ডার্কম্যাটার থেকে ব্ল্যাকহোল

ডার্কম্যাটার থেকে কি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কীভাবে গঠিত হতে পারে? সম্প্রতি এমনই একটা আভাস দিচ্ছে নতুন এক তাত্ত্বিক গবেষণা। ইউনিভার্সিদাদ নাসিওনাল ডে লা প্লাটা এবং আইসিআরএনেটের গবেষক কার্লোস আর্গোয়েলস নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালনা করছেন একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন যে, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা উচ্চ ঘনত্বের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল সাধারণ পদার্থ থেকে নয়, বরং ডার্ক ম্যাটার থেকে গঠিত হতে পারে। তাদের এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব কীভাবে গঠিত হয়েছে সে সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সম্পর্কিত গবেষণাপত্রটি রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ঠিক কী উপায়ে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল গঠিত হয় তা গ্যালাক্সির বিবর্তন গবেষণার সবচেয়ে বড় একটি প্রশ্ন। বিজ্ঞানীরা মহা বিস্ফোরণের ৮০০ মিলিয়ন বছর পর তৈরি হওয়া সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করছেন, তবে কীভাবে ব্ল্যাকহোল এতো দ্রুত বিকাশিত হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি এখনও।

এদের স্ট্যান্ডার্ড গঠন মডেল, স্বাভাবিক ব্যারিওনিক পদার্থের সাথে জড়িত। পরমাণু মূলত নক্ষত্র, গ্রহ, এবং সকল দৃশ্যমান বস্তু গঠন করে। আর এসব বস্তু প্রচন্ড মহাকর্ষ বলের প্রভাবে নিজের গঠন ভেঙে তৈরি করে ব্ল্যাকহোল। এবং সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় সেই ব্ল্যাকহোলের ভর এবং আকার। যাইহোক, নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্থিতিশীল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ডার্ক ম্যাটারের সম্ভাব্য অস্তিত্ব অনুসন্ধান করছেন। ধারণা করছেন, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ডার্ক ম্যাটার প্রচন্ডভাবে ঘনিভূত হয়ে একটা সময় সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলে রূপান্তরিত হতে পারে।

তাদের এই মডেল অনুসারে প্রস্তাবিত অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুততম সময়ে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল গঠিত হতে পারে। এবং গ্যালাক্সি পূর্ণরূপে বিকাশিত হওয়ার আগেই এই মডেল অনুসারে অতিভরের ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে এর কেন্দ্রে। তবে, তার এই প্রস্তাবনাটি ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে বর্তমান উপলব্ধির সাথে মেলে না।

কার্লোস আর্গোয়েলস বলেন, এই নতুন গঠন পদ্ধতিটি নতুন এক তথ্য দিচ্ছে। নক্ষত্র তৈরি হবার আগেই অথবা এর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ছাড়াই কিভাবে প্রাচীন মহাবিশ্বে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল গঠিত হয়। এ বিষয়ে একটি প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নতুন এই তত্ত্বটি।

নতুন মডেলের আরও বলছে, বিপুল পরিমাণ ভর ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত কম ডার্ক ম্যাটারের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বামন গ্যালাক্সি এবং এদের আশেপাশের গ্যালাক্সিগুলোর ক্ষেত্রে এই কথাটি খাটে। গবেষকদের অভিমত, এই বামন ছায়াপথগুলোতে প্রত্যাশিত ব্ল্যাকহোলের বদলে ডার্কম্যাটার নিউক্লিয়াস তৈরি হতে পারে। এই ধরনের ডার্কম্যাটারের কেন্দ্র ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় চিহ্ন অনুকরণ করতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যাখ্যা করতে পারে ডার্ক ম্যাটার দিয়ে পরিবেষ্টিত ছায়াপথের ঘূর্ণন।

আর্গুয়েলেস আরও বলেন, এই মডেল দেখায় কীভাবে ডার্কম্যাটারের বলয় গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ঘনত্ব তৈরি করতে পারে। যেটা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের গঠন বুঝতে বেশ ভালোভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রথমবারের মত প্রমাণ করেছি, এই ধরনের ডার্ক ম্যাটারের বলয় সত্যিই একটি মহাজাগতিক কাঠামো গঠন করতে পারে। এবং একে স্থিতিশীল রাখতে পারে।

গবেষণা পত্রটির লেখকরা আশা করছেন, এ বিষয়ে অদূর ভবিষ্যতের অন্যান্য গবেষণা আমাদের মহাবিশ্বের প্রথম দিনগুলোতে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল গঠনের উপর আরো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করবে। একই সঙ্গে আমাদের মিল্কিওয়েসহ নিস্ক্রিয় গ্যালাক্সির কেন্দ্রগুলোতে ঘন ডার্কম্যাটারের কীভাবে কাজ করছে তা জানতে সাহায্য করবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ডেইলি