ঘুমের রাজ্য দেহের কর্মশালা

মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনছবি: সংগৃহীত

দিনের কাজ শেষে বিছানায় পিঠ ঠেকাতেই দুচোখ জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। সকালে ওঠার পর ঝরঝরে লাগে। ঘুমের ভেতরে কখন যে সব ক্লান্তি ধুয়ে-মুছে গেছে, বলার উপায় নেই। নতুন দিনের কর্মযজ্ঞের জন্য দেহ পুরোপুরি প্রস্তুত।

মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই তাই ঘুমাতে ভালো লাগে। শান্তি লাগে। তবে ঘুমের সময় দেহ কিন্তু নিষ্ক্রিয় থাকে না। কোষের ভেতরে চলে বিপুল কর্মযজ্ঞ। ঘটে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। দেহ-মন যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য এসব পরিবর্তন জরুরি।

যেমন ঘুমের সময় দেহ হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কুইনসল্যান্ড হেলথ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গ্রোথ হরমোন, কর্টিসল ও মেলাটোনিনের মতো বিভিন্ন হরমোন তৈরির কাজটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ঘুম। কোষ তৈরি ও মেরামতের জন্য গ্রোথ হরমোন কাজে লাগে। কর্টিসল স্ট্রেসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আর ঘুম ও জেগে থাকার চক্রটি নিয়ন্ত্রণের কাজ করে মেলাটোনিন। ঘুমের অভাব হলে তাই এসব হরমোন ঠিকভাবে নিসৃত হয় না। শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, দেখা যায় অবসিটি বা স্থূলতা এবং কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা জটিলতা।

দিনের সব স্মৃতি মস্তিষ্ক একসঙ্গে সাজিয়ে রাখে এই ঘুমের সময়ই
ছবি: সংগৃহীত

দিনের সব স্মৃতি মস্তিষ্ক একসঙ্গে সাজিয়ে রাখে এই ঘুমের সময়ই। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি।

এ ছাড়া ঘুমের সময় ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সেরে ওঠে। তৈরি হয় নতুন করে। পেশি, হাড় বা অন্যান্য অঙ্গের মতো যেকোনো টিস্যু মেরামতের জন্য ঘুম অতি দরকারি। এ ক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের বড় ভূমিকা আছে। গ্রোথ হরমোন মূলত টিস্যুর সেরে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা তৈরি করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তাই টিস্যু তৈরি বা সেরে ওঠার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। যেকোনো অসুখ সারতে দেরি হয়।

ঘুমের অনেকটা দুর্বোধ্য এক অংশের নাম স্বপ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা ঘুমের রেম পর্যায়ে তৈরি হয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও স্মৃতি প্রক্রিয়াজাত করতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমাদের চেতন বা অবচেতন ভাবনা এবং অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে স্বপ্নে। তবে সব স্বপ্ন অর্থবহ হয় না। মনেও থাকে না বেশি সময়। কিন্তু মানসিক ও আবেগের দিক থেকে ভালো থাকার জন্য স্বপ্ন দেখা বেশ জরুরি।

দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, এমনকি শর্করা হজম প্রক্রিয়াও নিয়ন্ত্রণ করে ঘুম। এটি দেহের জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সার্বিকভাবে ভালো থাকার পেছনে ঘুম তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে অতিরিক্ত ঘুমানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা পূর্ণবয়স্ক মানুষকে প্রতিরাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এটুকু ঘুমই দেহের জন্য যথেষ্ট। অতিরিক্ত ঘুম শরীরকে অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। শরীর হয়ে পড়তে পারে নিশ্চল, অস্থিতিশীল।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: বাইজুস, ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন, উইকিপিডিয়া