাদিত পৃথিবী (স্নোবল) আর উষ্ণ পৃথিবীর (গ্রিনহাউস) মধ্যে দোলাচল করে; এর প্রাণজগতের ইতিহাসে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের মতো একটি ঘটনা ঘটেছে; পৃথিবী নামক গ্রহটির কক্ষীয় অবস্থা এবং সুস্থিতি; এর গ্রহগত প্রতিবেশ (চাঁদের মতো ভারী উপগ্রহ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের উপস্থিতি, বৃহস্পতির মতো গ্যাস-দানবের উপস্থিতির ফলে ধূমকেতুরা পৃথিবী থেকে দূরে থাকে); সৌর প্রতিবেশ (সূর্য কোনো তারাস্তবকের সদস্য নয়); সূর্য থেকে ঠিকঠিক দূরত্ব (প্রাণবান্ধব কক্ষপথ); বামন নক্ষত্রের পাশে জন্ম (সুদীর্ঘকাল প্রায়-সমান হারে নম্র-বিকিরণ লাভ); গ্রহটির বিশিষ্ট এবং নিজস্ব ভূজৈবরসায়ন (বায়োজিওকেমিস্ট্রি) এবং আন্তমিথোজীবিতা (এন্ডোসিমবায়োসিস) (যার ফল হলো নীল-সবুজ শৈবাল, বাতাবরণে অক্সিজেন বিপ্লব, একাধিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উপস্থিতি, যৌনতা) ইত্যাদি। এই প্রপঞ্চগুলোর একত্র সমাবেশ পৃথিবীকে অনন্য করে তুলেছে। এগুলোর অনুপস্থিতিতে সভ্যতার উদ্ভব সংশয়াকুল হতো। এখানেই পৃথিবীর অনন্যতা।

দুই

আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সূচনা গ্যালিলিওর (১৫৬৪-১৬৪২) হাত ধরে, তাঁর দুরবিনে চোখ রেখে, শুরু হয় ১৬১০ সালে। কিন্তু তার আগেই আধুনিক চিন্তাধারার বীজ রোপিত হয়। বলতে গেলে সেই বীজ রোপণের সালটা ১৫৪৩ অব্দ এবং কাজটা শুরু করেছিলেন প্রুশিয়ার পোলিশ বংশে জন্ম নেওয়া নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)। অন দ্য রেভল্যুশনস অব দ্য সেলেশ্চিয়াল স্ফিয়ার্স গ্রন্থে কোপার্নিকাস এক যুগান্তকারী ধারণা দেন। দীর্ঘদিন থেকে জানা ছিল পৃথিবী স্থির এবং সূর্যসহ অন্য সবকিছু একে ঘিরেই ঘুরছে। পৃথিবীকেন্দ্রিক এই ধারণা সুপ্রাচীন। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে এই ধারণার এক গাণিতিক মডেল দেন ক্লডিয়াস টলেমি (১০০-১৭০)। তাঁর পূর্বসূরিরা জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে যা কিছু জানতেন, তার এক সংশ্লেষণ টলেমি তাঁর আলমাজেস্ট গ্রন্থে উপস্থাপন করেন। তিনি এই পৃথিবীকেন্দ্রিক ধারণার একটি গাণিতিক মডেলও স্থাপন করেন। মনে রাখতে হবে, সেই সময়ে টেলিস্কোপ ছিল না। খালি চোখে মনোযোগী পর্যবেক্ষকেরা যা দেখেছেন, তারই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কাজেই তাঁদের খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু টলেমির বইটি একটানা চৌদ্দ শ বছর এই মডেলকে প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু টলেমির মডেলে সংশোধন প্রয়োজন ছিল। আরব বিশ্বের অনেক জ্যোতির্বিদই সেটার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। কিন্তু কোপার্নিকাস একটা চমত্কার সহজ গাণিতিক মডেল উপস্থাপনের মাধ্যমে দেখালেন, ‘পৃথিবী কেন্দ্রে আছে’ এটা না ভেবে সূর্যকে কেন্দ্রে ভেবে নিলে গ্রহ-তারাদের গতি ব্যাখ্যা করা সহজ হয়। এই সহজ কল্পনাটি একদিকে যেমন যুগান্ত সৃষ্টি করে, অপর দিকে তেমনি প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়।

কোপার্নিকাসের এই কাজটি শুধু ওখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটা একটা নীতিতে পর্যবসিত হয়—কোপার্নিকাসের নীতি। এই নীতি অনুযায়ী পৃথিবী কোনো কিছুর কেন্দ্রে নেই, এমনকি কোনো বিশেষ অবস্থানেও নেই, কোনো বিশেষ গুণের অধিকারীও নয়। এই মাঝারিত্ব বা মিডিওক্রিটি বিজ্ঞানে অনেক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। এই নীতির সম্প্রসারণ মহাবিশ্বের সার্থক মডেল সৃষ্টিতেও কাজে লাগে। মহাবিশ্বকে দিকনিরপেক্ষ ও সমস্বত্ব ধরে নেওয়া হয়। এভাবে ভাবা হয়—আমরা পৃথিবী থেকে গ্যালাক্সিকে যেভাবে দেখছি, গ্যালাক্সির অন্য জায়গা থেকেও গ্যালাক্সিকে প্রায় অনুরূপ দেখা যাবে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে মহাবিশ্বকে যেমন দেখায়, স্থানীয় পার্থক্য বাদ দিলে অন্য গ্যালাক্সি থেকেও মহাবিশ্বকে মোটের ওপর তেমনই দেখাবে। এটাই মহাজাগতিক নীতি বা কসমোলজিক্যাল প্রিন্সিপল। এই নীতির জন্যই আমরা পুরো মহাবিশ্ব নিয়ে মডেল তৈরি করতে পারি। কম্পিউটার সিমুলেশন করে ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারি। মহাবিশ্বের নানান প্যারামিটার গণনা করতে পারি। পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মেলাতে পারি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি করতে না পারলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ভাবনাচিন্তা পূর্ণাঙ্গ হতো না। আর এই কাজটির পেছেনে আছে ওই নীতি—আমরা মাঝারি; অন্যরা যেমন, আমরাও তেমন। অন্য যেকোনো জায়গায় গেলে আমাদের মতো গ্রহ ও পরিবেশ ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবে।

কিন্তু ইদানীংকালের পর্যবেক্ষণ এটা ঠিক সমর্থন করছে না। আমরা জেনেছি, সূর্য বামন নক্ষত্র হলেও গ্যালাক্সির অধিকাংশ নক্ষত্র সূর্যের তুলনায় ছোট। পাথুরে গ্রহ হলেই প্রাণবান্ধব হয় না। সৌরজগতের বাইরের গ্রহ মানেই প্রাণবান্ধব এবং পৃথিবীসদৃশ নয়। মূলত বেশির ভাগ গ্রহই ‘হট জুপিটার’। অর্থাৎ এসব গ্রহের বেশির ভাগেরই ভর বৃহস্পতি গ্রহের মতো বিশাল (বা তারও বেশি) এবং এদের অবস্থান তাদের নক্ষত্রের খুব কাছে (বুধ গ্রহ যেমন সূর্যের খুব কাছে)। আগে মনে করা হতো, নক্ষত্রের অত্যন্ত নিকটে খুব বড় গ্রহ থাকতে পারে না। কিন্তু সৌরজগতের বাইরের গ্রহদের ভর ও নক্ষত্র থেকে তাদের দূরত্ব পর্যালোচনা করে দেখা যায় ‘হট জুপিটার’ই সংখ্যায় বেশি।

তিন

মহাবিশ্বের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার একটু এদিক-ওদিক হলেই এখানে প্রাণই সৃষ্টি হতো না, বুদ্ধিমত্তা তো দূর কি বাত! বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যদি মহাজাগতিক ধ্রুবক শাসিত হয়, যদি এর স্থানিক জ্যামিতি সমতল হয়, যদি এর বস্তু-ঘনত্ব ২৫ শতাংশের কম হয়, তাহলে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এর পরিণতি উন্মুক্ত হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হতেই থাকবে। এই প্রসারণ ত্বরিত হারে হতে পারে। যেটা ১৯৯৮ সালের গবেষণায় একাধিক জ্যোতির্বিদ দেখিয়েছেন। এই ত্বরণ ধ্রুব থাকতে পারে, কমে যেতে পারে, বেড়ে যেতে পারে। কোনটা হবে, সেটা এখনই আমরা জানি না।

উন্মুক্ত এবং ত্বরিত প্রসারমাণ বিশ্বে পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল পর আর কোনো কাঠামোই থাকে না। গ্যালাক্সি বিলুপ্ত হয়ে যায়, সব তারা নিভে যায়, কৃষ্ণবিবরগুলো হকিং বিকিরণ দিয়ে উবে যায়। এ অবস্থায় মহাবিশ্বে থাকে শুধু কিছু ব্যাপ্ত গ্যাস আর মৌলিক কণার সমাহার। কোনো কাঠামো নেই, কোনো শক্তির উত্স নেই—শুধুই পরিব্যাপ্ত ও অত্যন্ত হালকা গ্যাস। এ অবস্থা গ্যাসের প্রচলিত গতিতত্ত্ব অনুযায়ী তাপীয় সুস্থিতির (থার্মাল ইকুইলিব্রিয়াম) সমতুল্য। তাপীয় সুস্থিতি বা ইকুইলিব্রিয়ামে থাকলে কোনো ব্যবস্থার আর কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়, কারণ ওই অবস্থায় সিস্টেমের এনট্রপি বা বিশৃঙ্খলার মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। ‘তাপীয় সুস্থিতির’ অন্য অর্থ ‘মৃতবৎ অবস্থা’। কোনো সিস্টেমের সব উপাংশ যদি পরস্পরের সঙ্গে একই তাপমাত্রায় থাকে, অর্থাৎ থার্মাল ইকুইলিব্রিয়ামে থাকে, তাহলে তাপের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই শক্তির রূপান্তরও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ভৌত পরিবর্তন থেমে যায়। একটি জীবন্ত কোষ সব সময়েই তার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। এই নন-ইকুইলিব্রিয়ামই প্রাণের লক্ষণ। কোষ যখন মারা যায়, তখন বাইরের সঙ্গে তার ইকুইলিব্রিয়াম ফিরে আসে।

অবশ্য এই ‘গোল্ডিলকসীয়’ চিন্তাটার একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল দিক আছে। আমরা ঠিক এই প্রেক্ষাপট থেকে, এই কোণ থেকে, এই সময়ে, এভাবে দেখছি বলেই আমরা বিরল হব? নাকি এটা আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও নির্ভর করে? আমরা যা সব টুল দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি, তারা কি ঝোঁকমুক্ত? আনবায়াসড? কতখানি ঝোঁকমুক্ত? যেমন দূরের নক্ষত্রের হেলদোল থেকে বাইরের গ্রহ নির্ণয়ের প্রক্রিয়ায় একটি ঝোঁক আছে। ওই গ্রহগুলো ভারী হলে তবেই তারা ওই নক্ষত্রে পর্যবেক্ষণযোগ্য হেলদোল সৃষ্টি করবে। এ কারণেই আমাদের খুঁজে পাওয়া বেশির ভাগ গ্রহই ভারী। একাধিক টেকনিকের ব্যবহার, যন্ত্রপাতির সূক্ষ্মতা বৃদ্ধি এই ঝোঁকমুক্তি ত্বরান্বিত করবে। আরেকটি জিনিস ভাবা দরকার। ধরা যাক, মিরপুর স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানের খেলা হচ্ছে। আমি ওই দিনই দেখতে গেলাম। কারণ আমার অমুক বন্ধুর ওই কাজটি ওই দিনই পড়ে গেলে, সে আমাকে ওই দিনই টিকিট সাধে। আমিও গেলাম, ঠিক ওই সময়ে ওই জায়গাতেই ছিলাম। আর তখনই সাকিব ছয় পেটাল, আর বলটা আমি ধরে ফেললাম! এখানে আমি ভাবতেই পারি আমি ‘স্পেশাল’। কিন্তু ওখানে ওই সময়ে কেউ না কেউ থাকতই। যে-ই থাকুক না কেন, সে ক্যাচটা ধরত এবং ভাবত সে ‘স্পেশাল’। কাজেই এই বিশেষত্ব কিন্তু কেবল ঘটনাচক্রের সমাপতন। এটাও একটা ভ্রান্তিমূলক বিশেষত্ব আরোপ করে।

এসব বিষয়ে সতর্ক থেকেও এটুকু বলা যায়, আমরা কোনো কিছুর কেন্দ্রে না থেকেও যথেষ্ট বিরল। অনন্যসাধারণ না হয়েও সাধারণের ঊর্ধ্বে—যা সুলভ নয়। বিশ্বজগতে আমাদের অবস্থান সবদিক দিয়েই একদম ঠিক। আমরা বিশেষ কিছু নই, আমরা কোনো কিছুর কেন্দ্রেও নেই। এমন গোল্ডিলকস সময়ে একটি গোল্ডিলকস জগৎ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে সবকিছুই একদম ঠিক ঠিক।