বৃহস্পতি গ্রহে পারমাণবিক জ্বালানীবিশিষ্ট মহাকাশযান পাঠাবে রাশিয়া

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থা, রসকসমস সম্প্রতি বৃহস্পতি গ্রহে পারমাণবিক জ্বালানীবিশিষ্ট মহাকাশযান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। যানটি প্রথমে চাঁদে যাবে, তারপর বুধ গ্রহ ঘুরে যাবে বৃহস্পতিতে। এই মিশনটির সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০।

মহাকাশযানটির জ্বালানী উৎপন্ন করবে 'জিউস' নামের একটি এনার্জি মডিউল। সহজ কথায়, এটা হবে একটি চলমান নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট। উৎপন্ন প্রচণ্ড শক্তি একে মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে দূর-দূরান্তে নিয়ে যেতে পারবে বলে আশা করছে রসকসমস। এই মিশনের মহাকাশযানটিকে তারা বলছে 'স্পেস টাগ' ধরনের। যেসব মহাকাশযান বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি বা নভোচারীদের বয়ে নিয়ে যেতে পারে, তাদেরকে স্পেস টাগ বলে। বর্তমানে এ ধরনের মহাকাশ যাত্রার সময় মহাকাশযানের বেগ বাড়ানো-কমানো বা দিক পরিবর্তনের জন্য সৌরশক্তি বা মহাকর্ষকে ব্যবহার করা হয়। ফলে অনেক বেশি সময় লাগে। বর্তমান ব্যবস্থায় মঙ্গলে যেতে-আসতে লেগে যায় প্রায় তিন বছর। নাসার হিসেব বলছে, পারমাণবিক জ্বালানী ব্যবহার করলে এ সময় অন্তত বছরখানেক কমিয়ে আনা যাবে। তাই, এ ধরনের প্রযুক্তি নির্মাণে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশ কিছু দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের আশা, ২০২৭ সালের মধ্যে তারা লুনার ল্যান্ডারের সঙ্গে ১০ কিলোওয়াটের রিয়েক্টর সংযুক্ত করতে পারবে। বলে রাখা ভালো, ল্যান্ডার ব্যবহার করে মহাকাশযানগুলো বিভিন্ন গ্রহে নামে। আর, লুনার কথাটির অর্থ চাঁদ। মানে, লুনার ল্যান্ডার ব্যবহৃত হয় চাঁদে নামার জন্য। সেই ১৯৬৫ সালে নাসা প্রথম একটি কৃত্রিম উপগ্রহরের জ্বালানী ব্যবস্থা হিসেবে মহাশূন্যে নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে কিউরিওসিটি বা পার্সেভারেন্সের মতো যেসব মহাকাশযান পাঠানো হয়, সেগুলো পারমাণবিক জ্বালানী ব্যবহার করলেও, ওর ভেতরে কোনো রিয়েক্টর নেই।

এদিকে, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশি রিয়েক্টর মহাকাশে পাঠিয়েছে। জিউস-এ এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। ৫০০ কিলোওয়াটের রিয়েক্টর ব্যবহৃত হবে এক্ষেত্রে। ফলে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে সহজেই যেতে পারবে, ঘুরে আসতে পারবে মহাকাশযানটি। প্রথমে চাঁদে যাবে। তারপর বুধের কাছাকাছি গিয়ে, বুধ গ্রহের মহাকর্ষ ব্যবহার করে, দিক পাল্টে ছুটবে বৃহস্পতির দিকে। প্রায় ৫০ মাসব্যাপী এক মিশন হবে এটি।

বেশিরভাগ মহাকাশযান এখন সৌরশক্তি ও তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যাটারি (পড়ুন, পারমাণবিক ব্যাটারি) ব্যবহার করে জ্বালানী হিসেবে। সেই সঙ্গে কাজে লাগায় মহাকর্ষকে। যেমন, নাসার জুনো মহাকাশযান সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে মহাকাশযান। কিন্তু সূর্য থেকে এরকম কোনো যান যত দূরে সরে যায়, সৌরশক্তির কার্যকারিতা কমে যায় তত। কোনো কারণে, ধূলিঝড় বা কিছুতে আটকে গেলে যদি ধুলোবালুতে ঢাকা পড়ে যায় মহাকাশযানের সোলার প্যানেল, নির্দিষ্ট সময় বেরিয়ে আসতে না পারলে অকেজো হয়ে যায় সেই যান।

এসব সমস্যার সমাধান পারমাণবিক রিয়েক্টর। সারাক্ষণ সূর্যালোকে থাকার দরকার নেই। তাছাড়া, চলবেও অনেক সময়। যেমন, 'জিউস' কাজ করতে পারবে টানা ১০-১২ বছর। তার ওপর, অনেক কম সময় মহাকাশযানকে এটি নিয়ে যেতে পারবে দূর-দূরান্তে।

সমস্যা হচ্ছে, এ জন্য অনেক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম লাগে। যাতে রিয়েক্টরের অনেক উচ্চ তাপমাত্রায়ও হঠাৎ করে ভেঙে বা গলে না যায়। এ ধরনের ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা ঠিক নিরাপদ না, পাওয়াও যায় অনেক কম।

সেজন্যই রসকসমসের আশা, এই মিশনটি মহাকাশযাত্রায় সূচনা করবে নতুন যুগের।

সূত্র: নেচার, সায়েন্স এলার্ট ডট কম