মগজে জিপিএস

আমরা কীভাবে পথ চিনি? পরিচিত জায়গায় গেলে কীভাবে বুঝি যে ওখানে আমরা আগেও এসেছিলাম? কিংবা একেবারে নতুন পরিবেশে গেলে কীভাবে বুঝি যে পরিবেশটা নতুন? পরিবেশের জটিল স্মৃতি আমরা কীভাবে ধরে রাখি? এসব প্রশ্নের মোটামুটিভাবে যে উত্তর আমরা সবাই জানি, তা হলো, আমাদের মগজের মেমোরি সেল বা স্মৃতিকোষে জমা থাকে এসব তথ্য। আমরা যখন নতুন কিছু দেখি, আমাদের মস্তিষ্ক নতুন তথ্যগুলো ধারণ করে স্মৃতিকোষে জমা রাখে। আমরা এটাও জানি যে বিভিন্ন প্রাণীর স্মৃতিধারণক্ষমতা বিভিন্ন। যেমন হাতির স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর, কিন্তু গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি প্রায় নগণ্য।

মানুষেরও মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণক্ষমতা সবার সমান নয়। বয়স, অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিধারণক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। যে পথ আমরা ছোটবেলায় কিছুতেই চিনতে পারতাম না, বড় হয়ে সেই পথ চিনতে আমাদের সমস্যা হয় না। পথ ও অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য এখন কত ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস এখন সুলভ ও বহুল ব্যবহূত একটি পদ্ধতি। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এখন জিপিএস বিশেষ পথপ্রদর্শকের কাজ করে। উপগ্রহের মাধ্যমে আমরা আমাদের অবস্থান ও গন্তব্যের দিকনির্দেশনা পাই জিপিএসের সাহায্যে।

মানুষের ক্ষেত্রে পথ খুঁজে বের করার পদ্ধতি সম্পর্কে একটা ভাসা-ভাসা ধারণা পাওয়া গেল। ভাসা-ভাসা বললাম এ কারণে যে মস্তিষ্কের সব কোষের কার্যপদ্ধতি নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি এখনো। আমরা এখনো জানি না ঠিক কী কারণে আলজেইমারস-জাতীয় রোগ হয়, বা স্মৃতিবিনাশ ঘটে। বিজ্ঞানীরা এটুকু নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছেন যে আলজেইমারস রোগীর হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের রোগের কারণ-সম্পর্কিত গবেষণার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীদের নির্ভর করতে হয় ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী নিয়ে গবেষণালব্ধ ফলের ওপর।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী পথ বা পরিবেশ কীভাবে চেনে বা মনে রাখে? সব প্রাণীর মগজেই কি আছে কোনো না কোনো ধরনের জিপিএস? এ-সংক্রান্ত ব্যাপক গবেষণা করে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন আমেরিকান-ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ও’কিফ এবং নরওয়ের বিজ্ঞানী দম্পতি মে-ব্রিট মোজার ও এডভার্ড মোজার। ২০১৪ সালে চিকিত্সাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন এই তিনজন বিজ্ঞানী।

যেভাবে শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টলম্যান ১৯৪৮ সালে ফিজিওলজিক্যাল রিভিউতে প্রকাশিত তাঁর কগনিটিভ ম্যাপস ইন র‍্যাটস অ্যান্ড ম্যান শিরোনামের গবেষণাপত্রে প্রাণী কীভাবে পথ চেনে, তার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। তিনি দেখান, প্রাণীরা স্থান ও ঘটনার সমন্বয় ঘটিয়ে পরিবেশের চিত্র মনে রাখতে পারে। ক্রমঘটমান ঘটনা ও ক্রম-অগ্রসরমাণ অবস্থানের সমন্বয়ে প্রাণীর মগজের মধ্যে ক্রমান্বয়ে একটা সামগ্রিক মানসিক ম্যাপ তৈরি হয়। ওই মানসিক ম্যাপ দেখেই প্রাণীরা পথ চেনে। টলম্যানের তত্ত্ব পথ চেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা বৈজ্ঞানিক ধারণা দেয় ঠিকই, কিন্তু মগজের ঠিক কোন জায়গায় এবং ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এই মানসিক ম্যাপ তৈরি হয়, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় না।

পরবর্তী ২০ বছর ধরে অনেক বিজ্ঞানীই অনেক রকমের গবেষণা করেছেন এ ব্যাপারে। কিন্তু ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। ১৯৭১ সালে বিজ্ঞানী জন ও’কিফ প্রাণীর মস্তিষ্কে প্লেইস সেল বা স্থানিক কোষ আবিষ্কার করে প্রাণীর পথ চেনার পদ্ধতি-সম্পর্কিত গবেষণায় নতুন পথের সন্ধান দেন।

জন ও’কিফ ও প্লেস সেল

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর জন ও’কিফের ইচ্ছা হলো মনের দর্শন (ফিলোসফি অব দ্য মাইন্ড) সম্পর্কে পড়াশোনা করার। ১৯৬০ সালে ভর্তি হয়ে গেলেন নিউইয়র্ক সিটি কলেজে। ১৯৬৩ সালে সাইকোলজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন জন। তারপর চলে যান কানাডায়। ফিজিওলজিক্যাল সাইকোলজি (শারীরতাত্ত্বিক মনোবিজ্ঞান) বিষয়ে মন্ট্রিয়েলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন অধ্যাপক রোনাল্ড মেলজ্যাকের তত্ত্বাবধানে। তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘সেন্সরি প্রপার্টিজ অব অ্যামিগডালা’। প্রাণীর ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে অ্যামিগডালার কোষগুলো।

পিএইচডি করার পর ১৯৬৭ সালে ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনে। শুরুতে অ্যামিগডালার কোষ নিয়ে গবেষণা করলেও লন্ডনে এসে তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত হয় হিপোক্যাম্পাসে। প্রাণীর জীবনে হিপোক্যাম্পাসের ভূমিকা কী? প্রাণীর স্মৃতি সংরক্ষণে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের একটা ভূমিকা আছে, তা জানা গেছে ১৯৫৭ সালে। হেনরি মোলেইসন নামে এক রোগীর মৃগীরোগ সারানোর জন্য দুটি হিপোক্যাম্পাসই কেটে বাদ দেওয়ার পর দেখা গেছে যে হেনরি তাঁর স্মৃতিশক্তির অনেকখানিই হারিয়েছেন।

হিপোক্যাম্পাসের সুনির্দিষ্ট ভূমিকার ব্যাপারটা কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখনো। ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ও’কিফ। ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে (আস্তে আস্তে কিছুটা করে কেটে নিয়ে) তিনি ইঁদুরের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেখেন হিপোক্যাম্পাসের ক্ষতি হলে ইঁদুর আর জায়গা চিনতে পারছে না। নতুন জায়গায় গেলে ইঁদুরের যে উত্তেজনা বাড়ে, তা হিপোক্যাম্পাসের অনুপস্থিতিতে কমে যায়। অনেক পরীক্ষা করে ও’কিফ দেখেন যে হিপোক্যাম্পাসের কিছু কোষ শুধু প্লেস বা জায়গার পরিবর্তন হলে উত্তেজিত হয়। তিনি এই কোষগুলোর নাম দিলেন ‘প্লেস সেল’। প্লেস সেলগুলো শুধু জায়গা পরিবর্তন বা দিক পরিবর্তনের সময় উত্তেজিত হয়। ১৯৭১ সালে তিনি তাঁর ছাত্র জনাথন ডস্ট্রভিস্কির সঙ্গে প্লেস সেলের ফলাফল প্রকাশ করেন ব্রেন রিসার্চ জার্নালে। তাঁর পেপার থেকে আমরা জানতে পারি, হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাণী জায়গা চিনতে পারে না, পথ ভুলে যায়।

প্লেস সেলগুলোর উত্তেজনা জন ও’কিফের আগে আর কেউ পর্যবেক্ষণ করেননি। ও’কিফ আবিষ্কার করলেন যে প্লেস সেলগুলো শুধু পরিচিত পরিবেশে পেলেই উদ্দীপ্ত হচ্ছে, বিভিন্ন প্লেস সেল মিলে পরিবেশ সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট ছক তৈরি হচ্ছে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে। তিনি আরও দেখালেন যে হিপোক্যাম্পাসে বিভিন প্লেস সেলের সমন্বয়ে বিভিন্ন পরিবেশের অসংখ্য মানসিক ম্যাপ সংরক্ষিত থাকতে পারে।

জন ও’কিফের আবিষ্কার স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সারা পৃথিবীতে অসংখ্য বিজ্ঞানী প্লেস সেল-সংক্রান্ত তত্ত্বীয় ও পরীক্ষামূলক গবেষণায় লিপ্ত হন। এসব গবেষণার ফল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় যে প্লেস সেলগুলো মগজে স্থানিক পরিবেশের একটা ম্যাপ তৈরি করে তা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে। স্মৃতি সংরক্ষণে হিপোক্যাম্পাসের ভূমিকা মানুষের মানসিক রোগের কারণ এবং চিকিত্সা-সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন পথের সন্ধান দেয়। আলজেইমারস রোগীদের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত। গবেষণা চলতে থাকে।

মে-ব্রিট মোজার ও এডভার্ড মোজার এবং গ্রিড সেল

১৯৯৫ সালে জন ও’কিফের ল্যাবে পোস্ট ডক্টরেট রিসার্চ করতে এলেন নরওয়েজিয়ান তরুণ দম্পতি মে-ব্রিট ও এডভার্ড মোজার। তখন পর্যন্ত ধারণা ছিল যে পরিবেশ চেনার ব্যাপারে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের সামনের দিক ও পেছনের দিক সমান ভূমিকা রাখে। মে-ব্রিট ও এডভার্ড আবিষ্কার করলেন যে হিপোক্যাম্পাসের সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিকটা বেশি ভূমিকা রাখছে ইঁদুরের পরিবেশ চেনার ক্ষেত্রে। এই আবিষ্কার তাঁদের পরবর্তী গবেষণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। জন ও’কিফের ল্যাবে তাঁরা শিখলেন হিপোক্যাম্পাসের প্লেস সেল রেকর্ডিং সিস্টেম।

১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে তাঁরা নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে সহযোগী অধ্যাপকের পদে যোগ দিয়ে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলেন পরীক্ষাগার তৈরি করার কাজ। ইউনিভার্সিটির একটা বিল্ডিংয়ের বেসমেন্টের কয়েকটা ঘর নিয়ে তৈরি হলো ল্যাব। শুরুতে বায়োলজিক্যাল রিসার্চের সবচেয়ে জরুরি অংশ ‘অ্যানিমেল হাউস’, টেকনিশিয়ান, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ কিছুই ছিল না তাঁদের। সব কাজই নিজেদের করতে হয়েছে। সবকিছু নিজেদের হাতে করায় সবকিছু নিজেদের মনের মতো করে তৈরি করে নিতে পেরেছেন। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছেন বছর দুয়েক পর থেকে। ১৯৯৮ সালে তাঁরা প্রথম গবেষণা শিক্ষার্থী পেলেন। ১৯৯৯ সালে পেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক রিসার্চ গ্রান্ট ইউরোপিয়ান কমিশন থেকে। নরওয়েজিয়ান একাডেমি অব সায়েন্স থেকে পান ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’। তারপর থেকে এক দিনের জন্যও গবেষণা বন্ধ রাখেননি মে-ব্রিট ও এডভার্ড। তাঁরা গবেষণাকাজ এমনভাবে ভাগ করে নিয়েছেন, যেন একটুও সময় নষ্ট না হয়। মে-ব্রিট দেখেন ল্যাবরেটরি ও প্রশাসন। এডভার্ড দেখেন কারিগরি দিক। কাজের ক্ষতি এড়াতে পারতপক্ষে কোনো কনফারেন্সেই দুজন একসঙ্গে যান না।

পথ ও পরিবেশের স্মৃতি সংরক্ষণে প্লেস সেলের ভূমিকার ব্যাপারটা গত শতাব্দীর শেষে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তবে প্লেস সেলগুলো শুধু হিপোক্যাম্পাসেই থাকে নাকি হিপোক্যাম্পাসের বাইরেও থাকে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি তখনো। মোজাররা গবেষণা শুরু করলেন এ ব্যাপারে। ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাসে ইলেকট্রোড স্থাপন করে একটা বড় (দেড় মিটার দৈর্ঘ্য ও দেড় মিটার প্রস্থের) কাঠের বাক্সের ফ্লোরে ছেড়ে দেওয়া হলো। বাক্সের ফ্লোরজুড়ে চকলেটের গুঁড়া ছড়িয়ে দেওয়া হলো, যেন ইঁদুর খাবারের লোভে বাক্সের মধ্যে ছোটাছুটি করে। বাক্সের ফ্লোরের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ ঘটানো হলো। ইঁদুরের হিপোক্যাম্পাসের প্লেস সেলে কোনো উত্তেজনা তৈরি হলে সেখানে স্থাপিত ইলেকট্রোডের সাহায্যে কম্পিউটার সেই ব্রেইন-সিগন্যাল রেকর্ড করতে পারে। ফ্লোরের কোন পথে গেলে ইঁদুরের প্লেস সেলে উত্তেজনা তৈরি হয়, তা-ও রেকর্ড হয়ে যায়।

মোজার দম্পতি আবিষ্কার করলেন যে হিপোক্যাম্পাসের বাইরে এন্টোরাইনাল কর্টেক্সেও প্লেস সেলের সিগন্যাল পাওয়া যায়। তার মানে, শুধু হিপোক্যাম্পাসের প্লেস সেলগুলোই যে পরিবেশের স্মৃতি তৈরি করছে তা নয়, এন্টোরাইনাল কর্টেক্সের সেলগুলোর ভূমিকাও আছে সেখানে। তাঁরা দেখলেন ইঁদুরের মগজের এন্টোরাইনাল কর্টেক্স থেকে যে সিগন্যাল আসছে, তা ষড়্ভুজের মতো প্যাটার্ন তৈরি করছে। বোঝাই যাচ্ছে যে হিপোক্যাম্পাসের প্লেস সেল ছাড়াও এন্টোরাইনাল কর্টেক্সের একধরনের সেলও কাজ করছে, যা এই প্যাটার্ন তৈরি করছে। মোজাররা এই সেলের নাম দিলেন গ্রিড সেল।

গ্রিড সেল আবিষ্কারের ফলাফল প্রকাশিত হয় ন্যাচার জার্নালে ২০০৫ সালে। প্লেস সেল ও গ্রিড সেলের সমন্বয়ে প্রাণীর মস্তিষ্কে পরিবেশের স্মৃতি বা এপিসোডাল মেমোরি কীভাবে তৈরি হয়, তার একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া গেল [ছবি ৬]।

মানুষের মগজে প্লেস ও গ্রিড সেল

ইঁদুর ও অন্যান্য প্রাণী যেভাবে পথ দেখে বা পরিবেশ মনে রাখে, মানুষের বেলায় তা কিন্তু আরও অনেক জটিল। মানুষ বহুমাত্রিক তথ্য ব্যবহার করতে পারে। ছবি, শব্দ, সময়, দূরত্বসহ বহু অপেক্ষক মানুষ ব্যবহার করতে পারে। তাই মানুষের বেলায় প্লেস সেল ও গ্রিড সেলগুলোর ভূমিকা আরও অনেক বেশি জটিল। তারপরও অনেকগুলো পরীক্ষায় মানুষের হিপোক্যাম্পাসের প্লেস সেলের পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। লন্ডনের ট্যাক্সিড্রাইভারদের মগজের এমআরআই স্ক্যান করে দেখা গেছে, যেসব ড্রাইভার দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের পর ট্যাক্সি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের হিপোক্যাম্পাসের আয়তন ও গঠন সাধারণ মানুষের হিপোক্যাম্পাসের আয়তনের তুলনায় বেশ কিছুটা বদলে গেছে। ড্রাইভিং ট্রেনিং শুরুর আগের হিপোক্যাম্পাস আর ট্রেনিং শেষের হিপোক্যাম্পাসে অনেক পার্থক্য দেখা গেছে। কোষের জৈব বিবর্তনের সরাসরি প্রমাণ হিপোক্যাম্পাসের এই পরিবর্তন।

চিকিত্সাবিজ্ঞানে ও’কিফ এবং মোজারদের আবিষ্কার ব্যাপক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। আলজেইমারস, ডিমেনসিয়াসহ আরও অনেক মানসিক রোগের কারণ নির্ণয় এবং তাঁদের চিকিত্সা-সংক্রান্ত গবেষণায় দ্রুত উন্নতি হবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস, আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

সূত্র: নেচার বায়োলজি, কারেন্ট বায়োলজি, মলিকিউলার মেডিসিন ও ব্রেইন রিসার্চ