তারা কোথায়?

১৯৫০-এর মে মাস, লস আলামস। গ্রীষ্মের কোনো এক দুপুরে লাঞ্চ খেতে চলেছেন চার বিজ্ঞানী। এমিল কোনোপিনস্কি, এডওয়ার্ড টেলার, হার্বার্ট ইয়র্ক এবং এনরিকো ফার্মি । টেলার হলেন হাইড্রোজেন বোমার অন্যতম হোতা, আর ফার্মি নিউক্লীয় বিক্রিয়ার পুরোধা বিজ্ঞানী। ফার্মি সম্পর্কে কথিত আছে, যে নিউক্লীয় চুল্লিটি তাঁর অধীনে ছিল, কোনো মধ্য-সকালে তাতে নিউক্লিয়ার ফিশন এমন পর্যায়ে চলে যায়, প্রায় সংকট অবস্থা চলে আসার উপক্রম হয়। এমতাবস্থায় তিনি সবাইকে অপেক্ষা করতে বলে দুপুরের ভাতঘুম দিতে চলে যান! তো ওই দিনের লাঞ্চের স্থান ছিল বিজ্ঞানীদের প্রিয় ‘ফুলার লজ’ নামের রেস্টুরেন্ট। দুপুরের খাবার খেতে খেতে যা হয়, ধান ভানতে শিবের গীতের মতো তাঁরা ফ্লাইং সসার নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলেন। তার কারণ অবশ্য দিন কয়েক আগে ২০ মে নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনে অ্যালান ডানের একটি কার্টুন ছাপা হয়েছিল। বিষয় ছিল নিউইয়র্ক শহরের ডাস্টবিনগুলোর হাপিস হওয়া। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে ওই ট্র্যাশবিনগুলো সরিয়ে ফেলছে। ওই কার্টুনটিতে ব্যঙ্গ করা হয় যে নিশ্চয় আশপাশে কোনো ফ্লাইং সসার নেমে এসেছে এবং সেখান থেকে নেমে আসা ভিনগ্রহের আগন্তুকেরা ওই সব ডাস্টবিন নিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গেই ঠাট্টাচ্ছলে আলাপচারিতা এগোচ্ছিল। তা ছাড়া তখন অনেক জায়গা থেকেই, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, ফ্লাইং সসার দেখার গল্প শোনা যাচ্ছিল। কাজেই ফ্লাইং সসার নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ছিল না।

এ নিয়ে আলাপ করতে করতে আলোচনা এগোতে লাগল আলোর বেগে চলমান স্পেসশিপের সম্ভাবনা নিয়ে, পৃথিবীর মতো গ্রহপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে, সে রকম গ্রহে প্রাণের উদ্ভবের সম্ভাবনা, প্রাণের উদ্ভব হলে মানুষ আবির্ভাবের সম্ভাবনা, এরপর প্রযুক্তি-সভ্যতার উদ্ভবের সম্ভাবনা এবং সেই সভ্যতা কত দিন টিকে থাকতে পারে—এসব নিয়ে। আলোচকদের কারও কারও মনে আছে যে খেতে খেতে এসব সম্ভাবনা সম্পর্কে ফার্মি বেশ কিছু হিসাব মুখে মুখে কষে ফেলছিলেন। যেমন ফার্মি টেলারকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসলেন, ‘এডওয়ার্ড, তোমার কী মনে হয়? আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলে, এমন বস্তুর স্পষ্ট সাক্ষ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আগামী দশ বছরে কতটুকু?’

টেলার বলেছিলেন, ‘১০-৬।'

কিন্তু তাতে বাদ সাধলেন ফার্মি, বললেন, ‘এত কম? আমার তো মনে হয় দশ পার্সেন্ট।’

এই দশ পার্সেন্টের মধ্যেও আরেক লেজেন্ড লুকিয়ে আছে, যা পরে ‘ফার্মির অলৌকিকত্ব’ বলে প্রচার পেয়েছিল। শোনা যায়, তিনি বলেছিলেন, ২০ শতাংশ বা তার কম সম্ভাবনার কোনো ঘটনা ঘটে গেলেই সেটা মিরাকল বলে বিবেচিত হবে।

যাহোক, এ রকমই কথাবার্তা চলছিল আর মুখে মুখে হালকা হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে ফার্মি এবং অন্যরা এ সিদ্ধান্তে এলেন যে আলোচ্য সম্ভাবনাগুলো যেহেতু বেশ বড়ই, তাহলে সৌরজগৎ এত দিনে বহির্বিশ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীতে ছেয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কই, তেমন তো দেখা যায় না। তাই ফার্মি আলটপকাই প্রশ্ন করে বসেছিলেন, ‘কোথায় সবাই, হয়্যার ইজ এভরিবডি?’

ফার্মির এই প্রশ্নই বিখ্যাত হয়ে দেখা দেয় পরবর্তী গবেষকদের হাতে, যাঁরা বহির্বিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী খুঁজছিলেন এবং এই খোঁজকে যাঁরা নিরর্থক বলে মনে করেন, তাঁরাও এই কূটাভাসটি তোলেন, ‘তাহলে কই তারা?’

ফার্মির এই অসাধারণ প্রশ্নটির এখনকার সহজবোধ্য ভার্সন হচ্ছে, ‘তারা কোথায়, হয়্যার আর দে?’ এখনকার গবেষকদের কাছে এই হেঁয়ালির নাম ‘ফার্মি প্যারাডক্স’। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। ফার্মির মূল প্রশ্নে ছিল ‘এভরিবডি’, সেটা এখন বদলে হয়েছে ‘দে’। সম্ভবত এটা মার্কিন হেজিমনির বিকাশেরও একটি প্রতীক হতে পারে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তখনো ‘ওদের’ বা ‘আদারের’ ব্যাপারটা মার্কিন মগজে ঢোকেনি। কিন্তু সত্তরের দশকে বোধ করি ‘সবাই’-এর ইনক্লুসিভ ধারণা বদলে গিয়ে ‘ওদের’ মতো এক্সক্লুসিভ ধারণা বসত গেঁড়েছে। কারণ, ফার্মির কথিত ‘হয়্যার ইজ এভরিবডি’ বদলে গিয়ে ‘হয়্যার আর দে’ হয়েছে কার্ল সেগান (১৯৬৩), সেগান ও শ্‌ক্লোভস্কি (১৯৬৬), অলিভার ও বিলিংহাম (১৯৭১), ড্রেক ও সোবেলের (১৯৯২) হাতে। আমরা আর ওরা, ‘আদারনেস’ বা ‘অপর’—এই ব্যাপারটি সম্ভবত গত ষাট বছরে মার্কিন হেজিমনির একটা অঙ্গ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীদের একটা আটপৌরে আলোচনা থেকে সংস্কৃতির বিবর্তনেরও একটা হদিস পাওয়া গেল।

যাহোক, ফার্মির এই কূটাভাস জ্যোতির্বিদদের একাংশের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। কেননা এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর ছিল না কোনো।

আমাদের এই ছায়াপথে যদি ২০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন তারা থাকে, তাহলে সূর্যের মতো একটি মাঝারি সাইজের তারাকে ঘিরে ঘূর্ণ্যমান গ্রহমণ্ডলী থাকার কি কোনো সম্ভাবনাই নেই? সে রকম উপযুক্ত গ্রহমণ্ডলীতে পৃথিবীর মতো প্রাণোপযুক্ত পরিবেশধারী গ্রহের সংখ্যা কি এতই নগণ্য? ভাবতে কষ্ট হয় যে এই ছায়াপথের এই সুবিপুল নক্ষত্রপুঞ্জে আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক যে কোথাও না কোথাও প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, সে যত সূক্ষ্ম ও নগণ্যই হোক না কেন। আমরা যদি এ কথা বিবেচনা করি যে পৃথিবীর বয়স ৪৬০ কোটি বছর আর প্রাণের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফসিল ৩৮০ কোটি বছরের পুরোনো, তাহলে পৃথিবীতে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে অর্থাৎ উপযুক্ত রাসায়নিক পরিবেশ পেলে প্রাণ সৃষ্টি হতে বেশি বেগ পেতে হয় না। স্বভাবতই আশা করা যায়, ২০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন তারার কোথাও না কোথাও অনুকূল পরিবেশ পেয়ে প্রাণ বিকশিত হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য আরও একটু আশাবাদী। তাঁরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, শুধু প্রাথমিক এককোষী প্রাণীই নয়, আমাদের ছায়াপথে অবশ্যই অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী বাস করে। আর তাই ফার্মি কৌতুকচ্ছলে প্রশ্ন করেছেন, সংখ্যা যদি এতই বেশি হয়, সম্ভাবনা যদি অতই বেশি হয়, তাহলে বহির্বিশ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীরা কোথায়, তারা দেখা দিচ্ছে না কেন, রেডিও মেসেজই-বা দিচ্ছে না কেন?

১৯৫৩ সালে স্ট্যানলি মিলার একটি কাচের পাত্রে হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রোজেন, পানি-বাষ্প ইত্যাদি ভরে তার মধ্যে উপর্যুপরি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ চালনা করেন। মনে করা হয়, এই বিজারণ-আবহ বা বিজারক গ্যাসভর্তি পরিবেশ পৃথিবীর আদিম বাতাবরণের অনুরূপ ছিল। এক সপ্তাহ পর স্ট্যানলি দেখতে পেলেন যে এই গ্যাস-মিশ্রণের বিক্রিয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড ও অন্যান্য জৈব যৌগের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রাণের রাসায়নিক উত্পত্তিসংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। অনেকেই ভাবতে শুরু করলেন যে যদি বিভিন্ন উপযুক্ত গ্যাসের সংমিশ্রণ ঘটানো যায় এবং তার ওপর উপযুক্ত প্রভাবক (পানি-বাষ্প ও বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গের অতিবেগুনি রশ্মি) কাজ করে, তবে যথেষ্ট সময় পরে ওই পরিবেশে প্রাণের উপযোগী সব জটিল যৌগই তৈরি হতে পারে। তাহলে এই পরিবেশ যদি গ্রহান্তরের কোথাও থাকে, তাহলে সেখানে কি প্রাণের উদ্ভব হতে পারে না? নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডি ডিউভ বলছেন, ‘প্রায় চার বিলিয়ন বছর পূর্বের পৃথিবীর অনুরূপ ভৌত শর্ত অন্য কোথাও থাকলে সেখানেও প্রাণের উদ্ভব অবশ্যম্ভাবী।’ এমতাবস্থায় ফার্মির অনিবার্য প্রশ্ন, তারা সব গেল কোথায়?

কাছাকাছি সময়ে ১৯৫৯ সালে ফিলিপ মরিসন (১৯১৫-২০০৫) ও গিউসেপ্পি কোক্কোনি (১৯১৪-২০০৮) নেচার পত্রিকায় একটি বিখ্যাত পেপার প্রকাশ করেন। এই পেপারে তাঁরা বহির্বিশ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাব্য উপায় হিসেবে রেডিও যোগাযোগ স্থাপনের কথা বলেন। এই দুই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এবং তাঁর সহযোগীরা ১৯৬০ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পাহাড়ের কোলে অবস্থিত গ্রিন ব্যাঙ্ক ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রনমি অবজারভেটরির ৮৫ ফুট ব্যাসের ঢাউস বেতার দুরবিনটিকে দুটি নিকটবর্তী নক্ষত্রের দিকে লক্ষ্য করে রেডিও বার্তা শোনার চেষ্টা করেন। এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘ওজমা প্রজেক্ট’। সেই থেকে বহির্বিশ্বে প্রাণ সন্ধানের এসব কর্মকাণ্ডকে একত্রে ‘সার্চ ফর একস্ট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেনস’ বা ‘সেটি’ বলা হয়। দূরান্তের বুদ্ধিদীপ্ত সংকেত শুনতে রেডিও সবচেয়ে উপযোগী যন্ত্র। কারণ, একমাত্র রেডিও-তরঙ্গই লাখো আলোকবর্ষব্যাপী ব্যাপ্ত আন্তনাক্ষত্রিক স্থানের গ্যাস ও ধূলিকণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তার কারণ, এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বড় হয়, কিন্তু কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গের বিক্ষেপ বেশি হয়। নভোযান প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী সময়ে রেডিও-তরঙ্গ ছাড়াও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এসব নভোযান (ল্যান্ডার, অর্বিটার ইত্যাদি) অন্তত আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ ও উপাত্ত বিশ্লেষণে সক্ষম। কিন্তু এই মাধ্যমটি শুধুই আমাদের সৌরজগতেই সীমাবদ্ধ এবং আন্তনাক্ষত্রিক চরিত্র পেতে নভোযান প্রযুক্তির আরও সময় লাগবে। আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে না ফেলি, তাহলে সুদূর ভবিষ্যতে কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে এক শ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত তারকাপুঞ্জের গ্রহগুলোতে আমরা আবাস বানাতে পারব। তখন এই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ আরও অর্থপূর্ণ হবে।

রেডিও-অ্যানটেনা দিয়ে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের চ্যানেলে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। বিশেষ করে একুশ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে (১ দশমিক ৪২ গিগাহার্জ কম্পাঙ্ক) রেডিও-তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়, কারণ এটি হাইড্রোজেনের বর্ণালির নিঃসরণ রেখা নির্দেশ করে। যেহেতু হাইড্রোজেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যময় মৌল, তাই এই কম্পাঙ্কে বুদ্ধিমান বার্তা প্রেরণ করলে বহির্বিশ্বে ধীমান প্রাণী এই কম্পাঙ্কেই বেশি নজর দেবে বলে আশা করা হয় এবং তাহলে এই সংকেতে তাদের নজর কাড়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ফ্রিকোয়েন্সি ছাড়াও অন্যান্য কম্পাঙ্কেও রেডিও বার্তা প্রেরণ ও সন্ধান করা হয়। তবে এক থেকে তিন গিগাহার্জ ব্যান্ডটি বেশি পছন্দের।

বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করতে একটি রেডিও-অ্যানটেনার শক্তির প্রয়োজন হয়। যত দূরে আমি তথ্য পাঠাতে চাইব, তত বেশি শক্তি খরচ হবে আমার। বেতার-নিঃসরণের শক্তির ওপর নির্ভর করে প্রযুক্তিসভ্যতার একটা শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। এই শ্রেণীকরণের পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন রুশ জ্যোতির্বিদ নিকোলাই কার্দাশেভ এবং পরে কার্ল সেগান (১৯৩৪-১৯৯৬) একে পরিমার্জনা করেন। এই বিন্যাস অনুযায়ী একটি টাইপ-ওয়ান প্রযুক্তির সভ্যতার বুদ্ধিমান প্রাণী তার গ্রহের ওপর নিকটতম নক্ষত্র থেকে মোট যে পরিমাণ শক্তি এসে পড়ে, সেই পরিমাণ শক্তি রেডিও-অ্যানটেনা দিয়ে ট্রান্সমিট করতে সক্ষম। এ কথার অর্থ হলো এই সভ্যতা সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে, যাতে সে তার গ্রহের ওপর আপতিত পুরো শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখছে। পৃথিবীর জন্য ওই শক্তির পরিমাণ ১০১৬ ওয়াট। এটা বিপুল শক্তি, তুলনীয় পৃথিবীতে মোট বিদ্যুৎ উত্পাদনের পরিমাণ ১০১৩ ওয়াট। পরবর্তী টাইপ-টু সভ্যতা তার পুরো নক্ষত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই সে ১০২৭ ওয়াট পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করতে সক্ষম হবে। উচ্চতম শ্রেণির টাইপ-থ্রি সভ্যতা ১০৩৮ ওয়াট শক্তি বেতারে প্রেরণ করতে পারবে। কারণ, এই পর্যায়ের সভ্যতা তার পুরো গ্যালাক্সিকেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। এর মাঝামাঝি সভ্যতার মাপকাঠি লগারিদমের স্কেলে নির্ধারিত হয়।

আমাদের সদ্য-সাবেক শক্তিশালী আরেসিবো রেডিও-অ্যানটেনাটির (পুয়ের্তোরিকোতে অবস্থিত ১০০০ ফুট অ্যানটেনা) শক্তি আউটপুট বিবেচনা করে মানুষের সভ্যতার শ্রেণি শূন্য দশমিক সাত স্থির হয়েছে। যাই হোক, মনে করা হতো টাইপ-টু বা থ্রি-জাতীয় সুপার-সভ্যতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে না। তারা যদি নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চায়, সে ক্ষেত্রে আমরা অন্তত তাদের ‘হিট ডিসপোজাল’ বা অপচয়িত শক্তিকে অবলোহিত তরঙ্গে দেখতে পাব। কেউ যদি শক্তি ব্যবহার করে, তাহলে তাকে খরচ এবং অপচয় করতেই হবে। কাজেই তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী তাদের বর্জ্য শক্তির একটা চিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু জাপানি গবেষকেরা দেখিয়েছেন আশি আলোকবর্ষের মধ্যে এমন কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। এই মুহূর্তে আমাদের জানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপরিউক্ত পরিমাণ শক্তি মহাশূন্যের নিঃসীম শূন্যস্থানের অনন্ত দূরত্বে পাঠানো সম্ভব নয়। তাই বেতারবার্তা প্রেরণের তুলনায় গ্রহণই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আমাদের সভ্যতার অনুরূপ বা টাইপ-ওয়ানের কাছাকাছি অপরাপর সভ্যতার প্রেরিত রেডিও-সংকেত আজও আমরা নিশ্চিতভাবে পাইনি।