সায়েন্স ফিকশন বা সাই-ফাই সিনেমার বয়স প্রায় চলচ্চিত্র মাধ্যমটির বয়সের সমান। সেই ১৯০২ সালে জর্জ মিলিয়ে বানিয়েছিলেন প্রথম ছবিটি। তাঁর বানানো আ ট্রিপ টু দ্য মুন দেখে এখনো তাক লেগে যায়। মানুষ চাঁদে গেল তারও কত পরে! বলতে গেলে এই সেদিন, ১৯৬৯ সালে। ইতিহাস অনেক পুরোনো হলেও কল্পবিজ্ঞানের ছবি জনপ্রিয় হয় আরও অনেক পরে। স্টার ওয়ারস দিয়ে সিনেমার এ ঘরানার জয়যাত্রা শুরু। পরে জনপ্রিয়তা এতই বাড়ল যে অনেক নির্মাতা মারদাঙ্গা অ্যাকশন ছবিকেও সাই-ফাই বলে চালিয়ে দিতে থাকলেন। সুপারহিরো ছবিকেও সাই-ফাই বলা হলো। কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি মানে তো এমন ছবি, যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চেহারাটা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তার খোরাক জোগাবে। এমন সাতটি ছবির কথাই বলব আজ।
ডন অব দ্য প্লানেট অব দ্য এপস
ভবিষ্যতের পৃথিবীতে একদিন দেখা দিল সিমিয়ান ফ্লু নামের এক মহামারি রোগ। এএলজি-১১৩ ভাইরাসবাহী এই রোগে মারা গেল প্রায় সব মানুষ। অল্পস্বল্প কিছু টিকে রইল, যারা জিনগতভাবেই ভাইরাসটি প্রতিরোধক নিয়ে জন্মেছিল। একই ভাইরাসে উল্লুকদের (এপ) ভারি লাভ হলো। তারা আরও বুদ্ধিমান হয়ে উঠল। নিজেরাই গড়ে তুলতে লাগল সভ্যতা। এ রকম এক প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় ছবিটি। ম্যাট রিভস পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন অ্যান্ডি সের্কিস, জেসন ক্লার্ক, গ্যারি ওল্ডম্যানরা।
বিয়ন্ড দ্য ব্ল্যাক রেইনবো
ড. আরবোরিয়া বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে যোগসূত্র বের করতে একসময় খুলেছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরবোরিয়া ইনস্টিটিউট। এখানকার গবেষণার লক্ষ্য হলো মানুষের জন্য স্থায়ী সুখের উপায় খুঁজে বের করা। পরে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেয় আরবোরিয়ার অনুসারী ড. ব্যারি নাইল। বাইরে থেকে সুদর্শন ব্যারিকে হাসিখুশি ভালো মানুষ মনে হলেও পেটে তার শয়তানির প্যাঁচ। ছবির পরিচালক পানস কসমাটস। অভিনয়ে ছিলেন মাইকেল রজার্স, ইভা অ্যালান।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
এই ছবির নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ। দ্বাবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক বেড়ে গেছে। আমস্টারডাম, ভেনিস, নিউইয়র্কের মতো শহরগুলো ভেসে গেছে। পৃথিবীর জনসংখ্যাও অনেক কমে গেছে। মানুষের বদলে নতুন একধরনের রোবট তৈরি করা হলো। মেচা নামের রোবটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। মানুষের মতোই তাদের চিন্তা ও আবেগ আছে। হেনরি ও মনিকা দম্পতি ছেলে মার্টিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে ঘরে নিয়ে আসেন ডেভিড নামের এক মেচাকে। তারপর তাকে ঘিরেই এগিয়ে যায় কাহিনি।
স্নোপিয়েরসার
বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে বলে একবার মানুষ ঠিক করল, জলবায়ু প্রকৌশল করে এটাকে মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু এটা সাংঘাতিকভাবে উল্টো ফল বয়ে আনল। এতকাল গরমে মানুষের প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত, এখন সেখানে ফিরে এল বরফের যুগ! প্রায় সব প্রাণীর জীবন পড়ল ঝুঁকিতে। এর মধ্যে টিকে গেল ‘স্নোপিয়েরসার’ নামের এক ট্রেনের যাত্রীরা। কীভাবে তারা জটিল এই পরিস্থিতিকে সামাল দিল, তার জন্য দেখতে হবে ছবিটি। পরিচালনা করেছেন কোরীয় নির্মাতা বং জুন-হু।
মুন
২০৩৫ সাল নাগাদ পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের ঘাটতি দেখা দিল। এরপর মানুষ চাঁদের মাটি খোঁড়া শুরু করল। সেখানে পাওয়া গেল ‘হিলিয়াম-৩’ নামে এক জ্বালানি। চাঁদের মাটিতে গড়ে তোলা হলো সারাং স্টেশন নামের একটি ভবন। নিয়মিত খনন চালাতে স্যাম বেল নামের একজন সেখানে থেকে গেল, বাকি কাজ যন্ত্রই করে। এরই মধ্যে কোনো এক কারণে পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্যাম স্ত্রীকে অনেক দিন দেখেনি, পৃথিবী থেকে আসার সময় সে ছিল সন্তানসম্ভবা। ছবির নির্মাতা ডানকান জোনস। অভিনয় করেছেন স্যাম রকওয়েল, ডমিনিক ম্যাক এলিগট।
চিলড্রেন অব ম্যান
২০২৭ সাল। ১৮ বছর হয়ে গেল নতুন কোনো শিশু জন্মাচ্ছে না পৃথিবীতে। কারণ, পৃথিবীর সব নারী সন্তানধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে প্রবীণেরা মারা যাচ্ছে। মানবসভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বন্ধ্যাত্ব সমস্যার নিরসনে বিজ্ঞানীরা একটি প্রজেক্ট হাতে নিলেন, নাম ‘হিউম্যান প্রজেক্ট’। আলফোন্সো কোয়েরনের এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্লাইভ ওয়েন, জুলিয়ান মুর, মাইকেল ক্লেইন।
সানশাইন
২০৫৭ সাল নাগাদ নাকি সূর্যের জীবন শেষ হয়ে যাবে! ঠান্ডা হয়ে যাবে পৃথিবী। সূর্যকে বাঁচাতে এক মহাপরিকল্পনা ফেঁদেছে পৃথিবীর মানুষ। ইকারুস টু স্পেসশিপে চড়ে আটজনের একটি দল যাবে সূর্যে। সঙ্গে নিয়ে যাবে একটি নিউক্লিয়ার বোমা। সেটা ফাটিয়ে সূর্যকে আবার চালু করার চেষ্টা করবে তারা। কাজ সারা হলে ফিরে আসবে পৃথিবীতে। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার খ্যাত ড্যানি বয়েল এই ছবির পরিচালক। অভিনয় করেছেন রোজ বার্ন, ক্লিফ কার্টিস, ক্রিস ইভানস।
*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জুন সংখ্যায় প্রকাশিত