কার্যকারণ ৬

আমি যদি প্রায় আলোর গতিতে শুধু ৫০০ ফুট চলি তাহলে কী হবে?

কোন বস্তুর পক্ষে আসলে আলোর গতিতে চলা সম্ভব না। কাজেই ৫০০ ফুট তো দূরের কথা, আপনি ১ ফুটও আলোর গতিতে চলতে পারবেন না। আলোর গতিতে চলাচল করতে পারে কেবল ফোটন। ফোটন হচ্ছে আলোর কণা। স্থির অবস্থায় এর ভর শূন্য। ব্যাপারটা আপেক্ষিক ভরবেগের সমীকরণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।

এখানে p হচ্ছে কোন একটা বস্তুর আপেক্ষিক ভরবেগ, m0 হচ্ছে স্থির অবস্থায় বস্তুটির ভর এবং v হচ্ছে বস্তুটির বেগ। সমীকরণটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বস্তুটির বেগ (v) যদি আলোর বেগের (c) সমান হয়, তাহলে বস্তুটির আপেক্ষিক ভরবেগ (p) কিন্তু অনির্ণেয় হয়ে যাবে। আর বস্তুটির বেগ যদি আলোর বেগ থেকে বেশি হয়, তাহলে ভরবেগ দাঁড়াবে একটি জটিল সংখ্যা। বাস্তবে কোন বস্তুর ভরবেগ কিন্তু জটিল সংখ্যা হতে পারে না। কাজেই বুঝতেই পারছেন, আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন, আলোর বেগে আপনি মোটেই চলতে পারবে না। তবে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে আপনি চলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সময় ধীর হয়ে যাওয়া কিংবা দৈর্ঘ্য সংকোচনের মতো ব্যাপারগুলো ঘটতে থাকবে। আর আপনার ভরবেগ হয়ে যাবে অনেক অনেক বেশি।

আপেক্ষিক ভরবেগের সমীকরণ

সৌরজগতের তুলনায় পৃথিবী কি এক বিন্দু বালুর মতো?

একটি বালুকণার ব্যাস প্রায় ১/১৬ মিলিমিটার থেকে ২ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর ব্যাস প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার, যা এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিটের (অ্যাস্ট্রোইউনিট) ১২ হাজার ভাগের ১ ভাগ। এক অ্যাস্ট্রোইউনিট (AU) হলো পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার কিলোমিটার। সৌরজগতের ব্যাপ্তি কম করে হলেও নেপচুনের কক্ষপথের সমান, যার ব্যাস ৬০ AU। তবে ব্যাপক অর্থে সৌরজগতের ব্যাস ধরা হয় ৪ লাখ AU। তাহলে সৌরজগত্ ও পৃথিবীর আকারের অনুপাত ৭ লাখ ২০ হাজার থেকে ৪৮০ কোটি পর্যন্ত হতে পারে, নির্ভর করছে আমরা সৌরজগতের ব্যাস কোনটা ধরছি তার ওপর। এক হিসাবে সাহারা মরুভূমির আয়তনের সঙ্গে একটি বালুকণার আয়তনের অনুপাতের সঙ্গে এটা তুলনীয়।

কোনো বস্তু যদি প্রায় আলোর গতিতে চলে তাহলে কি তার জন্য সময় প্রসারিত হবে?

আপেক্ষিক তত্ত্বের মূল ধারণাগুলোর একটা হচ্ছে, আলোর গতি ধ্রুব। এই গতি কমতে বা বাড়তে পারে না। অন্য কোন বস্তুর গতি অবশ্য ধ্রুব নয়, সেটা নির্ভর করছে পর্যবেক্ষকের অবস্থান ও গতির ওপর। ধরা যাক, একজন ব্যক্তি আলোর গতির কাছকাছি বেগে চলছেন। এখন যিনি এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন, তিনি তাঁর ঘড়িতে যে সময়টুকু মাপবেন, সে সময়টুকুর দৈর্ঘ্য ওই ব্যক্তির নিজের ঘড়িতে পরিমাপকৃত সময়ের দৈর্ঘ্য থেকে কম হবে। এর মানে আলোর গতিতে কাছাকাছি বেগে গতিশীল ব্যক্তির জন্যে সময়টুকু ধীর হয়ে গেছে। আপেক্ষিকতায় এই ব্যাপারটাকে সময় প্রসারণ (Time dilation) বলা হয়। ব্যাপারটা আসলে যার ক্ষেত্রে ঘটছে, তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন না। তাঁর নিজের রেফারেন্স ফ্রেম বা প্রসঙ্গ কাঠামোতে তিনি নিজে যেটুকু সময় পরিমাপ করেছেন, ততটুকু সময়ই অতিবাহিত হয়েছে। কাজেই এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, প্রায় আলোর গতিতে যদি কোন বস্তু চলে, তাহলে তার জন্য সময়ের প্রসারণ ঘটবে।

যদি HCL+NaOH = H2O + NaCl হয় তাহলে H2O + NaCl= HCL+NaOH হয় না কেন?

রওনক হাসান, হাটহাজারি, চট্টগ্রাম

পানিতে NaCl (খাবার লবণ) যোগ করলে এটি আয়নিত হয়ে সোডিয়াম আয়ন (Na+) ও ক্লোরাইড আয়ন (Cl-) হিসেবে পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, NaCl একটি সর্ম্পূণ আয়নিক যৌগ এবং পানি (H2O) একটি উত্কৃষ্ট পোলার দ্রবক। ফলে পানির ঋণাত্মক মেরু অক্সিজেন (Oδ-) কর্তৃক সোডিয়াম আয়ন (Na+) আকৃষ্ট হয় এবং পানির ধনাত্মক মেরু হাইড্রোজেন (Hδ+) কর্তৃক ক্লোরাইড আয়ন (Cl-) আকৃষ্ট হয়ে NaCl পৃথক হয়ে পড়ে। Na+ ও Cl- এর চারপাশে হাইড্রেশন স্তর সৃষ্টি হয়।

অর্থাৎ NaCl পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে নতুন পদার্থ HCL ও NaOH হওয়ার সুযোগ পায় না। NaCl পানিতে শুধু দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে এবং নিম্নরূপে আয়নিত হয়:

NaCl (Solid) + H2O = Na+ (Aq ueous) + Cl- (Aqueous) + H2O

১. ভর ও ওজনের মধ্যে পার্থক্য কী? ২.মানুষের দেহে কোষ বাড়ে কীভাবে? কেন বাড়ে?

ইসমত জারিন, অষ্টম শ্রেণি, পুলিশ লাইনস স্কুল, খাগড়াছড়ি

১. আপনি যদি লিফটে খুব দ্রুত নামতে থাকেন তাহলে আপনার মনে হবে ওজন কমে গেছে। যদি মহাশূন্যে গিয়ে ভেসে বেড়ান তখন আপনার ওজন শূন্য হয়ে যাবে। কিন্তু এর প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার দেহের ভর একই থাকবে। এর মানে কী? মানে হলো ভর হলো কোনো বস্তুর মধ্যে পদার্থের পরিমাণ। কিন্তু ওজন হলো সেই বস্তুর ওপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিমাণ। একই বস্তুর ওজন ঢাকায় যা, এভারেস্টচূড়ায় তার চেয়ে অনেক কম। কারণ, সেখানে ওই বস্তুর ওপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনেক কম।

২. বিভাজনের মাধ্যমে মানুষের দেহের কোষ বাড়ে। কোষ বিভাজন দুই ধরনের। একটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় একটি কোষ তার সব ডিএনএর অনুলিপি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করার পর সাধারণত বিভক্ত হয়ে দুটি কোষ গঠন করে। প্রতিটি নতুন কোষে সব ডিএনএর পরিপূর্ণ অনুলিপি থাকে। এগুলো ২৩ জোড়া ক্রোমোজমের সমন্বয়ে গঠিত। এই বিভাজনের ফলে দেহকোষের সংখ্যা বাড়ে। মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় জনন মাতৃকোষ বিভক্ত হয়ে জননকোষ (ডিম্বাণু ও শুক্রাণু) তৈরি করে। কেন কোষ বিভাজিত হয়? কারণ, জন্মের পর মানুষের দেহের বৃদ্ধি ঘটে। এ জন্য কোষ বিভাজিত হতে থাকে। না হলে শরীর বাড়বে কীভাবে? তা ছাড়া সব সময় আমাদের শরীরের চামড়া বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষয় হয়। সেই ক্ষয় পূরণের জন্য কোষ বিভক্ত হতে থাকে। তবে দেহের কোন অঙ্গের কোষ কতটা বিভক্ত হবে, তার সংকেত আগে থেকেই ডিএনএতে থাকে। যেমন আমার আঙুলগুলো কত বড় হবে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আঙুলের কোষ বিভাজিত হবে। নির্দিষ্ট সীমায় এসে আর বিভক্ত হবে না। কিন্তু কোনো কারণে ক্ষয় হলে নতুন কোষ তৈরি হবে। এছাড়া ত্বকের কোথাও কেটে গেলেও তা পূরণের জন্য কোষ বিভাজন হয়।

আলোর প্রতিসরণের সাহায্যে মাইক্রোস্কোপে ছোট জিনিস বড় ও পরিষ্কার দেখা যায় কীভাবে?

ইসমাইল খান, নবম শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা

সাধারণ মাইক্রোস্কোপে থাকে উভ-উত্তল (বাই-কনভেক্স) লেন্স। এর বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো বস্তু থেকে আলো সমান্তরালরেখায় এসে লেন্সের মধ্য দিয়ে বের হয়ে বাঁকা হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায়। ফলে মনে হয়, আলোকরশ্মি অনেক বড় বস্তু থেকে আসছে। সাধারণ ম্যাগনিফায়িং গ্লাসও একধরনের মাইক্রোস্কোপ। তবে আধুনিক মাইক্রোস্কোপ অনেক বেশি জটিল ও ছোট জিনিস অনেক বড় ও সুন্দর দেখায়।

পৃথিবী কিংবা সূর্যের মতো মহাবিশ্বের প্রায় সব রকম জ্যোতিষ্ক গোলাকার হয় কেন?

আল রোহান, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ

এর মূল কারণ হলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। গ্রহগুলো সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক ধূলিকণা একত্র হয়ে। এদের ভর বাড়তে থাকে। একসময় এদের মাধ্যাকর্ষণ বল কার্যকর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। সূর্যের চারপাশে ঘোরার সময় গ্রহগুলো চারপাশের ধূলিকণা আকর্ষণ করে কেন্দ্রের দিকে টেনে রাখে। গ্রহের কেন্দ্র থেকে পরিধির চারপাশের প্রতিটি বিন্দুকে সমান বলে আকর্ষণ করে। যেমন রিকশার স্পোকগুলো চাকাকে টেনে রাখে। এই বলের প্রভাবে গ্রহগুলো গোলাকার ধারণ করে। মহাজগতের অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রও একইভাবে গোলাকার হয়। বড় গ্রহগুলোর মাঝখানটা একটু ফুলে থাকে, একেবারে ফুটবলের মতো গোলাকার হয় না। বড় গ্রহগুলো ঘোরার সময় তাদের বিষুবরেখা বরাবর অংশের পদার্থের ওপর সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের (কেন্দ্রবিমুখী বল) প্রভাবে এ রকম হয়। এ জন্য পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একটু চাপা, বিষুবরেখা অঞ্চল একটু ফোলা।