সাইনোসাইটিস কীভাবে হয়

সাইনোসাইটিস বেশ পরিচিত শব্দ। প্রচণ্ড মাথাব্যথা, দাঁতব্যথা, মাথা ভারী মনে হওয়া—এসবই সাইনোসাইটিসের লক্ষণ। সাইনাসে ইনফেকশন হলে এই সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু এই সাইনাস কী?

আমাদের মুখমণ্ডলের হাড়ের ভেতরে কিছু বায়ুগহ্বর আছে। এরা আবার এসে মিলেছে নাকের গহ্বরের সঙ্গে। এই বায়ুগহ্বরগুলোকেই বলে সাইনাস। আমাদের এমন সাইনাস আছে আটটি, মানে চার জোড়া। কপালে, দুই ভ্রুর মাঝামাঝি একটুখানি ওপরে আছে এক জোড়া ফ্রন্টাল সাইনাস। জোড়া এথময়েড সাইনাস থাকে চোখের একটুখানি নিচে, নাকের দুই পাশে। নাকের দুই পাশে আরেকটু ভেতরের দিকের গালে, চোয়ালের হাড়ের পেছনে থাকে এক জোড়া ম্যাক্সিলারি সাইনাস আর সর্বশেষ একজোড়া স্ফিনয়েড সাইনাস থাকে দুই চোখের পেছনে।

এই সাইনাসগুলোকে ঘিরে এক বিশেষ কোষ থাকে। এদের কাজ পাতলা একধরনের পিচ্ছিল জেলির মতো তরল ক্ষরণ করা। একে মিউকাস (Mucus) বলে। আমাদের নাসারন্ধ্রের মাঝে মিউকাসের একটা পিচ্ছিল আবরণ থাকে। সাইনাসের আসল কাজ কী, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। কিন্তু সাইনাস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যেমন নিশ্বাসের সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস টেনে নিলে সেটা ফুসফুসে যাওয়ার আগেই সাইনাস সেটাকে একটু উষ্ণ ও আর্দ্র করে তোলে, যাতে ফুসফুসের সমস্যা না হয়।

মাথার খুলির হাড়ের যে ভার, সাইনাসের কারণে সেটা একটুখানি হালকা হয়ে যায় (এটার একটা ভালো উদাহরণ পাখির হাড়ের মাঝে থাকা বায়ুগহ্বর, যে কারণে পাখি হালকা হয়, ফলে উড়তে পারে)। সাইনাস না থেকে ওই জায়গাটুকুও হাড় দিয়ে ভরাট হয়ে গেলে মাথার ভার বহন করতে আমাদের বেশ ঝামেলা হতো।

কোনো কারণে ঠান্ডা লেগে ফ্লু হলে, কিংবা কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে সাইনাসের মিউকাস ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মিউকাসের যে আবরণ নাসারন্ধ্রকে ঘিরে আছে, তা আয়তনে বৃদ্ধি পায়। অধিক মিউকাস ক্ষরণের ফলে সাইনাসের মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচলের খোলা জায়গাটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই বলে সাইনোসাইটিস। সাইনোসাইটিসের জন্য মাথা ভার হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, দাঁতব্যথা ছাড়াও গলার স্বর ভেঙে যেতে পারে।

স্থায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে সাইনোসাইটিস দুই রকমের হতে পারে। চার-আট সপ্তাহের মাঝে ভালো হয়ে গেলে একে বলে অ্যাকিউট সাইনোসাইটিস এবং এটি আট সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে একে বলে ক্রনিক সাইনোসাইটিস। সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে সাধারণ চিকিত্সা হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে এবং নিয়মিত নাকের ভেতরের দিক ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলে একটু সুবিধা হয়। খুব সমস্যা হলে অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত