মিয়োসিস শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস।

জীবদেহে মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সেই প্রথম জীবের জন্মের পরপরই। কিন্তু মানুষের চোখে তা প্রথমবার ধরা পড়েছিল ১৮৭৬ সালে। সে বছর সামুদ্রিক উরচিনের ডিমে প্রথম মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে তখনো এর জন্য আলাদা কোনো নাম দেওয়া হয়নি। এ ধরনের কোষ বিভাজন প্রথম আবিষ্কার এবং বর্ণনা করেছিলেন জার্মান জীববিজ্ঞানী অস্কার হার্টউইগ। এরপর আরও বেশ কিছু প্রাণীর জননকোষে এ ধরনের কোষ বিভাজন আবিষ্কৃত হতে থাকে। এরপর ১৮৮৮ সালে বিজ্ঞানী স্ট্রাসবার্জার প্রথম উদ্ভিদের জননকোষে মিয়োসিস বিভাজন লক্ষ করেন।

এ ধরনের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস পরপর দুবার আর ক্রোমোজম মাত্র একবার বিভাজিত হয়ে মাতৃকোষের ক্রোমোজম সংখ্যার অর্ধেক ক্রোমোজমবিশিষ্ট চারটি অপত্য বা নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে বি ফার্মার এবং জে ই এস মুর ১৯০৫ সালে এর নাম দেন মিয়োসিস বিভাজন। গ্রিক শব্দ Meioun অর্থ হ্রাস করা বা কমে যাওয়া। আর ল্যাটিন শব্দ ওসিস (osis) অর্থ প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। এই দুই শব্দের সমন্বয়ে মিয়োসিস (Meiosis) শব্দের উদ্ভব। কারণ এ বিভাজনে কোষের ক্রোমোজমসংখ্যা মাতৃকোষের তুলনায় কমে অর্ধেকে নেমে আসে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর জনন মাতৃকোষে মিয়োসিস বিভাজন সংঘটিত হয়। এ বিভাজনের কারণেই বংশবৃদ্ধির ক্রমধারা রক্ষিত হয়। নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজমের বিভাজনের ওপর ভিত্তি করে মিয়োসিসকে মিয়োসিস-১ ও মিয়োসিস-২ পর্বে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে মিয়োসিস-১-ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ পর্বেই ক্রোমোজমসংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেকে নেমে আসে। অন্যদিকে মিয়োসিস-২ অনেকটা মাইটোসিস বিভাজনের মতো। সে কারণে মিয়োসিসকে অনেকে ইকুয়েশনাল ডিভিশন বা সমীকরণিক বিভাজনও বলেন।