কুকুর কেন এত বিশ্বস্ত!

প্রাণীকুলের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে পরিচিত কুকুর। মনিবের জন্য কুকুরের জীবন দেওয়ার নজিরও আছে। কিন্তু কেন কুকুর এত বিশ্বস্ত হয়? কীভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশ তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বিশ্বস্ততা’ শব্দটি মানুষেরই তৈরি। কুকুর এই শব্দের মর্মার্থ বোঝে না। বরং বিষয়টা নিয়ে একটু অন্যভাবে ভাবা যায়। আমরা যে আচরণগুলোকে বিশ্বস্ত হিসাবে ভাবি, কুকুর সেই আচরণগুলো করে। কিন্তু কেন কুকুর মানুষের পছন্দের আচরণ করে? নিজেকে কেন বিশ্বস্ত প্রমাণ করতে চায়?

এর মূল কারণ জিনগত। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী বেশ কয়েকটি কুকুরের জিনে নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁরা কুকুরের জিনে বৈচিত্র্য খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, এই বৈচিত্র্য  কুকুরগুলোকে নেকড়ের চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলে। একটা প্রশ্ন আসতে পারে। নেকড়ের সাথে কেন তুলনা করলাম? কারণ, কুকুর ও নেকড়ে একই গোত্রের মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী।

পাশাপাশি কুকুর ও নেকড়ে
আজ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে মানুষ এবং কুকুরের প্রথম মিথোজীবীক বন্ধন সৃষ্টি হয়।

আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে মানুষ কুকুরকে পোষ মানাতে সক্ষম হয়েছিল। সে সময় পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়াত আদিম মানুষ। আজকের কুকুরও ছিলো তখনকার নেকড়ে। নেকড়েদের পোষ মানানোর ফলে আজকের দিনে আমরা পেয়েছি আধুনিক কুকুর। মানুষের জীবনযাপনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কুকুরেরও পরিবর্তন হয়েছে। 

আজ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে মানুষ এবং কুকুরের প্রথম মিথোজীবীক বন্ধন সৃষ্টি হয়। মিথোজীবী বলতে বোঝায়, দুটি জীবের একত্রে বসবাসের কারণে উভয়ই উপকৃত হবে। নেকড়েরা আদিম মানুষের কাছে ঘেঁষতে শুরু করে আগুন ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশের লোভে। অন্যদিকে মানুষের প্রয়োজন ছিলো নিরাপত্তা। আদিম মানুষ আশ্রয়হীন খোলা আকাশের নিচে বাস করতো। অন্যান্য শিকারী পশুপাখিদের ভয় তো ছিলই। আদিম মানুষ তাই নেকড়েদেরকে কাজে লাগাতে শুরু করলো শিকার ও পাহারার কাজে। বিনিময়ে নেকড়েরা পেত খাদ্য। সেই নেকড়েই হাজার বছর পর পরিণত হয়েছে আজকের কুকুরে।

কুকুর সামাজিক প্রাণী। এরা যাকে নেতা হিসেবে দেখে, তার প্রতি নিবেদিত থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুকুরের বিশ্বস্ত হওয়ার আরও একটি কারণ ভালোবাসা। তাঁদের মতে, কুকুর সম্ভবত ভালোবাসার কারণে এরকম আচরণ করে। কুকুর মানুষের আবেগ বুঝতে বুঝতে পারে। যারা কুকুরকে বেশি খাবার দেয়, কুকুর তাদেরকেই বেশি পছন্দ করে । এমনকি কুকুরের সাথে খেলাধুলা করা, তাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোনো, মজার উপায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া ইত্যাদিও মানুষের সাথে কুকুরের বন্ধনকে দৃঢ় করে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আবার মনে করেন, কুকুরের সাথে মানুষের সম্পর্ক হচ্ছে বাবা-মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্কের মতো। অর্থাৎ, কুকুরের কাছে এমন কিছু আশা করা উচিত নয়, যা আমরা শিশুর কাছে করি না। 

এছাড়াও, কুকুর সামাজিক প্রাণী। এরা যাকে নেতা হিসেবে দেখে, তার প্রতি নিবেদিত থাকে। নেতা হিসেবে কুকুর মানুষকেও বেছে নেয়। কেননা, মানুষ তাদের খাদ্যের জোগানদাতা। মানুষের দেয়া খাদ্য, পানীয়ের কারণে কুকুররা মানুষকে বিশ্বাস করে এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে৷ কিছু গবেষণা বলছে, মানুষের প্রতি তাদের সহানুভূতি তৈরি হয়। ফলে এরা মানুষের অনুভূতি বুঝে নিজেদেরকে অভিযোজিত করে। এ কারণেও মানুষ কুকুরকে বিশ্বস্ত এবং অনুগত হিসেবেই পায়। বাড়ির পাহারার কাজ থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রেও বর্তমানে কুকুরকে কাজে লাগানো হচ্ছে। মাটির তলায় পুতে রাখা বোম খুঁজতেও কুকুরের জুড়ি মেলা ভাড়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: ডেইলি পাওস ও খান একাডেমি।