'ফসফরাস' শব্দটি কীভাবে পেলাম?

কথায় বলে, নামে কীই-বা আসে যায়। তারপরও দৈনন্দিন জীবনে নামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস বা গল্প...

ফসফরাসকে একসময় বলা হতো শয়তানের মৌল। অনেকের ধারণা, মৌলগুলোর মধ্যে ফসফরাস ১৩তম আবিষ্কার বলেই এমন নাম পেয়েছিল। কারণ, ইউরোপিয়ানদের কাছে ১৩ অশুভ সংখ্যা। এই নামের পেছনে আরেকটি করুণ ইতিহাসও জড়িত। ১৬৬৯ সালে জার্মানির হামবুর্গে প্রথম ফসফরাস পৃথক করা হয়েছিল। এর প্রায় ৩০০ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী হামবুর্গে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ওই ফসফরাস দিয়েই জ্বালিয়ে দিয়েছিল শহরটি। আবার ফসফরাস মানবদেহের জন্য অতি বিষাক্ত, শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানুষটি কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যায়। তাই ফসফরাসকে শয়তানের মৌল বলা হবে তাতে আর আশ্চর্য কী!

এই মৌলটি আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছে মজার এক গল্প। একসময় মধ্যপ্রাচ্য বা আরবে কিমিয়াবিদ্যার পতন হলেও ইউরোপে তা ব্যাপকভাবেই চর্চা চলছিল। পরশ পাথরের খোঁজে সতেরো শতকেও এর চর্চা বেশ জমজমাটই বলা যায়। সে সময় ব্যবসায় সর্বস্বান্ত হয়ে জার্মান কিমিয়াবিদ হেননিগ ব্র্যান্ড পরশ পাথরের খোঁজে নেমেছিলেন। তার স্বপ্ন পরশ পাথর বানিয়ে তা দিয়ে কম দামি ধাতু থেকে সোনা বানাবেন। ব্র্যান্ডের ধারণা হয়েছিল, মানুষের প্রস্রাব থেকেই পরশ পাথর বানানো সম্ভব। তাই কয়েক শত লিটার প্রস্রাব একত্র করে তা একটি পাত্রে গরম করতে লাগলেন তিনি। তাতে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে সেখানে টেকাই দায় হয়ে গেল। তাতেও দমলেন না ব্র্যান্ড।

কয়েক দিনে এভাবে প্রস্রাব বাষ্পীভূত হওয়ার পর পাত্রে তিনি অদ্ভুত সাদা এক পদার্থ পেলেন। একে অন্ধকারে বেশ আলো ছড়াতে দেখলেন ব্র্যান্ড। এতে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল, তিনি বোধ হয় সত্যি সত্যিই পরশ পাথর বানাতে পেরেছেন। তাই বেশ কয়েক বছর পরশ পাথর বানানোর ফর্মুলাটা গোপনই রাখলেন তিনি। কিন্তু পদার্থটি দিয়ে অন্য ধাতু থেকে সোনা বানাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্র্যান্ড। সে জন্য তিনি পদার্থটি বিক্রি করতে শুরু করলেন। তাতেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি তিনি। অবশ্য এর ফলে ইউরোপে অন্য রসায়নবিদদের নজরে পড়ে পদার্থটি।

অর্থের বিনিময়ে ব্র্যান্ডের কাছ থেকে গোপন ফর্মুলা কিনে আরও অনেকেই ফসফরাস পৃথক করতে শুরু করেন। ১৭৭৭ সালের দিকে ফরাসি রসায়নবিদ অ্যান্টোনিও ল্যাভেসিয়ে পদার্থটিকে মৌলিক পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করেন। অবশ্য ব্র্যান্ড যে পদার্থটি পৃথক করেছিলেন সেটি ছিল যৌগিক পদার্থ, যার নাম অ্যামোনিয়াম সোডিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট। যাহোক, গ্রিক শব্দ ফসফরাস (Phosphorus) অর্থ আলো বহনকারী। গ্রিক শব্দ ঢ়যড়ং অর্থ আলো এবং phorus অর্থ বহন করা। ফসফরাস অন্ধকারে আলো দেয় বলেই এমন নামকরণ।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: দ্য পিরিয়ডিক টেবিল: পল পারসন্স ও গেইল ডিক্সন, রাসায়নিক মৌল: দ.ন. ত্রিফোনভ ও ভ.দ. ত্রিফোনভ ,হাউ ডু উই নো অ্যাবাউট ভিটামিনস: আইজ্যাক আসিমভ