ঘুম থেকে ওঠার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি কোনটি

ঘুমের ধরন যেমনই হোক, কিছু অভ্যাস মেনে চললে স্বাস্থ্যকরভাবে দিন শুরু করা সম্ভব

রাতে ভালো ঘুমের জন্য কী করতে হবে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সকালে ঠিক কীভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠলে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর হবে, তা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। এই লেখায় আমরা জানব, সকালে কীভাবে ঘুম থেকে উঠতে হবে। 

ঘুমের ধরন যেমনই হোক, কিছু অভ্যাস মেনে চললে স্বাস্থ্যকরভাবে দিন শুরু করা সম্ভব। কিছু গবেষক বিষয়টি নিয়ে মজা করে বলেছেন, ‘সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটা কুকুরছানা পোষা।’ এই কথার পেছনে কিন্তু বিজ্ঞান আছে। স্বাস্থ্যকরভাবে ঘুম থেকে ওঠার রুটিনের মূল নিয়ম দুটি। এক প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা। দুই শরীরে সকালের রোদ লাগানো। এই দুটো কাজ তখনই করা সম্ভব, যখন কেউ কুকুর নিয়ে সকালে হাঁটতে বের হবে।

বিশেষজ্ঞরা এই দুই অভ্যাসের গুরুত্ব নিয়ে একমত। কুকুর পোষা হোক বা না হোক, সকাল শুরু করার জন্য একই সময় ঘুম থেকে জেগে উঠে হাঁটতে যাওয়া ভালো। 

বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু পরামর্শ দেন। যেগুলো মানলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকরভাবে ঘুম থেকে ওঠা সম্ভব হবে। 

ঘুমকে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে 

অনেকেই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠে না। কাজ বা প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুম থেকে ওঠে। যেমন কারও যদি আজ ক্লাস থাকে সকাল এগারোটায়, তাহলে সে সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠে। আবার আগামীকাল যদি ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টায়। তখন আবার সে সাতটায় ঘুম থেকে ওঠে। এই পদ্ধতি শরীরের জন্য ভালো না। প্রতিদিন একই সময়ে বিছানা ছেড়ে ওঠা উচিত। 

হঠাৎ একদিন খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে দিনের বেলায় ঝিমুনি বা হজমের সমস্যা হতে পারে
ফাইল ছবি

আমাদের শরীর একটি জৈব ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম মেনে চলে। এই রিদম শুধু ঘুমানো বা জেগে ওঠার চক্র না, এর সঙ্গে মেটাবলিজম, ক্ষুধা, হরমোন, মেজাজ এবং মনোযোগের সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠলে শরীরের জৈব ঘড়িটি মসৃণভাবে কাজ করে।

ঘুম থেকে ওঠার আসলে কোনো আদর্শ সময় নেই। সকাল আটটায় ঘুম থেকে প্রতিদিন উঠে কেউ দাবি করতে পারবে না, আমি সেরা সময়ে ঘুম থেকে উঠি। প্রতি রাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম হয়েছে কিনা, সেটাই আসল কথা। 

হঠাৎ একদিন খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে দিনের বেলায় ঝিমুনি বা হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা একে বলেন ‘সোশ্যাল জেট ল্যাগ’। দীর্ঘদিন অনিয়মিত ঘুমের চক্র থাকলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ছুটির দিনে অনেকেই দেরি করে ঘুমায়। এমনটা করা একদমই ঠিক না। 

দিনে ক্লান্ত লাগলে অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার নিয়মটা মানা উচিত। 

সকালের রোদ গায়ে লাগাতে হবে

ঘুম ভাঙলে অনেকেই কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে। পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করে রাখে। আসলে নিয়মটা হলো, সকালে ঘুম ভাঙলেই জানালার পর্দা সরিয়ে দিতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব বাইরে যেতে হবে। সম্ভব হলে এক ঘণ্টার মধ্যে। সকালের সূর্যের আলো যেন শরীরে লাগে, শরীর যেন জানতে পারে, দিন শুরু হয়েছে।

সকালের আলো রাতের ঘুম ভালো করতে পারে
ফাইল ছবি

সকালে আলো চোখে পড়লে মস্তিষ্কে একটি সংকেত যায়। এই সংকেত পেলে শরীর কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। এই হরমোন আমাদেরকে সজাগ করে তোলে। মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সকালের আলো রাতের ঘুম ভালো করতে পারে। সূর্যের আলো চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে একটি অদৃশ্য স্টপওয়াচ চালু হয়। এই ঘড়ি দিয়ে ঠিক হয়, রাতে কখন ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন ক্ষরণ হবে। এমনকি মেঘলা দিনেও সকালের আলো শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে। যদি কারও ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকে, যখন সূর্য ওঠেনি, তখন শক্তিশালী কৃত্রিম আলো ব্যবহার করেও এই চক্র শুরু করা যায়। 

ভালোভাবে দিন শুরু করার জন্য ১৫ মিনিট সকালের রোদে থাকাই যথেষ্ট। তবে এক ঘণ্টা আলোতে থাকা সবচেয়ে ভালো।

স্নুজ বাটন বারবার চাপলে যা হবে

অ্যালার্ম বাজার পর অনেকেই স্নুজ বাটন চেপে আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে চায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দিন শুরু করার সেরা উপায় নয়।

যখন উঠতেই হবে, তখন অ্যালার্ম ঠিক করলে ঘুম ভালো হবে
ছবি: পেক্সেলস

যদি অ্যালার্ম বাজার পরেও বারবার স্নুজ করার ইচ্ছা জাগে, তাহলে বুঝতে হবে আরও ঘুমের প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যদি হাতে অতিরিক্ত সময় থাকে, তবে অ্যালার্ম ঠিক করতে হবে একদম শেষ সময়ের জন্য। যখন উঠতেই হবে, তখন অ্যালার্ম ঠিক করলে ঘুম ভালো হবে। সময়ের আগে অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। সঠিক সময়ে অ্যালার্ম দিলে শরীর সঠিক পরিমাণ বিশ্রাম পাবে। অল্প অল্প ঘুমের চেয়ে একনাগাড়ে ঘুম অবশ্যই কার্যকরী।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, কিশোর আলো

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস