সামুদ্রিক প্রাণী কি মিঠাপানিতে বাঁচতে পারে

বেশির ভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মিঠাপানি হলো মৃত্যুফাঁদছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর বেশির ভাগ ডুবে আছে পানিতে। ভূপৃষ্ঠের এসব জলাধারের প্রায় ৯৭ ভাগ পানিই লোনা। আমরা সরাসরি লোনাপানি খেতে পারি না। তবে পৃথিবীর বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্রের বড় একটা অংশ টিকে আছে এর ওপর। হাজারও প্রাণীর আবাসস্থল সমুদ্র বা লোনাপানি। নদী বা খাল-বিলের স্বাদু পানিতেও থাকে মাছসহ বিভিন্ন জলচর প্রাণী। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, একই প্রাণী সাধারণত দুই ধরনের পানিতে থাকে না। অনেক সময় নদী থেকে মাছেরা সমুদ্রে বেড়াতে যায়। তবে সামুদ্রিক প্রাণীরা মিঠাপানিতে তেমন একটা আসে না। কারণ, বেশির ভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য মিঠাপানি হলো মৃত্যুফাঁদ। এমনটা হওয়ার পেছনে আছে রসায়নের ছোট্ট কারিকুরি। দুটি ভিন্ন ঘনত্বের তরলকে অর্ধভেদ্য পর্দা দিয়ে আলাদা করে রাখা হলে ঘনত্ব সমান না হওয়া পর্যন্ত অণু চলাচল করতে থাকে। কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে বেশি ঘনত্বের দিকে যায় তরলের অণু। একে বলা হয় অভিস্রবণ বা অসমোসিস।

স্বাভাবিকভাবে সামুদ্রিক প্রাণীদের দেহে লবণ-পানির ঘনত্ব বেশি থাকে। তার ওপর মিঠাপানির ঘনত্ব লোনাপানির চেয়ে অনেক কম। সামুদ্রিক প্রাণী মিঠাপানিতে চলে এলে ফুলকা দিয়ে বেশি করে পানি টেনে নেওয়া শুরু করে। দেহকোষ দিয়েও ঢুকতে থাকে কম ঘনত্বের মিঠাপানি। ফলে, শরীরে লবণ ও পানির ভারসাম্য নষ্ট হতে বেশি সময় লাগে না। কোষ ফুলে ওঠে অনেক সময়। একটা সময় শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধা পায়। মরে যায়।

তবে স্বাদুপানির মাছের বেলায় ঘটে উল্টো ঘটনা। এরা সমুদ্রে গেলে বেশ দ্রুত লবণ-পানিতে অভ্যস্ত হতে পারে। মুত্রের মাধ্যমে বের করে দিতে পারে প্রচুর পানি। শরীরে লবণ-পানির ঘনত্ব খুব একটা বাড়ে না। স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকতে পারে।

তা ছাড়া আবার অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী আছে, যারা লবণ-মিঠাপানির পরিবর্তন সইয়ে নিতে পারে। যেমন আমাদের ইলিশ, বাইম কিংবা স্যামন মাছ। নদী ও সমুদ্র—দুই জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারে এগুলো। সে জন্য অবশ্য প্রচুর শক্তি খরচ করতে হয় এদের।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞাচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস