আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের রোজনামচা

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হল ৩৪তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড। এতে তিনটি ব্রোঞ্জ পদক ও একটি সার্টিফিকেট অব মেরিট পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এ অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জুরি হিসেবে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী। সেখানকার নানা অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিখেছেন বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য।

(বাঁ থেকে) ফায়েজ আহমদ, আরিজ আনাস, অধ্যাপক সাবির বিন মুজাফফর (আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের বৈজ্ঞানিক কমিটি, তথা জুরি বোর্ডের প্রধান), সৌমিত্র চক্রবর্তী (লেখক ও জুরি), অধ্যাপক একেএম জাকির হোসেন (জুরি), আহম্মদ নাইম এবং ফাইয়াদ আহম্মদ।

২-৩ জুলাই

জুলাইয়ের ২ তারিখ রাত দশটায় বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান দলের ফ্লাইট। আমরা ছয়জন। স্কলাস্টিকার ফাইয়াদ আহম্মদ, সাউথ পয়েন্টের আরিজ আনাস, ঢাকা সিটি কলেজের আহম্মদ নাইম, এবং রাজশাহী গভঃ ল্যাবের ফায়েজ আহমদ—এই চারজন প্রতিযোগী। সঙ্গে দুজন জুরি—কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক একেএম জাকির হোসেন এবং আমি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল-১ এর বাইরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের যুগ্ম সম্পাদক মোর্শেদ আর আমরা দুই জুরি পৌঁছে গেলাম সন্ধ্যা সাতটার আগেই। কিছু ছবি তুলে, ফটোসেশন সেরে বাকিদের বিদায় দিয়ে ছয়জনের দল ঢুকে গেলাম টার্মিনালের ভেতরে। তারপর সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে সময় মতো উড়োজাহাজে চড়ে বসলাম। ফাইয়াদ গত বছর আর্মেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। এটা তার দ্বিতীয়বার। প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফায়েজ এবং নাইমের আকাশপথে যাত্রার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। বিদেশে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও তাদের আগে হয়নি। তাই তাদের জন্য এ যাত্রা বিশেষ গুরুত্ববহ।

যাইহোক, সময়মতো জাহাজ আকাশে উড়ল। পাঁচ ঘন্টা পর স্পর্শ করল দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নিলাম আমরা। তারপর দুবাই স্থানীয় সময় ৩ জুলাই রাত দুইটায় দেখা হলো আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পক্ষ থেকে আমাদের রিসিভ করতে আসা দলটির সঙ্গে। ঢাকার সময় থেকে দুই ঘন্টা বিয়োগ করলে দুবাই-এর সময় পাওয়া যায়। সব গুছিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ দেখা গেল, ফাইয়াদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আধঘন্টা বাদে ফাইয়াদ যখন আবির্ভূত হলো, আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমরা যেখানে অপেক্ষা করছি, সে নাকি ওখানেই ছিল। আর আমরা ওই জায়গা বাদ দিয়ে অন্য সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম!

এবার গন্তব্য আল-এইন। জায়গাটা আবুধাবি আমিরাতে পড়েছে। দুবাই অন্য আরেকটা আমিরাতে। আমিরাত মানে অনেকটা প্রদেশ বোঝায়। প্রতিটা আমিরাত একেকজন আমিরের শাসনাধীন এলাকা। এরকম সাতটি আমিরাত নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ আমাদের এক আমিরাত থেকে অন্য আমিরাতে যেতে হবে। দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। তবে পৌঁছাতে দুই ঘন্টার কম সময় লাগল। আল-এইন রোটানা হোটেলে নিবন্ধন সম্পন্ন করে আমরা দুজন জুরি রয়ে গেলাম। আর প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাড়ি চলল কুড়ি মিনিট দূরের ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ইউনিভার্সিটিতে। সেখানকার ডর্মিটরিতে বিশ্বের আশিটি দেশ থেকে আসা সব শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতগুলো দেশ থেকে আসা তিন শ জুরির জন্য একটা হোটেল যথেষ্ট ছিল না। আরও একটা হোটেলের ব্যবস্থা ছিল— র‍্যাডিসন ব্লু। তবে আমাদের সেখানে যেতে হয়নি।

একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠলাম। ততক্ষণে দুপুরের খাবার, অর্থাৎ লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে দেখি, হোটেলের সামনে বাস অপেক্ষমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জুরিদের নিয়ে যেতে এসেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ইউনিভার্সিটিতে। অনুষ্ঠানে প্রায় সব অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিযোগী ও জুরিরা উপস্থিত। কয়েকটি দেশ তখনো এসে পৌঁছাতে পারেনি।

মরুভূমির ঐতিহ্যবাহী বেদুইন সঙ্গীতের মুর্ছনায় সবাই অভিভূত। কোনো রেকর্ডিং নয়, একজন রক্তমাংসের শিল্পী মঞ্চে বসে গিটার-সদৃশ আরব বাদ্যযন্ত্র ‘ওউদ’ বাজাচ্ছেন। সময় মতো অনুষ্ঠান শুরু হলো। শুরুতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় সঙ্গীত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিক্ষামন্ত্রী, আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সভাপতি এবং এবারের অলিম্পিয়াড আয়োজক কমিটির প্রধানের বক্তব্য শেষে এক আরব নারীশিল্পীর পিয়ানোবাদনে আমরা মুগ্ধ হলাম। তারপর একে একে সব দেশের প্রতিযোগীদের মঞ্চে ডেকে পরিচিতি পর্ব শুরু হলো। গত বছর এই অনুষ্ঠান আমরা মিস করেছি ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায়। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি তাই আমাদের জন্য একটু বিশেষ কিছু। শিক্ষার্থী ও জুরিদের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হলো।

তারপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে নিজ হোটেলে ফেরার পালা। আগামী কয়েকদিন তাদের সঙ্গে দেখা করার আর সুযোগ নেই। এর পরই প্রতিযোগীদের কাছ থেকে সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র জমা নিয়ে নেওয়া হবে। ফেরত দেওয়া হবে সব পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর। উল্লেখ্য যে ঈদ-উল-আযহার ছুটিজনিত জটিলতায় ব্যবস্থাপনায় কিছু অনাকাঙ্খিত অসুবিধা হয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীদের কারো কারো প্রথম দিন একটু সমস্যা হয়েছে খাবার পেতে। তবে আয়োজক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় দিন থেকে আর কোনো সমস্যা হয়নি।

হোটেলে ফিরে জুরিদের একটা মিটিং হলো। এখানে আয়োজকরা আমাদের দেখিয়ে দিলেন কীভাবে প্রশ্ন পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করা লাগে, কী করে তা অনুবাদ করতে হয় ইত্যাদি। এগুলো সবই অলিম্পিয়াডের নিজস্ব বিশেষ অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে করতে হয়। এজন্যই প্রতিযোগীদের সব ডিভাইস জমা রাখা হয়, যাতে জুরিদের কাছ থেকে ভুলেও প্রশ্নের কোনো তথ্য আগেভাগে শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার প্রশ্ন উঠতে না পারে।

৪ জুলাই

সকালের নাস্তা সেরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হলো প্রশ্নপত্র নিয়ে সুদীর্ঘ জুরি মিটিং। হোটেলের নিচতলায় ‘জাকের বলরুম’কে সভাকক্ষে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখানেই কাটবে জুরিদের অনেকটা সময়। ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে চারটি বিষয়ে—প্রাণরসায়ন, আণবিক উদ্ভিদবিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান ও প্রাণিআচরণবিদ্যা এবং বায়োইনফরমেটিকস। এগুলোর খসড়া প্রশ্নপত্র এবং নম্বর প্রদান নীতিমালা আগেই তৈরি করে রেখেছেন বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্যরা। জুরিদের কাজ হলো সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা। যাতে পরদিন যখন এ প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তখন যেন কোথাও একচুল ভুল না থাকে। একেকটি বিষয়ে ৯০ মিনিটের পরীক্ষা হবে, মোট ছয় ঘন্টা। প্রশ্নপত্রের পৃষ্ঠা সংখ্যা শতাধিক। কখনো কখনো জুরি মিটিংয়ের আলোচনা হয়ে ওঠে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধক্ষেত্র (!), অবশ্যই পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে। সব শেষ করে যার যার দেশের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র এবং পরীক্ষার অন্যান্য জরুরি উপকরণ প্রিন্ট করে আলাদা খামে ঢুকিয়ে সিলগালা করে, তার ওপর স্বাক্ষর করে দেওয়া হলো। সব গুছিয়ে উঠতে উঠতে মধ্যরাত পেরিয়ে বেজে গেল দুটো।

জুরিরা যখন প্রশ্ন নিয়ে ব্যস্ত, ওদিকে তখন শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়েছে। গন্তব্য আশপাশেই, আল-এইনের মধ্যে। সেখানকার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে এসে তারা একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়ার আয়োজন করেছে। পরদিন তাদের পরীক্ষা।

৫ জুলাই

চারটি ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের চারটি দলে ভাগ করা হয়। প্রতি দলে প্রতি দেশ থেকে কেবল একজন থাকতে পারে। চারটি দল চারটি ভিন্ন ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু করে। এটা দলগত কাজ নয়। প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত দূরত্ব বজায় রেখে একেকটি মিনি ল্যাব স্টেশন বসানো হয়। নব্বই মিনিট শেষ হলে স্বেচ্ছাসেবকদের তত্ত্বাবধানে দলগুলোর জায়গা বদল হয়। কিন্তু এ সময় কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পায় না। দুই পরীক্ষার মধ্যে বিরতি থাকে। এভাবে ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে চারটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ব্যবহারিক এবং তত্ত্বীয়—সব কটি পরীক্ষা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থাৎ ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ইউনিভার্সিটিতে। শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষা দিচ্ছে, জুরিদের তখন ভ্রমণের পালা। গন্তব্য দুবাই।

বাইরে বের হওয়া মুশকিল। প্রচণ্ড গরম। বাতাসটাও বেশ শুকনো। ঘাম হওয়ার আগেই শুকিয়ে যায়। সূর্যের আলো তরবারির ফলার মতো গায়ে এসে বেঁধে। তাই হাঁটা পথে ১০-১৫ মিনিটের দূরত্বে হলেও আয়োজকরা আমাদের সবসময় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে করে নিয়ে যাচ্ছে। গিয়েই কোনো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবনে ঢুকে যাচ্ছি। একটু পর পর পানি এবং জুস সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও লক্ষ করলাম, শ্বেতাঙ্গ জুরিদের কারো কারো ত্বক লাল হয়ে গেছে।

জানালা দিয়ে বাইরে লক্ষ করলাম, বাংলাদেশি রেমিটেন্স যোদ্ধারা রাস্তার দুধারে এরকম রোদে পুড়ে কাজ করছে নানা প্রকার কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টে। দেশে পাঠানো একেকটি ডলার যে কত পরিশ্রমের ফল, তা নিজ চোখে দেখলাম। এখানকার সরকার অবশ্য দিনের কয়েক ঘন্টা যখন রোদ চরমে থাকে, তখন বাইরে কাজ করতে বা করাতে নিষেধ করে দিয়েছে। সেই সময়টুকু পুষিয়ে নেওয়া হয় রাতে বা সন্ধ্যায় কাজ করিয়ে। তখনো যে খুব তাপমাত্রা কমে যায়, তা নয়। চর্মভেদী রোদ থাকে না, কিন্তু মরুভূমি থেকে আসা গরম হওয়া ঠিকই চামড়া জ্বালিয়ে দিয়ে যায়।

জুরিদের ভ্রমণের শুরুতেই আমরা গেলাম দুবাইয়ের মিউজিয়াম অব দি ফিউচার-এ। সাধারণত মিউজিয়াম বা জাদুঘর বলতে বোঝায় অতীতের জিনিসপত্র প্রদর্শনী। কিন্তু এই জাদুঘর আপনাকে নিয়ে যাবে ভবিষ্যতে। আজি হতে শতবর্ষ পরে। মহাশূন্যে ভ্রমণ এবং এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে গিয়ে প্রতিদিন অফিস করা ডালভাত হয়ে যাবে। সবার তো অফিসে যাওয়াও লাগবে না। কোভিড আমাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতের চাকরি-বাকরি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, প্রসাধন, চিকিৎসা, আসবাবপত্র ইত্যাদি কোনটা কেমন হবে, তার বেশ চমকপ্রদ মডেল বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলোর কোনো কোনোটা আবার কাজও করে! আরও দেখলাম ভবিষ্যতের জিন ব্যাংকের একটা রেপ্লিকা। আমাদের চেনা-পরিচিত অনেক জীবের হলোগ্রাফিক নমুনা সেখানে আছে। কোনো কোনোটায় লেখা আছে ‘বর্তমানে বিলুপ্ত’। অর্থাৎ আমরা যদি অচিরেই সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিই, তাহলে সেগুলো অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা মনে করিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য। শিশুদের জন্যও রয়েছে আলাদা অংশ। তবে আমরা সেখানে যাইনি।

হকার মার্কেটও (আরবি ভাষায় ‘সৌক’) যে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে, তা বুঝলাম দুবাই-এর বিখ্যাত সৌক মদিনাত-এ গিয়ে। পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নিউ মার্কেটের বিলাসবহুল সংস্করণ। অনেকেই অনেক কিছু কেনাকাটা করলেন। যাত্রাপথে দুবাই ফ্রেমসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান চোখে পড়ল। তবে নেমে ঘুরে দেখার মতো সময় আমাদের ছিল না।

এরপর গেলাম ‘পাম জুমেইরাহ’-তে। এটি পাম গাছের আকৃতিতে নির্মিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম দ্বীপত্রয়ীর (তিনটিই সংযুক্ত আরব আমিরাতে) একটি। পাশেই আরব সাগর ও তার সৈকত। বিশ্বের একমাত্র সাত-তারকা হোটেল খ্যাত (আসলে পাঁচ-তারকা) বুর্জ আল আরবসহ বিলাসিতার যত নিদর্শন হতে পারে, তার সবই এখানে নির্মাণ করা হয়েছে।

এরপর একটি বিলাসবহুল হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে জুরিরা সবাই গেলাম দুবাই মলে। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং মল এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। সার্বিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শপিং বিষয়টা আমার কাছে খুব একটা কস্ট-ইফেক্টিভ বলে মনে হয়নি। প্রায় সবই বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য, যেগুলো ঢাকার নামীদামী শপিং মল বা শো-রুমগুলোতে পাওয়া যায় এখানকার অর্ধেক দামে।

যাহোক, হাতে সময় কম। এই সময়ের মধ্যে শপিং না করে বরং পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবনের সর্বোচ্চ তলায় কী করে ওঠা যায়, সেটা দেখতে লাগলাম। টিকেট কেটে উঠতে হয়। দুরকম টিকেট আছে—একটায় ১২৪ তলা পর্যন্ত, অন্যটা ১৫৪ তলা। আসলে বুর্জ খলিফা ১৬০ তলা পর্যন্ত প্রায় ৮৩০ মিটার উঁচু। তবে ১৫৪ তলার ওপরে আমজনতার ওঠার সুযোগ নেই। তা-ই সই! আমার সফরসঙ্গী অধ্যাপক হোসেনের উচ্চতাভীতি আছে। তিনি শপিং করবেন। তাই ‘একলা চলো রে’ নীতিতে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ দেখি বুলগেরিয়া দলের দুই জুরিও শামিল হয়েছেন বুর্জ খলিফা আরোহন অভিযানে। তবে তাঁরা উঠবেন ১২৪ তলা পর্যন্ত। সে পর্যন্ত উঠতে উঠতে গাইড অনেক ইতিহাস শোনালেন, নিদর্শন দেখালেন। তারপর লিফট বদলে আমি গিয়ে হাজির হলাম ১৫৪ তলায়। যারা ওই তলায় ওঠার টিকেট কাটেন, তারা ভিআইপি হিসেবে গণ্য। তাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেস্টুরেন্টে মুফতে (আসলে টিকেটের দামের সঙ্গে রেখে দিয়েছে) বুফে খাওয়া যায় ব্যালকনি থেকে নিচের দৃশ্য দেখতে দেখতে। সিঁড়ি দিয়ে দুই তলা নামলে একেবারে খোলা ব্যালকনি। সেখানেও গেলাম। ছবি তুললাম। দেখি কয়েকজন বাঙালিও সেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন খাঁটি ঢাকাইয়া বাংলায়। হাজার কোটি ডলারের ব্যবসায়িক আলাপ শুনে ভয়ে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম!

তারপর আকাশ থেকে পাতালে নেমে দ্রুত চলে এলাম আমাদের গাইডের পূর্বনির্ধারিত জায়গায়। সময় হয়ে এল। আমরা বাসে উঠে রওয়ানা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।

৬-৭ জুলাই

তত্ত্বীয় দুটি পত্রের প্রশ্ন চূড়ান্ত করা এবং অনুবাদের জন্য দুইদিন বরাদ্দ। ব্যবহারিকের মতো এটাও সাতসকালে শুরু হয়ে মাঝরাত পেরিয়ে চলতে থাকা কর্মযজ্ঞ হতে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে একটু-আধটু খাওয়া আর চা-কফির বিরতি। জুরি সভাকক্ষ সরগরম। পরের দিন ৬ তারিখ তত্ত্বীয় প্রথম পত্রের পরীক্ষা। আজ রাতেই তার প্রশ্নপত্র খামবন্দী করে জমা দিতে হবে। সেদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজকরা বেরিয়ে পড়েন আরেক দফা সফরে। গন্তব্য আবুধাবি। সারা দিনে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে সন্ধ্যা নাগাদ তারা ফিরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মিটরিতে। আর জুরিরা প্রশ্ন জমা দিয়ে নিজ নিজ রুমে ফিরে গেলেন রাতের বাকিটুকুর সদ্ব্যবহার করে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্য।

একইভাবে, ৬ তারিখে শিক্ষার্থীরা যখন তিন ঘন্টার তত্ত্বীয় প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বসে গেছে, তার আগেই জুরিরা বসে গেছেন তত্ত্বীয় দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন চূড়ান্ত করা এবং অনুবাদের কাজে। পরদিন পরীক্ষা। সব শেষে প্রস্তাব এল, এই পত্রের প্রশ্ন বেশ লম্বা হয়েছে। তাই তিন ঘন্টার বদলে সময়টা বাড়িয়ে সাড়ে তিন ঘন্টা করা যায় কি না। বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা-পর্যালোচনা আর ভোটাভুটি শেষে সিদ্ধান্ত হলো, দ্বিতীয় পত্রের জন্য শিক্ষার্থীরা আধঘন্টা সময় বেশি পাবে। অতঃপর পরের দিনের পরীক্ষার জন্য সব গুছিয়ে জুরিরা শ্রান্ত কিন্তু সন্তুষ্টচিত্তে ঘুমোতে গেলেন।

৮ জুলাই

শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বীয় দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন জুরিদের নিয়ে আয়োজকরা আরেক দফা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন। গন্তব্য আবুধাবি। হোটেল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগল। প্রথমে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মস্ক দর্শন। মুসলিম স্থাপত্যের নান্দনিক উপস্থাপনা শুধু নয়, এই মসজিদের মূলনীতি হলো সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। তাই জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে এ মসজিদের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানকার প্রায় সব দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে টিকেট কাটতে হয়, তবে এ মসজিদে ঢুকতে কোনো টাকা লাগে না। মসজিদে প্রবেশ করার জন্য একাধিক আন্ডারগ্রাউন্ড প্রবেশপথ রয়েছে। সেগুলোয় বড় বড় করে লেখা আছে ‘হ্যাশট্যাগ টলারেন্স’ (#TOLERANCE), অর্থাৎ পরধর্মসহিষ্ণুতার বাণী। এ শুধু কথার কথা নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবখানে এ নীতির চর্চা আছে।

ম্যাকডোনাল্ডসে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। তারপর ফাউন্ডার্স মেমোরিয়ালসহ (দেশটির প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণে নির্মিত স্থাপনা) আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে বাস গিয়ে থামল লুভ মিউজিয়ামে। একই নামে বিখ্যাত ফরাসি জাদুঘরের আবুধাবি শাখা এটি। মানবসভ্যতার আদিমতম নিদর্শন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পথ পাড়ি দিয়ে কী করে তা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে, তার ধারাবাহিক বিবরণ সংরক্ষিত আছে এর গ্যালারিগুলোতে। বিশ্বের প্রায় সব প্রধান প্রধান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, মূর্তি এবং অন্যান্য নিদর্শন বেশ যত্নের সঙ্গে রাখা আছে। একইরকম গুরুত্ব দিয়ে। মানব বিকাশের ধারা দেখানো হয়েছে। ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ নির্মোহ উপস্থাপনা কোনো সাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়নি। মাঝে মাঝে হঠাৎ দেখা মেলে বিশ্বের বড় বড় মনীষীর অমর বাণীসমূহের, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে।

আসার পথে রাস্তার ধারে চোখে পড়ল ‘অ্যারাবিয়ান অরিক্স’ নামে একধরনের হরিণের মূর্তি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় পশু। আরও দেখলাম বিশ্বের অন্যতম বড় পশু হাসপাতাল—ফ্যালকন হসপিটাল। এ দেশের জাতীয় মনোগ্রামেও দেখা মেলে এই ফ্যালকন বা বাজপাখির। কথিত আছে, যাযাবর আরবরা যখন মরুর বুকে একে অন্যের সাক্ষাৎ পেত, তখন এক হাতে থাকত তাদের বিশ্বস্ত ফ্যালকন, আর অন্য হাতে উটের লাগাম। তাই ভাব বিনিময়ের জন্য তারা একে অন্যের নাকে নাক ঘষত! এ রীতি এখনো চালু আছে।

আল-এইনে ফিরে হোটেলে ডিনার সেরে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ করতে বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। পরীক্ষা শেষে তারা বেশ ক্লান্ত, তবে ভারমুক্ত ছিল বলেই মনে হলো। এ রাতেই তাদের ডিভাইসগুলো ফেরত পাওয়ার কথা। বাসায় কথা বলতে সবাই বেশ উন্মুখ। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে রাতে জুরি মিটিংয়ে যোগ দিলাম। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কীভাবে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ এবং নম্বর পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে হয়, সেটাই মূল বিষয়। ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য জুরিরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু করেছেন। আজ রাতে তাঁদের কাজ শেষ হলে পরদিন আমাদের কাজ শুরু হবে।

৯ জুলাই

পরীক্ষকদের মূল্যায়নকৃত উত্তরপত্রগুলোর স্ক্যান কপি জুরিদের কাছে যখন পৌঁছেছে, তখন বেশিরভাগই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যে দেশের জুরি, শুধু সেই দেশের প্রতিযোগীদের উত্তরপত্র দেখার সুযোগ পাবেন। সকালে উঠেই চটপট আমি এবং অধ্যাপক হোসেন উত্তরপত্রগুলো নিয়ে বসে গেলাম। কোথায় কোথায় কত নম্বর বাড়তে পারে, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে পাশে মন্তব্য লিখতে হবে, যাতে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য জমা দেওয়া যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর একে একে সব দেশের জুরিদের ডাকা হবে। বর্ণানুক্রমে ডাক পড়ল। সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশের নাম ইংরেজিতে বি (B) দিয়ে শুরু হওয়ায় প্রথম গ্রুপেই নিজেদের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ পেলাম। যতগুলো জায়গায় নম্বর বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলাম, তার অনেকগুলোই পরীক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা খুশি। শিক্ষার্থীদের মেডেল জেতার সম্ভাবনা বেড়ে গেল।

ওদিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজকরা কাছেই ওয়াটার পার্কে বেড়াতে গেছেন। তাদের আনন্দের সীমা নেই।

১০-১১ জুলাই

পুনঃনিরীক্ষণ শেষে সব দেশের জুরিদের অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয় যে তারা তাদের দেশের প্রতিযোগীদের বর্তমানে প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে সন্তুষ্ট। আমরাও করলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম বৈজ্ঞানিক সেমিনারে অংশ নিতে। আশিটি দেশের জুরি, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, তাঁদের সামনে কয়েকজন জুরি প্রেজেন্টেশন দেবেন। তার মধ্যে আমিও আছি। আমার প্রেজেন্টেশন ছিল জীববিজ্ঞান শিক্ষায় উচ্চতর গণিত ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর প্রয়োগ সম্পর্কে। অ্যান্টার্কটিকায় বৈজ্ঞানিক অভিযানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে জীববিজ্ঞান শিক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্কার—বেশ কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হলো। তারপর বাসে করে সোজা হোটেলে ফিরে দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত হলাম। কেননা এ অনুষ্ঠানের পরে হোটেলে ফেরার সময় হবে না। যেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেখানেই সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই সরাসরি দুবাই বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী আরব সঙ্গীতের পাশাপাশি ইতালীয় পারকাশন দলের লাইভ উপস্থাপনা দর্শকদের রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়ল। শিক্ষামন্ত্রী প্রমুখের বক্তব্যের পর এল কাঙ্খিত সময়। এবার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পালা। বাংলাদেশ দলের তিনজনের নাম ঘোষিত হলো ব্রোঞ্জপদক জয়ী হিসেবে—ফাইয়াদ, ফায়েজ এবং নাইম। নিজের দেশের পতাকা আবারও গর্বিত হয়ে উড়ল বিশ্বমঞ্চে। একে একে তারা পদক গ্রহণ করে ফিরল নিজ আসনে। আরিজ পেল মেরিট সনদ। সবগুলো পুরস্কার ঘোষণার পর অনুষ্ঠান শেষ হলো। এর পর সব জুরি ও শিক্ষার্থীদের একত্রে হোটেল আল-এইন রোটানায় ফিরে গিয়ে গালা ডিনারে অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের হাতে সময় নেই। লাগেজ আগেই হোটেল থেকে এনে রেখেছি। এবার বাসে উঠে রওয়ানা হলাম দুবাই বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। শুধু বাংলাদেশ দল নয়, যুক্তরাষ্ট্র, স্লোভেনিয়া এবং ফিলিপাইন দলও আমাদের এ যাত্রার সহযাত্রী। তাদেরও ফ্লাইট প্রায় কাছাকাছি সময়ে। আমাদেরটা রাত দুটোয়, দুবাই স্থানীয় সময় অনুযায়ী। সময় মতোই উড়াল দিলাম।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেই টের পাইনি। ক্যাপ্টেনের ঘোষণায় ঘুম ভাঙল। আমরা ঢাকা পৌঁছে গেছি। স্থানীয় সময় সকাল নয়টা। ইমিগ্রেশন শেষে লাগেজ বুঝে নিয়ে বের হয়ে দেখি অভিভাবকদের সঙ্গে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মোর্শেদ এবং তমালও উপস্থিত। রীতিমতো ফুলের তোড়া এবং ফুলের মালা নিয়ে। কিছুক্ষণ ছবি-টবি তুলে ফটোসেশনের পর সবাই ফিরে গেলাম যার যার নীড়ে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পর্বে আয়োজক হিসেবে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত আইবিও ২০২৩ আয়োজক কমিটি এবং ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে আয়োজক ছিল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি এবং সমকাল, পাওয়ার্ড বাই শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং এসিআই মটরস। কারিগরি সহযোগিতায় ছিল ল্যাব বাংলা। প্রশিক্ষণ সহযোগী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এবং নলেজ পার্টনার পাঞ্চেরী পাবলিকেশন্স।