‘বাংলাদেশে পাটের সম্ভাবনা অনন্ত’— মোবারক আহমদ খান, পাটবিজ্ঞানী

২০১৬ সালে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমদ খান পাটের সেলুলোজ থেকে বায়োপলিমার উদ্ভাবনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরে তা থেকে উদ্ভাবন করেন পচনশীল পলিমার ব্যাগ। এটি একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের উপযুক্ত বিকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাগের নাম দেন ‘সোনালী ব্যাগ’। বিশ্বপর্যায়ে ‘জুটম্যান’ নামে পরিচিত এ বিজ্ঞানী সম্প্রতি তাঁর উদ্ভাবন ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হয়েছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হাসান শাওনের। বিজ্ঞানচিন্তায় সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ প্রকাশিত হলো।

মোবারক আহমদ খানছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার কখন মনে হলো প্লাস্টিক আমাদের গ্রহের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে উঠছে?

মোবারক আহমদ খান: আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র। তখন থেকেই পলিমারের নেতিবাচকতা সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। প্লাস্টিকের যত্রতত্র বহুবিধ ব্যবহার নিয়ে একটা শঙ্কা কাজ করত। ভাবতাম, এটা কীভাবে রোধ করা যায়। চোখের সামনে দেখলাম, আমাদের দেশসহ পুরো বিশ্ব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের দূষণে সয়লাব। বিশেষ করে সমুদ্র, নদী-নালা, পুকুর ভরে যাচ্ছে। প্রাণ-প্রকৃতির ভয়াবহ এ ক্ষতি থামছেই না। মনে হতো, বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এই বিপর্যয় রোধে অনেকের মতো আমারও কিছু করার আছে। 

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর প্রেক্ষিতে পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন ও পরিবহন নিষিদ্ধ করে। আপনার একাধিক সাক্ষাৎকার পড়ে আমরা জেনেছি, এ প্রস্তাব যখন মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হয়, তখন আপনি এর বিরোধী ছিলেন। কোনো দূরদর্শী ভাবনা থেকেই কি এই বিরোধিতা করেছিলেন?

মোবারক আহমদ খান: আমি তখন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা)। পলিমার নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে সে সভায় আমাকে আহ্বান জানানো হয়। সেখানে আমি বলি, কোনো বিকল্প তৈরি না করে এমন সিদ্ধান্ত সুফল বয়ে আনবে না। বাস্তবে পলিথিনের মতো বহুল ব্যবহৃত পণ্যের ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়। কারণ, এখন পর্যন্ত পাটকে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে গ্রাহ্য করা যায় না। এখনো সেই পরিস্থিতি পাল্টায়নি। পলিথিনের নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা আছে। অন্যদিকে পাটের স্বকীয়তা তখন পর্যন্ত আমরা প্রমাণ করতে পারিনি। সেদিন সেই মিটিং থেকে ফিরে পরমাণু শক্তি কমিশনে আমার গবেষণাগারে গিয়ে মনে হলো, আমরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও পচনশীল কিছু আবিষ্কার করতে পারি কি না, যা প্লাস্টিকের বিকল্প হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন :

আপনার সেই অন্য কিছু আবিষ্কারের চিন্তার শুরুটা কেমন ছিল?

মোবারক আহমদ খান: প্রথমে আমরা ভাবি শর্করাভিত্তিক পচনশীল কিছু উদ্ভাবনের কথা। আমার এক পিএইচডি ছাত্র এমন একটা কাজ করছিল। ভাতের মাড় ও আটা থেকে শর্করাভিত্তিক উপাদান পাওয়া সম্ভব। তার প্রকল্পটা ছিল, ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভাতের মাড় ফেলে দেওয়া হয়, তা থেকে কিছু করা যায় কি না কিন্তু এতে সমস্যা হলো, গবেষণায় আমরা দেখলাম, ভাতের মাড় দিনেরটা দিনে ব্যবহার করতে হয়। একদিন পর ব্যবহার করলে মাড় নষ্ট হয়ে যায়। তাতে গন্ধ হয়ে যায় অথবা ফাঙ্গাস পড়ে। আবার বাসা-বাড়ি থেকে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে মাড় সংগ্রহ করাও ঝামেলার ব্যাপার। তাত্ত্বিকভাবে আমি ও আমার শিক্ষার্থী দেখলাম, এতে কাজ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে শিল্প উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্রটি থেকে যাচ্ছে। আবার ভাবছিলাম, খাবারের অভাবের দেশে খাবার দিয়েই নতুন কিছু উৎপাদনের পথে না যাই।

প্রশ্ন :

এরপর গবেষণা-পথ কোন দিকে এগোল?

মোবারক আহমদ খান: তখনই প্রথম সেলুলোজ নিয়ে ভাবতে শুরু করি। প্রতিটি গাছপালায় সেলুলোজ আছে। সবচেয়ে বেশি সেলুলোজ আছে পাটের মধ্যে। আবার আমাদের সরকারও পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের কথা বলছে। অর্থাৎ পাটের তৈরি শপিং ব্যাগের রূপটা করতে চাই পলিথিনের মতো। সেই লক্ষ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ শুরু করলাম।

আমাদের প্রাথমিক গবেষণায় পাট নিয়ে কাজ সফল হয়। যদিও এটাকে চূড়ান্ত বলতে পারিনি তখন পর্যন্ত। কারণ, বাণিজ্যিক উৎপাদনের মতো সফলতার মুখ তখনও দেখা যায়নি। তবে ২০১৬ সালে আমরা সফল হই। পুরোপুরি পাট দিয়ে আমরা পলিথিন উদ্ভাবন করি। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাজে সন্তুষ্ট হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাগের নাম রাখেন ‘সোনালী ব্যাগ’। দেশ ও বিদেশের সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়। এই সোনালী ব্যাগ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারে পরীক্ষা চালানো হয়। তাতেও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।   

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সোনালী ব্যাগ
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি পরমাণু শক্তি কমিশনের দায়িত্ব পালন শেষে বিজেএমসিতে কবে থেকে যুক্ত হন?

মোবারক আহমদ খান: আমি ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি পরমাণু শক্তি কমিশনের দায়িত্ব পালন শেষ করি। এরপর সরকার আমাকে বিজেএমসির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

এখানে আমি মূলত পাটকেন্দ্রিক গবেষণাগুলোয় যুক্ত। ডেমরার লতিফ বাওয়ানি লিমিটেড জুট মিলে এখন আমাদের উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগের উৎপাদন চলছে। একটি প্রকল্প একদিনে সফল হয় না। পাট নিয়ে আমাদের গবেষণা, মান উন্নয়ন ও টেকসই করার কাজ তাই এখনো থেমে নেই। আমাদের কাজে সরকার এখন অর্থায়ন করছে। এ ছাড়া সোনালী ব্যাগের প্রচুর চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট থেকেও আমরা প্রায় ১০ কোটি টাকা পাই। তাই বলতে পারি, আমার উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ প্রকল্পটি একটি জায়গায় পৌঁছেছে। তবে পাট নিয়ে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। এর সমস্ত সম্ভাবনা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের সোনালী ব্যাগ প্রকল্পে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এককভাবে আমার ওপর আস্থা রেখে অর্থায়ন করে যাচ্ছেন। আমার জন্য অনেক সম্মানের বিষয় এটা।

প্রশ্ন :

ইতিমধ্যে ‘জুটম্যান’ হিসেবে আপনি বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। মানিকগঞ্জে আপনার শৈশবে বেড়ে ওঠার সময় কি পাট নিয়ে এমন কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন?

মোবারক আহমদ খান: এককথায় বলতে পারি, তেমন কিছু না। তবে ছোটবেলায় মানিকগঞ্জে নানাবাড়ি যেতাম। আমার নানার অনেক জমিতে পাটের আবাদ হতো। তবে পাট ও গাছ নিয়ে আমার চিন্তার শুরুটা মূলত কর্মজীবনে।

১৯৮৪ সালের ৪ মার্চ আমি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগ দিই। সেখানে গবেষণাগারে আমার কাজ ছিল গামা তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করে পলিমার মডিফিকেশন। আমরা আসলে চাইছিলাম দেশের কম দামী কাঠকে কীভাবে আরও মজবুত করা যায়। এ নিয়ে গবেষণার জন্য শুরুতে একটি প্রকল্প তৈরি করি। এর জন্য ভিয়েনার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন থেকে আমরা তহবিল পাই। তখন আমাদের চেষ্টা ছিল আম কাঠ, শিমুল কাঠের মতো দেশের সবখানে জন্মে এমন কাঠকে কীভাবে সেগুন ও মেহগনি কাঠের মতো টেকসই করা যায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই গবেষণা করতে। সেখান প্রথম গাছের সেলুলোজ নিয়ে কাজ করি। এ ছাড়া আমি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়েও এ নিয়ে গবেষণা করেছি। 

প্রশ্ন :

অস্ট্রেলিয়ায় পিএইডি শেষে আপনি তো বিদেশে বহু আকর্ষণীয় ও বড় অর্থের কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন। তবু দেশে ফিরলেন কেন?

মোবারক আহমদ খান: আমার মনে হয়েছে, যে দেশে জন্মেছি, সেই দেশেই আমার ফেরা উচিত। এটা ঠিক, আমার বহু কাজের প্রস্তাব ছিল। ইউরোপ, আমেরিকায় আমি উড়োজাহাজনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বোয়িং’ ও গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মার্সিডিজ’-এ কাজ করেছি। আমি পাট ব্যবহার করে এগুলোর ইন্টেরিয়র পাল্টে দিই। তখন আমার মনে হয়েছে, পাট নিয়েই যখন কাজ করব, তখন বিদেশে কেন? পাটের দেশেই ফিরে যাই। আমি জানতাম, বাংলাদেশে তখনও আমার কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত না। তবু আমি ২০০২ সালে ফিরে আসি।

প্রশ্ন :

আপনি পরমাণু শক্তি কমিশনে কাজ করেছেন। অথচ গাছ, বিশেষ করে পাট নিয়ে আপনার কাজে দারুণ  মগ্নতা। কেন?

মোবারক আহমদ খান: এর কারণ, সহজভাবে বলা যায়, আমার কাজে পাট হচ্ছে প্রধান সহায়ক উপাদান। আমি এর সঙ্গে ব্যবহার করি রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়তা)। ব্যবহারের জন্য আমি কিছু নতুন কৌশল ব্যবহার করি। আর এমন কাজ দেশে শুধু পরমাণু শক্তি কমিশনের গবেষণাগারেই করা সম্ভব।

মোবারক আহমদ খানের হাতে সোনালী ব্যাগ।
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শুধু সোনালী ব্যাগ নয়, পাট থেকে আপনি আরও পণ্য উদ্ভাবন করেছেন। এ নিয়ে জানতে চাই।

মোবারক আহমদ খান: পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে আমার প্রথম কাজ ছিল পাট দিয়ে ঢেউটিন উদ্ভাবন। এটি ‘জুটিন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের অনেকগুলো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। পরে অবশ্য তা হয়ে উঠেনি। কেন, তা বিজ্ঞানী হিসেবে আমার জানা নেই। তবে গত কয়েক বছরে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনডিপি আশ্রয়প্রার্থীদের ঘর নির্মাণে ‘জুটিন’ ব্যবহার করছে। কোভিডের সময় আমরা পাটে তৈরি ‘পিপিই’ উদ্ভাবন করি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে পুরস্কৃত হয়েছে।

প্রশ্ন :

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই ঘোরতম সময়ে বাংলাদেশে পাটের সম্ভাবনার দিকগুলো ব্যাখ্যা করবেন কি?

মোবারক আহমদ খান: আগেও বলেছি, পাটকে আমার মনে হয় বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে আমাদের কাজে অগ্রগতিও কম নয়। দেশের প্রয়াত বরেণ্য বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও বর্ষীয়ান বিজ্ঞানী প্রফেসর হাসিনা খান পাটের জিন রহস্য উদ্ভাবন করেছেন। হাসিনা খানের সঙ্গে আমার যৌথভাবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, পাট নিয়ে সম্ভাবনার শেষ নেই।

ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় ঘর, আসবাবসহ বহু কিছুর ইন্টেরিয়রে পাট সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ আছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখন বিশ্বপর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানেও পাটের মাইক্রোসেলুলোজ ব্যবহারের সুযোগ আছে। এখন আমরা কাজ করছি পাটের সেনিট্যারি ন্যাপকিন নিয়ে। এটিও পরিবেশবান্ধব ও বিশ্ববাজারে দেশকে নতুনভাবে পরিচিত করতে সক্ষম। তাই আমার মনে হয় পাট নিয়ে সম্ভাবনা অন্তহীন। তবে এর জন্য আরও গবেষণা দরকার। এর চেয়েও বড় কথা, পাট নিয়ে দেশের শিল্প-উদ্যোক্তাদের ভাবতে হবে।

প্রশ্ন :

এ প্রশ্নটি অনেকের মনেই হয়তো আছে। আবিষ্কারের পর বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে, তবু কেন সোনালী ব্যাগ এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে পারেনি?

মোবারক আহমদ খান: সোনালী ব্যাগ ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমে বলতে হবে তহবিল সংকটের কথা। আমাদের যন্ত্রের অভাব আছে। যে যন্ত্র দিয়ে আমরা এখন এ ব্যাগ বানাচ্ছি, তা দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি। বিপুল উৎপাদনের জন্য আমাদের দরকার আরও বড় আকারের যন্ত্র। এমন যন্ত্র দেশে নেই। আমাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রের রেপ্লিকা দেখিয়ে বিদেশের প্রতিষ্ঠানকে বলতে হবে, ‘এমন যন্ত্র বানিয়ে দাও।’ তাহলে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব।

আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা। বিশ্ববাজারে সোনালী ব্যাগকে পরিচিত করাতে উদ্যোগ জরুরি। সুনির্দিষ্ট বিপণন প্রক্রিয়া দরকার অন্য দেশের বাজারে প্রবেশের জন্য। যে বিষয়গুলো বিজ্ঞানী হিসেবে আমার কাজ নয়। পাট ছাড়া অন্য উপাদান দিয়ে যেসব বিকল্প উদ্ভাবন হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করা দরকার। তা ছাড়া আরও গবেষণা ও লোকবল দরকার আমাদের প্রকল্পে। তবে ভালো সংবাদ হচ্ছে, এটি নিয়ে বিজেএমসি সক্রিয় আছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সচেষ্ট। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পরীক্ষামূলক পর্যায় থেকে বেশি পরিমাণে (বাণিজ্যিকভাবে) উৎপাদনে যেতে পারব।

প্রশ্ন :

অনেকে বলছেন, পলিথিনের চেয়ে সোনালী ব্যাগের দাম বেশি। এমন তুলনা সম্পর্কে কী বলবেন?

মোবারক আহমদ খান: নিষিদ্ধ পলিথিনের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা করতে আমি রাজি নই। এটি আমাদের সরকার আইন করে নিষিদ্ধ করেছে। কারও কাছে পাওয়া গেলে তার জরিমানা হবে, এমন বিধান পর্যন্ত আছে। তাহলে সেরকম বস্তুর সঙ্গে কেন আমরা সোনালী ব্যাগের তুলনা করতে যাব?   

বাণিজ্যের সহজ নিয়মেই আমরা জানি, একটি পণ্য যখন বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা হয়, তখন এর দাম কমে আসে। আর আমাদের ব্যাগ যে খুব ব্যয়বহুল, তাও নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের হিসেবে পলিথিনের চেয়ে সোনালী ব্যাগের দাম মাত্র দেড় গুণ বেশি।

প্রশ্ন :

দূষণ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে একটি প্লাস্টিকমুক্ত গ্রহের স্বপ্ন কি আপনি দেখেন?

মোবারক আহমদ খান: অবশ্যই, কারণ আমি আশাবাদী মানুষ। বিশ্ব বদলাচ্ছে। নতুন মহামারি এসেছে, ভ্যাকসিনও এসেছে। এভাবে মানুষ সচেতন হচ্ছে। একদিন এভাবে প্লাস্টিক পরিবেশের যে ক্ষতি করছে, তা বিশ্বের সব মানুষের বোধগম্য হবে। তখন বিকল্প তৈরি হতে বাধ্য। সে সময় মানুষ আমাকে বা বাংলাদেশের পাট নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীদের মনে রাখবে কি না, তা নিয়ে আমি ভাবি না।

এখন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ নিয়ে সবাই কথা বলছেন। আওয়াজ উঠছে ‘পরিবেশ বাঁচাও’। আমি এ প্রসঙ্গে বলি, সবার বলা উচিত, ‘পরিবেশ ধ্বংস করব না।’ ব্যক্তি হিসেবে আমরা কেউ এর বাইরে নই। আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করছি, যেগুলো কতটুকু পরিবেশ সম্মত, এ নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।

প্রশ্ন :

‘জুটম্যান’-এর পাট ও পাটের দেশ নিয়ে আর কী কী স্বপ্ন আছে, যদি জানাতেন।

মোবারক আহমদ খান: আগামীতে উপযুক্ত সহায়তা পেলে আমরা, দেশের বিজ্ঞানীরা, পাট নিয়ে আরও বড় আবিষ্কার করব, এ প্রত্যাশা আমার দৃঢ়। বিশেষ করে পাটের সেলুলোজ থেকে ন্যানো ক্রিস্টাল ও ন্যানো ফাইবার নিয়ে অনেক কাজ সামনে হবে।   

আগেই বলেছি, বাংলাদেশে পাটের সম্ভাবনা অনন্ত। আমি স্বপ্ন দেখি, এমন এক সময় আমাদের দেশে আসবে, যখন একজন পাটচাষী পাঁচ কেজি পাটের বিনিময়ে এক মণ ধান বিনিময় করতে পারবেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ: ১৭ ও ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

স্থান: বিজেএমসি ভবন, মতিঝিল, ঢাকা