দাঁত ব্রাশ করার পরেও মুখে দুর্গন্ধ হয় কেন
সকাল ও রাতে নিয়ম মেনে দাঁত ব্রাশ করেন প্রায় সবাই। প্রতিদিন অন্তত দুবার দাঁত ব্রাশ করা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম প্রধান উপায়। কিন্তু তারপরও অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাঁতের বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যালিটোসিস বা মুখের দুর্গন্ধের পেছনে এমন কিছু কারণ আছে, যা কেবল দাঁত ব্রাশ করে দূর করা সম্ভব নয়। তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী?
দাঁতের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জ্যাকলিন টমসিক। তিনি জানান, মুখের দুর্গন্ধের পেছনে সবচেয়ে সহজ অথচ অবহেলিত একটি কারণ হলো ফ্লসিং না করা। ফ্লসিং হলো দাঁত ব্রাশ করার পরেও দাঁতের ফাঁকে যে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে, তা পরিষ্কার করার জন্য পাতলা সুতো ব্যবহারের করা। আমাদের খাওয়া খাবার খুব সহজেই দাঁতের মাঝে আটকে যায়। সেগুলো শুধু ব্রাশ করে পুরোপুরি পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। আমরা যখন ফ্লসিং না করি, তখন এই খাবারের অবশিষ্টাংশ দাঁতের মাঝখানে জমা হতে থাকে। সেখানে ধীরে ধীরে পচতে শুরু করে। এই পচন প্রক্রিয়া হয় কয়েক দিন ধরে। আর এটিই নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের একটি অন্যতম কারণ।
পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বা শরীরের ভেতরে পানির পরিমাণ কম থাকলে তা দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। কারণ ডিহাইড্রেশন লালা উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
যদি শুধু ব্রাশ করে মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি না পান, তবে এর একটি সহজ ও কার্যকর সমাধান হলো দিনে একবার ফ্লস করা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, নিয়মিত ব্রাশের মতো ফ্লসিং করা। কারণ এটি এমনসব জায়গায় পৌঁছায়, যেখানে ব্রাশের ব্রিসল পৌঁছাতে পারে না। সাধারণ ফ্লস হোক বা ওয়াটার ফ্লসার, যেকোনো ধরনের ফ্লসিং ব্যবহার করা যায়। মূল কথা হলো, নিয়মিত ব্যবহার করা।
তবে আপনি যদি নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা সত্ত্বেও মুখের দুর্গন্ধ থেকে যায়, তবে এর আরেকটি কারণ হতে পারে জিহ্বার ওপর থাকা কিছু ব্যাকটেরিয়া। কিছু সালফার উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া জিবের ওপর ও গলার পেছনে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো খাবারের প্রোটিন দ্রুত ভেঙে দুর্গন্ধযুক্ত অণু ছড়ায়।
তবে মুখের দুর্গন্ধের পেছনে অনেক সময় কিছু অভ্যাসও দায়ী। পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বা শরীরের ভেতরে পানির পরিমাণ কম থাকলে তা দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। কারণ ডিহাইড্রেশন লালা উৎপাদন কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পানও এই সমস্যাকে আরও বাড়াতে পারে। কারণ, ক্যাফেইন লালা উৎপাদন কমিয়ে মুখ শুষ্ক করে তোলে।
অনেক সময় মুখের দুর্গন্ধের জন্য আমরা কেবল দাঁত বা মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যকেই দায়ী করি। তবে এই দুর্গন্ধ তৈরির পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। রসুন বা পেঁয়াজের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এজন্য নিয়মিত ফ্লসিং ও জিহ্বা পরিষ্কার করাও জরুরি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করে মুখকে হাইড্রেশনের মাধ্যমে আর্দ্র রাখা এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী খাবার ও ধূমপান ত্যাগ করাও প্রয়োজন। আর মুখের দুর্গন্ধের মূল কারণ খুঁজে বের করতে পারলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।