হঠাৎ মেঝে ও দেয়াল ভিজে ওঠে কেন?

২৫ এপ্রিল, ২০১৭। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি সিঁড়ি ও পাশের দেয়াল ভেজা। পানি গড়িয়ে পড়ছে। অথচ ছাদের কোথাও পানি জমে নেই। বাইরে বৃষ্টির পানি, ভেতরে ঢোকার সুযোগও নেই। এই পানি এল কোথা থেকে? পরে জানলাম, সেদিন দুপুরের পর থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ির দেয়াল ও মেঝে ভিজে ওঠে। বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন ত্রিপুরায়ও এ রকম দেখা গেছে। অনেকে আশঙ্কা করছিলেন, এটা হয়তো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। কেউ কেউ ভাবলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোনো মারাত্মক আবহাওয়া বিপর্যয় ঘটতে চলেছে।

কিন্তু আবহাওয়া বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সে রকম কিছু নয়। কয়েক দিনের প্রচণ্ড বৃষ্টির পর হঠাৎ ভ্যাপসা গরম পড়ায় দেয়াল ও মেঝে ঘেমে উঠেছে। এখানে ‘ঘেমে ওঠা’ কথাটার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। গরম বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা ঠান্ডা বাতাসের চেয়ে বেশি। ১৭-১৮ এপ্রিল শুরু করে সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। মেঘে মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালের ২৫ তারিখ সকালের দিকে ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর দুপুরের দিকে হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা প্রায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। বৃষ্টির জন্য বাতাসের আর্দ্রতা ছিল বেশি।

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা আরও বাড়ে। ওদিকে ঘরের ঠান্ডা মেঝে ও দেয়ালের সংস্পর্শে এসে গরম বাতাস ধীরে ধীরে কিছুটা ঠান্ডা হয়। তখন গরম বাতাসের জলীয় বাষ্প বিন্দু বিন্দু পানির আকারে দেয়াল ও মেঝেতে জমতে থাকে। একেই বলা যায় ‘ঘেমে’ ওঠা। আমরা সাধারণ অভিজ্ঞতায়ও দেখি, এক গ্লাস পানিতে কয়েক টুকরা বরফ দিলে গ্লাসের বাইরের তল ভিজে ওঠে। মনে হয় ঘেমে উঠেছে। বাইরের বাতাস গরম, কিন্তু গ্লাসের সংস্পর্শে এসে হঠাৎ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হয়ে গেছে।

তাই ঠান্ডার সংস্পর্শে এসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প বিন্দু বিন্দু পানির আকারে গ্লাসের বাইরের তলে জমতে থাকে। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিলও অনেকটা ও রকমই ঘটেছে। এ অবস্থায় বাতাসের জলীয় বাষ্প ঠান্ডা মেঝে-দেয়ালের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয়। ফলে মেঝে ও দেয়াল ঘেমে ওঠে।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার মে সংখ্যায় প্রকাশিত