সম্প্রতি একদল বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো ওষুধ তৈরি করেছেন দেশে। এই বায়োলজিক ওষুধ তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোষবিজ্ঞানী কাকন নাগ ও জিনবিজ্ঞানী নাজনীন সুলতানা। এই বিজ্ঞানী দম্পতির সঙ্গে আরও কাজ করেছেন ১০ তরুণ গবেষক। তাঁদের গবেষণায় সহায়তা করেছে বাংলাদেশি জীবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক। এর আগে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ নামে করোনা টিকা আবিষ্কার করেছিলেন কাকন নাগ।
বর্তমানে বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা ইরাইথ্রোপোয়েটিন নামে একটি ওষুধ তৈরি করেছেন। এটি একধরনের প্রোটিন হরমোন। কিডনি ও যকৃতে এই হরমোন তৈরি হয়। অস্থিমজ্জার মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই হরমোন থেকেই তৈরি হয় লোহিত রক্তকণিকা। কিডনি ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্থ হলে শরীরে এর উৎপাদন কমে যায়। ফলে লোহিত রক্তকণিকা আর তৈরি হতে পারে না। মানুষ রক্তস্বল্পতায় ভোগে। দেখা দেয় অক্সিজেন ঘাটতি। এতে মৃত্যুও হতে পারে। এই চিকিৎসার জন্যই এ বায়োলজিক ওষুধ তৈরি করা হয়েছে।
ওষুধটি মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও কার্যকরী। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এ ওষুধ রোগীদের দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোকে
বায়োলজিক ওষুধ তৈরি হয় জীবন্ত কোষ বা ডিএনএ থেকে। আসলে বাজারে দুই ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা সাধারণ যে প্যারাসিটামল খাই, সেগুলো রাসায়নিক ওষুধ। আর ইনসুলিন কিংবা করোনার টিকা হলো বায়োলজিক ওষুধ। এই ওষুধ তৈরি করতে প্রথমে ইরাইথ্রোপোয়েটন উৎপাদনকারী কোষের প্রতিলিপি বা ক্লোন তৈরি করা হয়। এভাবে তৈরিকৃত অনেক ক্লোন থেকে সংগ্রহ করা হয় শুধু ভালো মানেরগুলো। সেখান থেকে তৈরি হয় এই ওষুধ।
২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। এরপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাও করা হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৪২ জনের শরীরে তা প্রয়োগ করে দেখেছেন গবেষকেরা। ওষুধটি মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও কার্যকরী। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এ ওষুধ রোগীদের দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোকে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হয়। কিন্তু বায়োলজিক ওষুধগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ ওষুধ তাই বাংলাদেশকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করবে।