প্রাণিজগৎ
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ৭ জীব-জন্তু
চমৎকার এক গ্রহে বাস করি আমরা। ছোট থেকে বড় নানা জিনিসে ভরপুর চারদিক। আশপাশে রয়েছে নানা জীব। এর মধ্যে কিছু আমরা দেখতে পারি। বাকিগুলোর কথা আমরা নানাভাবে জানি, দেখি। তবে এই লেখায় নির্দিষ্ট কোনো প্রজাতির সবচেয়ে বড় জীব নিয়ে আলোচনা না করে সাত প্রজাতির ৭টি বড় জীব নিয়ে আলোচনা করব। আগেই জানিয়ে রাখি, জীব মানে কিন্তু শুধু হাতি বা নীল তিমিকেই বোঝায় না, গাছ, ফুল বা ফাঙ্গাসও জীবের তালিকায় পড়ে।
সবচেয়ে বড় ফুল
শেকসপিয়ার বিখ্যাত নাটক রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটে লিখেছিলেন, ‘গোলাপের যে নামই হোক না কেন, এর গন্ধ হবে মিষ্টি।’ তবে শেকসপিয়ার হয়তো কখনো ‘কর্পস ফ্লাওয়ার’ তথা মৃতদেহের ফুলের দেখা পাননি। দেখা পেলে হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ফুল নিয়ে একটা লাইন লিখতেন। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম র্যাফ্লেসিয়া আর্নল্ডি (Rafflesia arnoldii)। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও জাভাসহ বেশ কিছু দক্ষিণ এশিয়ার দেশে এ ফুল দেখা যায়। এটি প্রায় ৩ ফুট চওড়া, অনেকটা বড় ট্রাকের চাকার মতো। এর ওজন ১১ কেজির মতো হতে পারে। পৃথিবীতে এই ফুলের প্রায় ৩০টি প্রজাতি রয়েছে। এ ফুলের গন্ধ গোলাপের মতো মিষ্টি নয়, পচা মাংসের মতো।
সবচেয়ে বড় প্রাণী
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি। তিমি কিন্তু মাছ নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়। একটা নীল তিমির বাচ্চার দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ২৫ ফুট। মানুষের সাধারণ গড় উচ্চতা ৫-৬ ফুট। সে হিসেবে একটা তিমির বাচ্চা কত বড় হয়ে জন্মায়, ভাবুন! আর পূর্ণবয়স্ক তিমিটাই-বা কত বড় হবে! প্রথম এক বছরে প্রতিদিন তিমির বাচ্চার ওজন বাড়ে প্রায় ৯০ কেজি করে। এভাবে বাড়তেই থাকে। পৃথিবীতে বসবারকারী সবচেয়ে বড় প্রাণী এই নীল তিমি। হ্যাঁ, সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের চেয়েও বড়! তিমি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা এবং ২০০ টন ওজনের হতে পারে। এদের জিহ্বার ওজনই একটা হাতির সমান। আর হৃৎপিণ্ডের ওজন গড়পড়তা গাড়ির ওজনের সমান। এরা এত জোরে শব্দ করতে পারে যে ১ হাজার মাইল বা ১৬০০ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়।
সবচেয়ে বড় স্থলচর প্রাণী
স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী আফ্রিকান বুশ হাতি। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ ফুট এবং উচ্চতা ১৩ ফুট। ১১ টন ওজনের এই হাতি প্রায় ১৮০ কেজি ওজনের বস্তু তুলতে পারে। এরা আফ্রিকার মরুভূমি, রেইনফরেস্ট ও জঙ্গলে বাস করে। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৬০ কেজির বেশি গাছপালা খায়। এই হাতি গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি দিন অতিবাহিত করে, প্রায় ২২ মাস।
আয়তনে সবচেয়ে বড় গাছ
আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাছটির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে দৈত্যাকার এই গাছ। নাম জেনারেল শেরম্যান। গাছটির আয়তন প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ ঘন ফুট। এর উচ্চতা ২৭৪.৯ ফুট। যদিও উচ্চতায় এটা সবচেয়ে বড় গাছ নয়। পৃথিবীতে ৩৭৯.৭ ফুট উচ্চতার গাছও রয়েছে। সে গাছের নাম রেডউড হাইপেরিয়ন। জেনারেল শেরম্যানের বয়স প্রায় ২ হাজার বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে গাছটি রয়েছে মধ্য বয়সে। অর্থাৎ আরও ২ হাজার বছর পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়ে থাকবে গাছটি।
বৃহত্তম অমেরুদণ্ডী প্রাণী
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অমেরুদণ্ডী প্রাণী হলো একটা স্কুইড। স্কুইডের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় এই অমেরুদণ্ডী প্রাণীটির ওজন সাড়ে চারশ কেজির বেশি। এরা প্রায় ৩০ ফুট লম্বা হতে পারে। এদের নাম ক্লোসাল স্কুইড বা বড় স্কুইড। বৈজ্ঞানিক নাম মেসোনিচোটেথিস হ্যামিল্টনি (Mesonychoteuthis hamiltoni)। রহস্যে ভরা এদের জীবন। সমুদ্রের প্রায় ৬ হাজার ৫৬০ ফুট নিচে বাস করে। এদের আট পায়ের সাহায্যে নিজেদের শরীরের আকারের চেয়ে বহু গুণ বড় শিকার ধরতে পারে অনায়েসে।
সবচেয়ে বড় সরীসৃপ
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপ হলো লবণাক্ত পানির কুমির। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ক্রোকোডাইলাস পোরোসাস (Crocodylus porosus)। এরা ২২ ফুট লম্বা হয় এবং ওজন প্রায় ২ হাজার কেজি। শিকার ধরতে অত্যন্ত দক্ষ। শরীরের আকারের কারণে পানিতে লুকিয়ে থাকা সহজ। মহিষ, বানর, এমনকি হাঙরও শিকার করে এরা। এককথায়, ওদের অঞ্চলে যে প্রাণীই আসুক না কেন, সেটাকে পরাস্ত করতে সব সময় তৈরি থাকে এসব কুমির। মুখ ও লেজের আঘাতে শিকারকে পরাস্ত করে অগভীর জায়গায় টেনে আনে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অন্যান্য কুমিরের চেয়ে লবণাক্ত পানির কুমির বেশি হিংস্র এবং শিকারের জন্য সবসময় ওঁত পেতে থাকে।
সবচেয়ে বড় পাখি
নামে পাখি হলেও এরা উড়তে পারে না। নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, উট পাখির কথা বলছি। উট পাখিকেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখির খেতাব দেওয়া হয়েছে। এদের ওজন প্রায় ১৬০ কেজি। ৯ ফুট উঁচু এই উটপাখি উড়তে না পারলেও দৌড়াতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেগে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী পাখিও বলা যায় উট পাখিকে।