মেঘের রূপরহস্য

মেঘের আকৃতি নির্ভর করে বাতাসের তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং গতি প্রবাহের ওপর। তাপমাত্রা ও ঘনত্বের পার্থক্য পানির কণা ভর্তি বাতাসকে চারপাশের বাতাসের সঙ্গে মিশে যেতে বাধা দেয়। ফলে তৈরি হয় মেঘের স্বতন্ত্র ও স্পষ্ট আকৃতি

কখনো আকাশে হাতি-ঘোড়া দেখেছেন? সত্যিকারের হাতি-ঘোড়া নয়, হাতি-ঘোড়ার মতো দেখতে মেঘের কথা বলছি। বলা হয়, আপনি যা কল্পনা করবেন, আকাশের মেঘ তেমনই হয়ে আপনার দৃষ্টিতে ধরা দেবে। কথাটা কতখানি সত্য, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। কিন্তু আমরা সেদিকে যাবো না। আকাশে নানা রঙের, নানা ঢঙের নানা আকার-আকৃতির মেঘ আমরা প্রতিদিনই দেখি। মাঝে মাঝে মেঘগুলোর আকৃতি এমন হয় যে দেখে মনে হয়, পরিচিত কোনো জন্তু বা জিনিসের প্রতিচ্ছবি ভাসছে আকাশে। বিশেষ করে শরতের মেঘে ব্যাপারটা বেশ দেখা যায়। মেঘের এমন নানা রূপের পেছনে কারণ আছে।

এক অর্থে বলা যায়, আমরা ডুবে আছি বায়ুমণ্ডলের মহাসমুদ্রে। আর বায়ুমণ্ডলে অন্যান্য গ্যাসের সঙ্গে আছে জলীয় বাষ্প। বায়ুমণ্ডলে এই জলীয় বাষ্প থাকার বিষয়টিকে বলে আর্দ্রতা। কতখানি জলীয়বাষ্প আছে, তা মেপে বাতাসের আর্দ্রতা নির্ণয় করা যায়। যাহোক, এই জলীয়বাষ্প যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে ওঠে, তখন তাপ হারিয়ে এসব বাষ্প পানির বা বরফের কণায় রূপান্তরিত হয়। ঠান্ডা জলীয়বাষ্পের কণাগুলো একত্রিত হয়ে সূর্যের আলোর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তৈরি হয় দৃশ্যমান মেঘ।

দুটি মেঘের আকৃতি সাধারণত একরকম হয় না। তারপরও মেঘের আকৃতিকে বেশকিছু গ্রুপে ফেলা যায়। কিউমুলাস ধরনের মেঘ দেখতে হয় ফোলা ফোলা, তুলোর মতো

মেঘের আকৃতি নির্ভর করে বাতাসের তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং গতি প্রবাহের ওপর। তাপমাত্রা ও ঘনত্বের পার্থক্য পানির কণা ভর্তি বাতাসকে চারপাশের বাতাসের সঙ্গে মিশে যেতে বাধা দেয়। ফলে তৈরি হয় মেঘের স্বতন্ত্র ও স্পষ্ট আকৃতি। কিনারাগুলো কিছুটা তীক্ষ্ম দেখায়। বাতাসের প্রবাহ এই আকৃতিকে আবার নানাভাবে বদলে দেয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। আর বাতাসের গতি যেহেতু খুবই এলোমেলো ধরনের হয়, তাই মেঘের আকৃতিও হয় নানা রকমের।

দুটি মেঘের আকৃতি সাধারণত একরকম হয় না। তারপরও মেঘের আকৃতিকে বেশকিছু গ্রুপে ফেলা যায়। কিউমুলাস ধরনের মেঘ দেখতে হয় ফোলা ফোলা, তুলোর মতো। বায়ুমণ্ডলের নিচের অংশে এই মেঘ তৈরি হয়। জলীয় বাষ্প যখন ঘন হয়ে পানিতে পরিণত হয়, তখন কিছুটা তাপ হারিয়ে যায়। এ সময় যদি বায়ুমণ্ডলের অবস্থা অস্থিতিশীল থাকে, তাহলে এই তাপ কিউমুলাস মেঘকে এলোমেলো আকার দিতে পারে। কিউমুলাস মেঘ তখন পরিণত হয় কিউমুলাস নিম্বাস মেঘে। কিউমুলাস নিম্বাসকে আমরা বজ্রমেঘ বলতে পারি। ঘন কালো গুম্বুজের মতো বাতাসের দ্রুত প্রবাহের কারণে তৈরি হয়। ঝরে বৃষ্টি হয়ে, সঙ্গে ঘটে বজ্রপাত।

অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলের বড় একটা অঞ্চল জুড়ে একইসঙ্গে বায়ু ওপরে উঠলে তৈরি হয় স্ট্রাটাস ক্লাউড বা স্ট্রাটাস মেঘ। আর সাইরাস হলো বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে তৈরি হওয়া বরফকণার মেঘ। এই বরফকণাগুলো যখন পানিতে পরিণত হয়, তখন বায়ুস্রোতের ধাক্কায় ছড়িয়ে পড়ে। আকাশের মেঘ দেখতে তখন হয়ে যায় সমুদ্রের বালুকাবেলার মতো। দেখতে অনেকটা ছাড়া ছাড়া কাশফুলের মতো হয়।

মেঘের নানা ধরন নিয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বিজ্ঞানচিন্তায় প্রকাশিত মেঘ দেখে যায় চেনা লেখাটিতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

আরও পড়ুন