আমাদের দেশে বেশির ভাগ অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ টিটেনাসের টিকা নেন। এই রোগ হাড়ে চিড় ধরায়, কখনো কখনো রোগটি হতে পারে প্রাণঘাতী। কিন্তু টিটেনাস আসলে কী?
টিটেনাস হয় ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থেকে। ইনফেকশনের কারণে হওয়া মেডিকেল কন্ডিশনকে বলা হয় টিটেনাস।
ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত দেহে টিটেনোস্প্যাসমিন নামের বিষ ত্যাগ করে। এই বিষ সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে। ফলে মাংসপেশির স্নায়ুতে পৌঁছানো সংকেত কোষগুলোকে অস্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধ্য করে। এর প্রভাবে পেশিতে খিল ধরে, টান পড়ে। এই টান পড়া কিছু সময় এত বেশি হয় যে হাড়ে চিড় ধরে যায়। এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে রোগী শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণও করতে পারে।
মাটি, কাদা, প্রাণীর বিষ্ঠা—এসব জায়গায় ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি ব্যাকটেরিয়ার বাস। এটি গড়ে ২.৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত বড় হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এই ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণত যেসব জায়গায় অক্সিজেন পৌঁছায় না, সেখানেও এগুলো দিব্যি বাস করতে পারে। তাই গভীর ক্ষতেও এগুলো টিকে থাকে। তবে এক দেহ থেকে আরেক দেহে সংক্রমিত হয় না টিটেনাস।
১৯৪০ সালের পর থেকে টিটেনাস টিকার ব্যাপক ব্যবহার উন্নত দেশে রোগটাকে প্রায় বিলুপ্ত করে দিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এখনো প্রতিবছর লাখো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ১০ হাজার মানুষ। মৃতদের বেশির ভাগই শিশু।
টিকার মাধ্যমেই টিটেনাস প্রতিরোধ সম্ভব। টিকার কার্যকারিতা বজায় রাখতে প্রতি ১০ বছরে ১ ডোজ করে নিতে হবে। তবে শিশু অবস্থায় জন্মের প্রথম বছরে তিন ডোজ এবং পাঁচ বছর বয়সে আবার টিকা দিতে হবে।
আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের জন্য হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন। পাশাপাশি রোগমুক্ত হতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো গ্রহণ করতে হয় অ্যান্টিবায়োটিক।
গ্রন্থনা: শিক্ষার্থী, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ইলাস্ট্রেটেড