ত্বক সমাচার

প্রথমেই দেহে ত্বক থাকার জন্য একটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ অঙ্গটি না থাকলে আপনার দেহের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাইরে ঝুলে থাকত

শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও মানবদেহের বড় অঙ্গ বৃহদন্ত্র, যকৃত কিংবা হাত-পা নয়; ত্বক। সোজা বাংলায় যাকে বলে চামড়া। সে জন্যই রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝে একটা স্লোগান শোনা যায়, ‘ওমুকের চামড়া, তুলে নেব আমরা।’ এরকম হুমকি যাঁরা দেন, নিঃসন্দেহে তাঁরা অল্পতে খুশি হন না। তাঁরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন, ‘মারিত গণ্ডার, লুটিত ভাণ্ডার’ প্রবাদে। কারণ তাঁরা দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গটাই খুলে নিতে চায়। একই কারণে বোধহয় সেলিব্রিটিরা এর এত যত্ন নেন। ভিটামিন বা মিনারেল সমৃদ্ধ সাবান থেকে শুরু করে ক্রিম-লোশন, তেল—কত কিছু মাখেন। কিন্তু এর অনেক কিছুই আসলে বিজ্ঞাপনী ষড়যন্ত্র। ত্বকে ভিটামিন এ, বি, সি কিংবা অন্য ভিটামিন মেখে খুব বেশি লাভ নেই। সে কথা সময় পেলে বলা যাবে। আগে ত্বক নিয়ে কয়েক ছত্র বলা যাক।

প্রথমেই দেহে ত্বক থাকার জন্য একটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ অঙ্গটি না থাকলে আপনার দেহের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাইরে ঝুলে থাকত। ভেবে দেখুন, চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা হতো তাহলে। দেহের মাংসগুলো কতিপয় হাড়ের সঙ্গে বাড়ি খেত। হাঁটার সময় সেগুলো আপনাকে অনুসরণ করত লেজের মতো। আর সৌন্দর্যের কথা না হয় বাদই দিলাম। সাধে কী আর সারা বিশ্বে ত্বকের রং ফর্সাকারী ক্রিমের এত রমরমা!

সাধারণ ভাষায় একে স্কিন বা ত্বক বলা হলেও এর একটা গালভরা বৈজ্ঞানিক নামও আছে। সেটি হলো, কিউটেনিয়াস সিস্টেম (Cutaneous system)। নামটি সত্যিই কিউট। ল্যাটিন শব্দ কিউটিস (Cutis) অর্থ ত্বক, সেখান থেকেই কিউটেনিয়াস শব্দটির আগমন। সাধারণভাবে ত্বকের আকার প্রায় দুই বর্গ মিটার (প্রায় ২০ বর্গ ফুট)।

পাস্তা বা নুডলস যেমন পানিতে ভেজালে ফুলে ওঠে ও নরম নরম হয়ে যায়, গোসল করলে আমাদের ত্বক তেমন হয় না কেন
মডেল: নাজিয়া, কৃতজ্ঞতা: শোভন মেকওভার, ছবি: সুমন ইউসুফ

ত্বক দেহের চরম সংবেদনশীল অঙ্গ। তাই চামড়া খুলে ফেলার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। তবে শুরুতে যে হুমকিদাতাদের কথা বলেছি, তাঁদের মতো করে একটু চিন্তা করে দেখা যাক। গা থেকে যদি পোশাকের মতো চামড়া খুলে ফেলে সূক্ষ্ণ কোনো দাড়িপাল্লায় মাপা যেত, তাহলে কী হতো? দেখা যেত, ব্যক্তিভেদে চামড়ার ওজন ৪ থেকে ৮ কিলোগ্রাম (নির্ভর করে মানুষটি কত লম্বা বা খাটো কিংবা পেটের ভুড়ি ও নিতম্বের আকৃতি কতুটুকু)। মোটামুটি দেহের মোট ওজনের ১৫ শতাংশ। মানে মোটামুটি প্রমাণ সাইজের চার থেকে আটটি মুরগির ওজনের সমান।

দেহের অন্য অঙ্গের মতো ত্বকও তৈরি হয় দেহকোষ দিয়ে। চুলের মতো এরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেরাটিন। সে কারণে চামড়া আগুনে পুড়ে গেলে চুলপোড়ার মতো গন্ধ পাওয়া যায়। গোটা দেহের চামড়ার জন্য প্রায় ৩৫ বিলিয়ন বা ৩৫০০ কোটি কোষ দরকার। এটি কিন্তু অনেক বড় একটি সংখ্যা। অনেকে হয়তো জানেন, মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৭ বিলিয়ন বা ১৩৭০ কোটি বছর। চলুন, ৩৫০০ কোটি সংখ্যাটা আরেকভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাক। এই সংখ্যক হ্যামস্টার যদি এক লাইন করে দাঁড় করানো হয়, তাহলে যে দৈর্ঘ্য হবে, তা আসলে সূর্যের চারপাশে একপাক ঘুরে আসার সমান।

বাইরে থেকে ত্বককে একটা আস্ত জিনিস বলে মনে হলেও, এর আসলে দুটি অংশ। বলা ভালো দুটি স্তর। ভেতরের স্তরকে বলা হয় ডার্মিস বা অন্তঃত্বক আর বাইরের স্তরকে বলা হয় এপিডার্মিস বা বহিঃত্বক। এদের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ডার্মা (derma) থেকে, যার অর্থও ত্বক। আর এপি (epi ) অর্থ ওপরের। কাজেই সহজেই বুঝতে পারছেন কোন শব্দটি কী অর্থ বহন করে। যে অংশটি দেখতে ও স্পর্শ করতে পারেন, মানে বাইরের স্তরকে বলে এপিডার্মিস। বাংলায় বহিঃত্বক। এর আরেক নাম স্ট্রাটাম কর্নিয়াম। বহিঃত্বক গড়ে ওঠে মৃত কোষ দিয়ে। এই শব্দগুচ্ছের ল্যাটিন আক্ষরিক অর্থ, কাঁটাযুক্ত স্তর। মজার ব্যাপার হলো, আপনার সৌন্দর্যও নির্ভর করে এই মৃতকোষের ওপর। দেহের যে অংশটি বাতাসের সংস্পর্শে থাকা সেগুলো আসলে মৃত, বা কোষের লাশ।

পাস্তা বা নুডলস যেমন পানিতে ভেজালে ফুলে ওঠে ও নরম নরম হয়ে যায়, গোসল করলে আমাদের ত্বক তেমন হয় না কেন? সেটা হলে কী বিপর্যয় হতো, নিজেই একবার ভেবে দেখুন। গোসলের পরে ফুলে ঢোল হয়ে যেতেন আপনি। কী বিটঘুটে ব্যাপার! আর দেহের ভেতর পানি ঢুকেও বাধাত আরও অনেক বিপত্তি। আসলে সেটা যে হয় না, সে জন্য ধন্যবাদ দিতে হবে বহিঃত্বককে। এটাই আপনার দেহকে ওয়াটার প্রুফ করে রাখে।

আক্ষরিক অর্থেই আমাদের দেহ ছিদ্রবহুল। কেউ জানে না, ত্বকের ছিদ্রের সংখ্যা মোট কতটা। বেশির ভাগ হিসেবে দেখা গেছে, আপনার দেহে দুই থেকে পাঁচ লাখ লোমকুপ বা হেয়ার ফলিকল রয়েছে।

আমাদের ত্বকের রংও নির্ভর করে এ স্তরের ওপর। কারণ এখানে মেলানিন নামের রঞ্জক পদার্থ নিঃসৃত হয়। সূর্যরশ্মি থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয় মেলানিন। যার দেহে যত বেশি মেলানিন, তার গায়ের রং তত গাঢ়। আর মেলানিন কম থাকলে ত্বক হবে হালকা রঙা। আমরা যাকে বলি ফর্সা।

ত্বকের দ্বিতীয় স্তরের নাম ডার্মিস। বাংলায় অন্তঃত্বক। এখানেই থাকে ত্বকের সক্রিয় তন্ত্রগুলো। এসব তন্ত্রের মধ্যে আছে: রক্ত ও লসিকা তন্ত্র, স্নায়ুতন্তু বা নার্ভ ফাইবার, লোমকুপের মূল, ঘাম ও তেলগ্রন্থি। আপনার বহিঃত্বককে অতি শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এরাই। এর পরেই আছে সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু। একে বলা হয় ত্বকের ভিত্তি স্তর। এখানের দেহের ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। আমরা যত চিকনই হই না কেন, সবারই চর্বির স্তর থাকে। দেহে এর দরকারও আছে। কারণ চর্বি আমাদের দেহকে উষ্ণ রাখে। পড়ে গেলে বা ধাক্কা খেলে এরা সুরক্ষা দেয়। কারণ এ সময় চর্বি কাজ করে বিশাল প্যাডের মতো। সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু টেকনিক্যালি ত্বকের অংশ নয়। তবে এটি দেহের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এখানেই শক্তি জমা থাকে, দেহে ইনসুলিনের যোগান দেয় এবং এটিই ত্বককে দেহের নিচের অংশের (বিশেষ করে মাংসপেশি) সঙ্গে সংযুক্ত রাখে।

আক্ষরিক অর্থেই আমাদের দেহ ছিদ্রবহুল। কেউ জানে না, ত্বকের ছিদ্রের সংখ্যা মোট কতটা। বেশির ভাগ হিসেবে দেখা গেছে, আপনার দেহে দুই থেকে পাঁচ লাখ লোমকুপ বা হেয়ার ফলিকল রয়েছে। আর ঘামগ্রন্থির সংখ্যা তার প্রায় দ্বিগুণ। লোমকুপ থেকে চুল গজায় এবং তেলগ্রন্থি (সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড) থেকে তেল নিঃসরণ করে। ঘামের সঙ্গে এই তেল মিশে ত্বকে একটা তেলতেলে স্তর গঠন করে। ফলে ত্বক কোমল থাকে। সেই সঙ্গে বহিরাগত অণুজীবের জন্যও ত্বকে টিকে থাকা কঠিন করে তোলে। মাঝে মাঝে মৃতকোষ আর শুষ্ক তেলের কারণে এই গ্রন্থি বা রন্ধ্র বন্ধ হয়ে পিণ্ডের মতো হয়ে যেতে পারে। একেই বলা হয় ব্ল্যাকহেড বা কালোআঁচিল। আর লোমকুপ যদি অতিরিক্ত সংক্রমিত ও ফোঁড়ার মতো হয়, তাকে বলে ব্রণ। বয়সন্ধিকালীন অনেক ছেলে-মেয়েদের জন্য ব্রণ এক আতঙ্কের নাম। কিশোর-তরুণদের ব্রণ বেশি হওয়ার কারণ, অন্যান্য গ্রন্থির মতো তাদের সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড বা তেলগ্রন্থি অতিমাত্রায় সক্রিয়। এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বারবার ঘটলে তাকে বলে একনি বা ব্রণরোগ। শব্দটির উৎপত্তির মূলে গ্রিক শব্দ একমি (Acme), যার অর্থ চরম উৎকর্ষ বা চূড়া। কিন্তু এ দুটো শব্দ কীভাবে জোড় বাঁধল, তা স্পষ্ট নয়। ইংরেজি শব্দ হিসেবে ব্রিটিশ মেডিকেল ডিকশনারিতে শব্দটি প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৭৪৩ সালে।

ত্বকের বাইরের এই কোষগুলো প্রতি মাসে বদলে সেখানে নতুন মৃতকোষে প্রতিস্থাপিত হয়। আমরা নিজের অজান্তেই প্রায় প্রতিমুর্হর্তে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে মৃতকোষ ঝরিয়ে ফেলছি। সে জায়গা দখল করছে নতুন কোষ। বিজ্ঞানীদের হিসেবে, প্রতি মিনিটে আপনার দেহ থেকে প্রায় ২৫ হাজার মৃত কোষ ঝরে পড়ছে। এভাবে প্রতি কয়েক সপ্তাহে পুরোপুরি নতুন হয়ে যায়। অনেকটা প্রতি মাসে একটা ব্র্যান্ড নিউ ত্বক পাওয়ার মতো ব্যাপার। তবে সমস্যা একটাই, আপনার চাহিদা মতো ডিজাইন বা রঙে তা পাওয়া যায় না। কারণ এর সবই নির্ধারিত হয় আপনার জিন, তথা ডিএনএ-তে সংরক্ষিত বংশগতির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। ত্বকের কোষ খুব দ্রুত নিজেদের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে। দেহের অন্য যেকোনো কোষের চেয়ে দ্রুত। মাত্র একদিনে আপনার অজান্তেই লাখো ত্বকীয় কোষ তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ত্বকের পুরোনো কোষগুলোর কী হয়?

এর উত্তর হলো, এই পুরনো কোষগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। আপনার ঘরে বা বিছানায় যে ধুলোবালি দেখেন, তার বেশির ভাগই আপনি। মানে আপনার ত্বকের মৃত কোষ। কাজেই সময় পেলে নিজেকে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। সঙ্গে বিছানা, বালিশ, কাঁথা-চাদরও। আসলে প্রতি দিন আমাদের দেহ থেকে অগণিত কোষ খসে পড়ছে। গোটা জীবনে একজন মানুষের দেহ থেকে যে পরিমাণ মৃতকোষ ঝরে পড়ে, তা দিয়ে একটা প্রমাণ সাইজের ঠেলাগাড়ি ভরে ফেলা যাবে। বুঝতেই পারছেন, এভাবে আমরা প্রতিদিন ধুলোয় পরিণত হচ্ছি।

দেহের স্থানভেদে ত্বকের পুরুত্ব বিভিন্ন হয়। যেমন ধরুন পায়ের পাতা। এখানের ত্বক সবচেয়ে পুরু। হাতের তালুর ত্বকও প্রায় একই রকম পুরু। তবে সেটা কিন্তু গণ্ডারের চামড়ার মতো মোটা নয়। শুধু পা কেন, দেহের কোথাও অত মোটা ত্বক নেই। কাজেই কেউ যদি আপনার গায়ের চামড়া গণ্ডারের চামড়ার মতো মোটা বলে, তাহলে এক্ষুণি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিবাদ জানান। যাই হোক, পায়ের পাতা পুরু হওয়া আমাদের জন্য সুবিধাজনক। তা না হলে হাঁটা এত সহজ হতো না। হাঁটতে গেলে পায়ের পাতায় গর্ত হয়ে যেত জীর্ণশীর্ণ মোজার মতো।

তাহলে সবচেয়ে পাতলা ত্বক আমাদের দেহের কোথায়? এর উত্তরে নিঃসন্দেহে অনেকেই বলবে ঠোঁটের কথা। কিন্তু তা সত্য নয়। আমাদের চোখের পাতার ত্বক সবচেয়ে পাতলা। এখানে ত্বকের পুরুত্ব এক ইঞ্চির এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তার পেছনেও কারণ আছে। তা যদি না হতো, তাহলে অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হতো। যেমন ধরুন, প্রতি সকালে ঘুম ভেঙে এখন যেমন চট করে চোখ খুলতে পারেন, তখন চোখ খুলতে হতো আঙুল দিয়ে টেনে টেনে। দৃশ্যটা ভাবুন একবার! এখানেই শেষ নয়, প্রতিবার চোখের পলক ফেলতে গেলে ঠকঠক শব্দ হতো। যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছেন?

আমাদের ত্বকের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চিতে হাজারো অণুজীবের আস্তানা। এদের কি গৃহপালিত অণুজীব বলা যায়? এদের মধ্যে আছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু। তার মানে, আপনার চর্তুপাশে সবসময় ঘিরে রয়েছে অণুজীব আর মৃতকোষ। তবে দুচিন্তার কিছু নেই তাদের সবাই ক্ষতিকর নয়। বরং এদের অনেকেই আমাদের দেহের অন্য উপকারী। তবে এদের অনেকে আবার দেহের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। আপনার ঘাম আসলে বেশকিছু অণুজীবের কাছে কোল্ডড্রিংক বা জুসের মতো। সেগুলো পান করে এরা যে রাসায়নিক নিঃসরণ করে সেটাই দেহের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। তাই দেহে ঘাম হলে যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে নেওয়া ভালো। তা হলে কারও সঙ্গে যখন-তখন মোলাকাত করতে যাবেন না।

ত্বকের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কোনো কিছু ঠান্ডা নাকি গরম, ভেজা নাকি শুকনো
মডেল: তানিশা, সাজ কৃতজ্ঞতা: বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সবই তো জানলাম, কিন্তু ত্বকের কাজটা কী? অশরীরীদের কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু দেহে ত্বকের কাজ সম্পর্কে দেহধারী কারও অজানা থাকার কথা নয়। কম-বেশি প্রায় সবাই জানেন। তবু আরও কিছুটা খুলে বলা যাক। মনে রাখবেন, আপনার ত্বক শুধু ক্যারিয়ার ব্যাগ নয়। এর কাজ শুধু আপনার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেওয়া কিংবা ধারণ করা না। ত্বক আসলে তারও বেশি কিছু। যেমন দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রোগ-জীবাণু থেকে দেহকে সুরক্ষা দেওয়া, স্পর্শের অনুভূতি, সুখানুভূতি, উষ্ণতা, ব্যথার অনুভূতি দেওয়া ইত্যাদি।

আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রায় দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজকারবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বা কম হলে দেহে নানান সমস্যা দেখা দেয়। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। এমনকি হতে পারে মৃত্যুও। কাজেই দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ত্বক সে কাজটি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনি যদি পরিশ্রম করেন, তাহলে দেহে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয়। দেহের সেই তাপ কমাতে অটোমেটিক স্প্রিংকলার সিস্টেম চালু করে দেহ। আধুনিক বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাতে সিলিং থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে পানি বেরিয়ে আসে, এটাও কিছুটা ওরকম। আসলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্ক ত্বকের ঘামগ্রন্থিগুলোতে সংকেত পাঠায়। তাতেই টিউবের মতো অতি সরু ঘামনালী থেকে পানি বেরোতে থাকে। ত্বক ভিজে ঠান্ডা হতে থাকে। এই পানিই ঘাম। ঘাম বেরিয়ে আসার জন্য আপনার সারা দেহে এরকম অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। সে অর্থে আমাদের ত্বক ঝাঁঝরি বা চালুনির মতো। তবে খালিচোখে নিজের ছিদ্রান্বেষণ করতে যাবেন না, খুঁজে পাবেন না। কারণ ওগুলো খুব ছোট।

সে কারণে গরমের দিনে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তা পূরণ করতে তাই প্রচুর পানি পান করা দরকার। তা যদি না করেন, তাহলে পানিশূন্যতার আশঙ্কা থাকে। তাতে ক্লান্ত, মাথাব্যথা, এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। গাছ যেমন পানির অভাবে নেতিয়ে পড়ে, সেরকম আরকি। কাজেই যথাসময়ে পানি পান করে সতেজ থাকুন।

তাহলে শীতকালে কী ঘটে? এ ক্ষেত্রে আরেকটা কৌশল খাটায় ত্বক। গায়ে শীত লাগলে আপনার দেহের ছোট ছোট লোমগুলো খাড়া হয়ে যায়। ত্বকের কাছাকাছি জায়গায় পাতলা বাতাস আটকে ফেলে। এভাবে ত্বক নিজেই একটা অদৃশ্য কম্বল বানিয়ে ফেলে শরীর গরম রাখে। এ ঘটনার একটা রোমান্টিক নাম আছে। গুজবাম্প। মানে গায়ে কাঁটা দেওয়া। রোমহষর্কও বলা যায়। (রোম অর্থ লোম ও হর্ষ অর্থ খাড়া হওয়া।) তবে অতিশীতে এ কৌশল খুব বেশি কাজে আসে না। কাজেই শুধু নিজের ত্বকের ওপর আস্থা না রেখে কিছু গরম কাপড়চোপড়ও পরে নিতে ভুলবেন না।

খেয়াল করেছে, ঠান্ডায় শুরুতেই আমাদের হাত-পা জমে যায়। আর তীব্র শীতে তো কথাই নেই। অসাড় হয়ে যায় হাত-পা। শীতপ্রধান দেশে তীব্র শীতে ফ্রস্টবাইটও হতে দেখা যায়। এ সময় হাতে হাত ঘষে অনেকে হাত গরম রাখার চেষ্টা করে। আগুন পোহাতে গেলেও আগে হাত-পা গরম করেন মানুষ। কিন্তু তা কেন ঘটে? আসলে এর পেছনে রয়েছে আমাদের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা মস্তিষ্কের কারসাজি। স্বার্থপরতাও বলা যায়। শীতের সময় কাকে আগে রক্ষা করা দরকার, এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মস্তিষ্ক মনে করে ত্বকে রক্ত চলাচল কম গুরুত্বপূর্ণ, বরং মস্তিষ্কে বেশি রক্ত চলাচল জরুরি। ফলাফল, বুঝতেই পারছেন।

আমাদের বেঁচে বা টিকে থাকার জন্য স্পর্শের অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ। কোনোকিছু স্পর্শের ত্বক থেকে মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। এর মাধ্যমে আমরা সেই বস্তুর বিভিন্ন ধর্ম বুঝতে পারি।

যাহোক, ঘামের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। দেহের সব জায়গার ত্বক ঘামলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ঠোঁট। অনেকে হয়তো ঠোঁটের জন্য ত্বক বা চামড়ার মতো অ-রোমান্টিক শব্দ হয়তো পছন্দ করবেন না। কিন্তু কথায় বলে না, ‘গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক, তা গন্ধ বিলাবেই।’ তাই ঠোঁটকেও চামড়া বললে তার কার্যকারিতা কমে যায় না। জেনে হয়তো খুশি হবেন, ঠোঁট ঘামে না। সে কারণে শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁটের এত যত্নআত্তি করতে হয়। তা না হলে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তবে ঠোঁটা না ঘামার কারণটা দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন না। এর কারণ বিজ্ঞানীরাও এখনও জানেন না৷ মজার ব্যাপার হলো, ঘামের কিন্তু কোনো কটু গন্ধ নেই। মানে কোনো গন্ধই নেই। ঘামের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী আপনার দেহে বসত করা কিছু ব্যকটেরিয়া।

ত্বকের দ্বিতীয় কাজ বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেহকে রক্ষা করা। মূলত দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সম্মুখ সারিতে অবস্থান ত্বকের। এরাই বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রথম ঠেকায়। মানে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সংক্রমণ বা আঘাত বা তাপ, চাপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেহকে বাঁচায় এরা।

আমাদের বেঁচে বা টিকে থাকার জন্য স্পর্শের অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ। কোনোকিছু স্পর্শের ত্বক থেকে মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। এর মাধ্যমে আমরা সেই বস্তুর বিভিন্ন ধর্ম বুঝতে পারি। বুঝতে পারি সেটা আমাদের জন্য নিরাপদ নাকি বিপদজনক। কিংবা সেটা ঠান্ডা নাকি গরম, ভেজা নাকি শুকনো। এরকম বিভিন্ন বিষয় স্পর্শের মাধ্যমে চট করে বুঝে নেওয়া যায়। আর সেজন্য ত্বকে মানে, অন্তঃত্বকে রয়েছে লাখ লাখ রিসেপ্টর বা গ্রাহক কোষ। বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি (যেমন মৃদু স্পর্শ, জোরালো স্পর্শ, চাপ, কম্পন, তাপমাত্রা ও ব্যথা) সনাক্তের ওপর ভিত্তি করে এরা কয়েক ধরণের হতে পারে। এরাই জগতের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে। যেমন আপনার থুতনি বা গালে বসন্তের মৃদুমন্দ হাওয়া এসে খেলা করলে যে অনুভূতি পান, তার জন্য দায়ী মেসিনার কর্পাসল। এর নামকরণ হয়েছে জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ মেসিনারের নামে। কারণ ১৮৫২ সালে তিনিই এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। অবশ্য এ আবিষ্কার নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে৷ তাঁরই সহকর্মী রুডলফ ওয়াগনার এর আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেন। যাহোক, এই রিসেপ্টর যে সবার কাছেই প্রিয়, তাতে কোনো বিতর্ক নেই। তার কারণ, এরা হালকা স্পর্শও শনাক্ত করতে পারে। তা ছাড়া দেহের যেসব জায়গায় অতি সংবেদনশীল, সেখানেই এদের উপস্থিতি। যেমন আঙুলের ডগায়, ঠোঁট, জিহ্বা, ক্লিটোরিস, পুং জননেন্দ্রিয় ইত্যাদি।

গরম প্লেটে বা ভাত রাখলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে আপনার রাফিনি কর্পাসল। কাজেই এরপর গরম কিছুতে হাত দেওয়ার আগে রাফিনির কথা ভাববেন। বেশি গরম যেকোনো কিছু থেকে সবসময় সাবধান থাকা উচিত। সেটা হতে পারে গরম সসপ্যান, আয়রন, চায়ের কেটলি বা গরম চা। ত্বক পুড়ে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা হয়। যেমন ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন বা প্রথম মাত্রার পোড়ার ঘটনাই বেশি দেখা যায়। এতে ত্বক লালচে হয়ে যায়। তার মানে ত্বকের বহিস্তর বা এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবং তা অচিরেই সেরে যাবে। সেকেন্ড ডিগ্রি বার্নের ক্ষয়ক্ষতি হয় আরও গভীরে। এতে ত্বকের বহিস্তর ছাড়াও অন্তস্তর বা ডার্মিসও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে ত্বকে ফোসকা পড়ে। তাতে ক্ষতও সৃষ্টি হতে পারে। থার্ড ডিগ্রি বার্ন সবচেয়ে ভয়াবহ। এতে সাবকিউটেনিয়াস টিস্যুর নিচেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর জন্য সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। আগুনে পুড়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ক্ষতস্থান ২০ মিনিট রাখা উচিত। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতাল বা ক্লিনিকেও যেতে হবে। তাতে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমে।

অনবরত চাপে সাড়া দেয় মার্কেল কোষ এবং কম্পনে সাড়া দেয় প্যাসিনিয়াস কর্পাসল। সে কারণেই ভূমিকম্প বা মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশন টের পান আপনি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্যাসিনিয়ান কর্পাসল ০.০০০০১ মিলিমিটার নড়াচড়াও সনাক্ত করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যা কোন নড়াচড়াই নয়।

তবে আমাদের ত্বকের একটা সীমাবদ্ধতাও আছে। ভেজা ও ঠান্ডা বোঝার জন্য একই ধরনের সেন্সর কাজ করে। সেটি থার্মাল সেন্সর। সে কারণে একটা ভেজা জায়গায় বসলে সহজে বুঝতে পারবেন না, সেটা আসলে ভেজা নাকি ঠান্ডা।

পুরুষের চেয়ে নারীদের স্পর্শের সংবেদনশীলতা বেশি। তার কারণ, তাদের সেন্সর নেটওয়ার্ক বেশি ঘনবদ্ধ। স্পর্শ নিয়ে আরও মজার ব্যাপার হলো, আমাদের মস্তিষ্ক শুধু এটুকুই বলে না যে কোনো কিছুর স্পর্শ-অনুভূতি কেমন, সেই সঙ্গে তা কীভাবে অনুভব করা উচিত, তাও বলে। সে কারণেই বাবা-মা বা প্রিয় মানুষের স্পর্শে দারুণ অনুভূতি হলেও অপরিচিত কারও স্পর্শ গা ঘিনঘিনে লাগে বা ভয়ংকর কোনো অনুভূতি হয়। একই কারণে নিজেকে কাতুকুতু দেওয়াও কঠিন।

আপনার ত্বকের কোনো স্নায়ু ব্যথা পেলে, তা দ্রুত সরাসরি মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। সেই মেসেজটা কেমন? তার খানিকটা অনুমান করেছেন লেখক অ্যাডামস কে। মেসেজটা এরকম:

প্রিয় মস্তিষ্ক,

শুভেচ্ছা।

মনে হচ্ছে, আমাদের ডান পা এই মুহূর্তে একটা লেগোর টুকরোর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। তুমি ওখান থেকে পা-টা জরুরি ভিত্তিতে তুলতে চাও এবং মুখকে বেশ জোরে চিৎকার করতে বলবে। তোমার সুবিধামতো সময়ে কাজটা করলেই হবে, তবে আমার মনে হয় কাজটা দ্রুত করাই উত্তম।

অনেক ভালোবাসাসহ

তোমার একান্ত বাধ্যানুগত ত্বক

আমাদের ত্বক মাঝে মাঝেই শুকিয়ে যায়। তবে ত্বকের কোথাও শুষ্ক হয়ে চুলকানির মতো হলে তাকে বলা হয় একজিমা। তবে এটি ছোঁয়াচে নয়।

আপনি যদি নরম পেঁজা তুলো দিয়ে বানানো কোনো ঘরে জীবনভর না কাটান, যদি নরম পালকের জামাকাপড়, টুপি বা হ্যাট না পড়ে থাকেন, তাহলে  আপনার দেহে নানারকম কাটাকুটি, দাগ, ফোস্কা, ফুসকুড়ি, ও ক্ষত তৈরি হবেই হবে। এবার এসবের কয়েকটির কার্যকারণ জানা যাক। যেমন ধরা যাক ফোসকার কথা। এ সম্পর্কে নিশ্চয়ই কারও অজানা নেই। নতুন জুতা বা স্যান্ডেল পায়ে দিলে নিজের পায়ের কিছু অংশে ছোট্ট বালিশের মতো ফুলে ওঠে। আর তার ভেতরে জমে পানির মতো কিছু পদার্থ। নতুন জুতার প্রতি এ যেনো পায়ের বিদ্রোহ। রাগে ফুলে বালিশ হয়ে থাকে! এর আসল কারণ হল, জুতার সঙ্গে বহিঃত্বক বা এপিডার্মিসের অনবরত ঘষা খাওয়ার কারণে ডার্মিস বা অন্তঃত্বক থেকে আলাদা হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সেখানে একটা শূন্যস্থানও তৈরি হয়। বিভিন্ন কোষ থেকে কিছু ফ্লুইড, বিশেষ করে প্লাজমা লিক হয়ে এ জায়গায় জমা হয়। এটিই দেখতে পানির মতো মনে হয়। হাতে পায়ে গায়ে ফোসকা পড়লে অনেকেই সেটা গেলে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটা না করাই ভালো। তার কারণ ফোসকার ভেতরের ফ্লুইডের কিছু কার্যকারিতা আছে, যা দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত মনে রাখতে হবে ত্বকের অন্যতম কাজ বাইরের রোগ জীবাণু থেকে দেহকে রক্ষা করা। কাজেই বাবল র্যাপের মতো ফোসকা যদি অকালে ফাটিয়ে ফ্রুইড বের করে দেন, তাহলে ক্ষতিকর রোগজীবাণু খুব সহজেই দেহে ঢুকে যাবে। তাতে ভয়াবহ কোনো সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। কাজেই ফোসকা নিয়ে অযথা ঘাটাঘাটি না করে তাকে নিজের মতো থাকতে দিন। কদিনের মধ্যে নিজেই সেটা ঠিক হয়ে অদৃশ্য হয়ে  যাবে।

দেহের কোথায় বেমক্কা ধাক্কা খেলে ত্বকে কালশিটে দেখা দিতে পারে। এর মানে আপনার ত্বকের রক্ত নালীগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছু রক্তও লিক হয়ে ত্বকের কাছে জমা হয়েছে। ত্বক যেহেতু কেটে যায়নি, তাই ওই রক্তগুলো বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সে কারণে তা ত্বকের নিচে ছড়িয়ে আছে। এটাই আসলে কালশিটে।

সময়ের সঙ্গে কালশিটের রংও পাল্টায়। বলতে পারেন রাস্তার সিগন্যালে ট্রাফিক লাইটের মতো। শুরুতে এর রং থাকে লাল। তার কারণ ওটাই রক্তের রং। একদিন বা এরকম সময়ের মধ্যে এর রং হয় নীলচে-কালো-বেগুনি। অদ্ভুত রং, তাই না? এর কারণ হল ওই রক্তের অক্সিজেন তখন পুরোটাই খরচ হয়ে যায় দেহকোষের কোনো কাজে। এরপর রক্তটুকু দ্রবীভূত হয়ে যায়। ফলে কালশিটের দাগ তখন সবুজ রঙের দেখা যায়। এক সপ্তাহ বা এ সময়ের মধ্যে কালশিটে চূড়ান্ত রঙে এসে পৌঁছে। মানে হলদে রং। তারপর তা মিলিয়ে যায়। ত্বকের রক্ত নালিকাগুলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। তাই বয়স্কদের ত্বকে কালশিটে বেশি দেখা যায়।

আমাদের ত্বক মাঝে মাঝেই শুকিয়ে যায়। তবে ত্বকের কোথাও শুষ্ক হয়ে চুলকানির মতো হলে তাকে বলা হয় একজিমা। তবে এটি ছোঁয়াচে নয়। চুলকানির কথা যখন এলোই, তখন আরেকটি কথা বলে ফেলি। অনেক সময় দেখা যায়, পাশে একজনকে চুলকাতে দেখলে আমাদের নিজেদের ত্বক চুলকাতে ইচ্ছা করে। মানে ত্বকের কোথাও না কোথাও তখন চুলকাতে থাকে। এমনকি শুধু ‘চুলকানি’ শব্দটা দেখলেও নাকি অনেকের ত্বক চুলকায়। কিন্তু এরকম কেন হয়? বিজ্ঞানীরা বলেন, এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক আপনাকে সর্তক করতে চায়। এটা আসলে অনুমান। চুলকানির প্রকৃত কারণ আসলে বিজ্ঞানীরাও এখনও সঠিকভাবে জানেন না। কারণ চুলকানোর জন্য কাজ করে এমন কোনো একক জায়গা মস্তিষ্কে নেই।

ত্বক নিয়ে আপাতত এটুকুই। আপনার ত্বক ভালো থাকুক। ত্বকের যত্ন নিন।

সূত্র:

কে’স অ্যানাটমি/ অ্যাডাম কে

দ্য বডি/বিল ব্রাইসন

উইকিপিডিয়া